কাপড় রাঙ্গাতে; দূষণ কমাবে প্রাকৃতিক রঙ !

ফারিহা দিলশাদ

যেকোনো কাপড়ের মূল সৌন্দর্য তার রঙ। আর বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে তুলতে বাজারে রয়েছে হাজারো প্রকারের রঙ। প্রাথমিকভাবে কাপড় রঙ করার উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে প্রকৃতির প্রধান উৎস, প্রাণ থেকে অর্থাৎ প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে। ১৮ শতাব্দী থেকে মানুষ রঙের একটি বৃহত্তর পরিসীমা অর্জন করার লক্ষ্যে কৃত্রিম রঙ তৈরি শুরু করেছে। ফলে সাধারণ ব্যবহারের পাশাপাশি ধোয়ার কারণেও রঙ্গিন কাপড়ের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু এইসব কৃত্রিম রং ব্যবহার করার কারণে পরিবেশ, বিশেষ করে নদীর পানি দূষণ বেড়েই চলেছে। কাপড় রঙ করার প্রক্রিয়া চলাকালীন ৯০ শতাংশ (প্রায়) রঙ তন্তু দিয়ে শোষিত হয়, বাকি ১০ শতাংশ (প্রায়) বর্জ্য পানি হিসেবে নির্গত হয়। এছাড়া যেসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহৃত হয়, তা ওই নির্গত বর্জ্য পানিতেই মিশে যায়। এই প্রক্রিয়ায় রঙ এবং সহযোগি রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে নানা ধরনের বিক্রিয়া ঘটে। এ ক্ষেত্রে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত যৌগ উত্পন্ন হয়ে যায়, যা বর্জ্যের মধ্যে পাওয়া যায়। তৈরি হয় উচ্চ বিওডি, সিওডি ইত্যাদি। দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। সংশোধন ছাড়া এই বর্জ্য সরাসরি নদী বা খালে ফেলা হয়, ফলে নদী/খালের পানি হয় বিষাক্ত এবং ক্ষেত্র বিশেষে অনুপযোগী, যার বাস্তব নমুনা হিসেবে আমরা দেখতে পাই তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ইত্যাদি নদীর পানি।

hj

বিভিন্ন ধরনের তন্তুর রঙ্গিন বর্জ্য পানি  পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে,  নাইলনের ক্ষেত্রে বিওডি সবচেয়ে কম। এছাড়া,  অ্যাক্রিলিক, উল, অ্যাসিটেট, রেয়ন, কটনের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বিওডির পরিমাণ বাড়তে থাকে। পলিস্টারের ক্ষেত্রে মোটামুটি সর্বোচ্চ বিওডি পাওয়া যায়। মোট কঠিন (দ্রবীভুত) পদার্থ (টিডিএস), এটি বর্জ্য পানির একটি প্যারামিটার। নাইলনের রঙ করার ক্ষেত্রে বর্জ্য পানিতে টিডিএস পাওয়া যায় ৬০০ পিপিএম, কটনের ক্ষেত্রে ১০-৮০০ পিপিএম এবং উলের ক্ষেত্রে ২০০০-১০,০০০ পিপিএম।

পানিদূষণ রোধে উদ্ভিজ্জ রঙ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এগুলো প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ বিভিন্ন রঙের আভা দিতে পারে। এরকম একটি উদ্ভিদ হল ‘পিঙ্ক প্ল্যান্ট’। কাপড়ে গোলাপি রঙ করতে এটি ব্যবহার করা যায়।

klkl

পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ডাই প্ল্যান্ট হল Gunneratinctoria বা জায়ান্ট রুবারব।এটা ব্রাজিল, চিলি,এবং আর্জেন্টিনার একটি স্থানীয় উদ্ভিদ। এর পাতা ন্যাচারাল ডাইং এর ক্ষেত্রে মরডেণ্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

fgfgfg

সম্পূর্ণভাবে জন্মানো উদ্ভিদটির স্টেম বেস এর দিকে তাকালে গোলাপি আঁশ এর মত দেখা যায়। আয়ারল্যান্ড এর কেরি কাউন্টির বিভিন্ন জায়গায় এই উদ্ভিদের চাষ হয়।

fgfgr
ব্লাডরুট

 

ব্লাডরুট (Sanguinariacanadensis) লাল রং উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সবুজ রং তৈরি করা হয়েছে শ্যাওলা থেকে এবং হলুদ রং শৈবাল থেকে।

নেটিভ আমেরিকানদের দ্বারা উৎপাদিত এই রং মরডেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।

Mountain alder(Alnusincana ) একটি ছোট তীরবর্তী গাছ যা স্থানীয় উপজাতিরা বাদামী, লাল বাদামী, বা কমলা-লাল রং তৈরিতে ব্যাবহার করে থাকে।

qwe

হলুদ রং তৈরিতে এর ভিতরের বাকল এবং বাইরের বাকল উজ্জ্বল লাল রং তৈরিতে লাগে। কিছু কিছু উপজাতি এই উদ্ভিদের সাথে কালো মাটি বা শান ধুলো মিশ্রিত করে কালো রং বানায়।

এরকম আরও কয়েক হাজার প্রজাতির বোটানিক্যাল ডাইং প্ল্যান্ট রয়েছে যার মধ্যে Butternut (Juglanscinerea), Rubus, Canaigre dock (Rumexhymenosepalus), Stinging nettle (Urticadioica) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

উদ্ভিজ্জ রঙ ব্যবহার এর সুবিধাসমুহঃ

১. স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করলে সব প্রাকৃতিক রঙ শতভাগ নিরাপদ নয় তবে তারা তাদের সিনথেটিক অংশ থেকে কম বিষাক্ত হয়ে থাকে। টারমেরিক, এনাট্টো, স্যাফ্রন ইত্যাদি খাবারের রং হিসেবে অনুমোদিত। অনেক প্রাকৃতিক রঙের ফার্মাকোলজিকাল প্রভাব রয়েছে এবং এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২.এই রঙ গুলো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত করা হয়।
৩. এরা বায়োডিগ্রাড্যাবল হওয়ায় সহজেই নিষ্পত্তি ঘটানো যায় এবং পানি দূষণ কমে।
৪.খাঁটি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়।
৫. সাশ্রয়ী।
৬. বিভিন্ন ধরনের মরডেন্ট ব্যবহার করে নানান রং পাওয়া সম্ভব।

লেখক,
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics