অসাধু ব্যবসায়ীক চক্রেই ভেজাল ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা সাধারণ

নজরুল ইসলাম তোফা

ফল মানুষের অনেক প্রিয় খাবার। ফল জাতীয় এই খাদ্য মানুষের ১ম মৌলিক চাহিদা। এই খাদ্যের চাহিদা সকল মানুষের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আম, জাম, কলা, লিচু, পেয়ারা,পেঁপে, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, কাঁঠাল ও জামরুল থেকে শুরু করে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি সহ দেশ বিদেশের বহু জানা অজানা ফল মানুষের প্রিয় খাদ্য। এক কথায় বলতে পারি যে, মানব জাতি প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া এমন এ ফল গুলোকে পছন্দ কিংবা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না এমনটাই বিরল।

এই খাদ্য বিশেষত গ্রামাঞ্চলেই অনেক বেশি উৎপাদন হয় এবং তা শহরে পৌঁছে একেবারে নামি দামি খাবার হয়ে যায়। তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই সকল ফলের গুনাগুনের মাত্রা কেমন তা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পেরে অনেকটাই যেন বুঝতে শিখেছে। তাঁরাও পরিবার পরিজন নিয়ে খুব উৎসব মুখর ভাবেই খেয়ে থাকেন। গ্রামের মানুষ উৎপাদিত এমন এ ফলগুলো বাজার জাত করেই অনেক অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু বলতেই হচ্ছে যে, বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন ফলগুলো ক্রয় করে শহরে এনেই ভেজালে পরিনত করছে। এই দেশের জনগণ প্রতিদিন যেসব অন্যান্য খাবার খেয়ে থাকে তাতেও বলা যায় সম্পূর্ণরূপেই ভেজালযুক্ত কিংবা নিরাপদ খাবার নয়। তাই ফল সহ বহু খাদ্যেই এখন ভেজাল মেশানো প্রক্রিয়া অনেকটাই ব্যতিক্রম ধারায় বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে।

বিশেষ করে গ্রামের উৎপাদিত হরেক রকমের ফল শহরে এনেই দোকানে দোকানে সেই ফল গুলোতে কার্বাইড, হাইড্রোজ, ইথোপেনসহ বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক বিষের সংমিশ্রণেই অসাধু ব্যবসায়িকরা ঘটায় ভেজাল। যা কিনা ক্ষতিকারক এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে জন্য হয়। তাই বলতেই হয় যে, এই সব ফল খেয়েই মানুষের কিডনি ফেইলর, হার্টঅ্যাটাক, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রকারের জটিল রোগ দেখা দেওয়াটাই যেন স্বাভাবিক।

চিকিৎসক কিংবা কৃষিবিদ এর পরামর্শ অনুযায়ীই বলা যায় যে, ফল ব্যবসায়ীরা সাধারণত যে গুলো নিম্ন মানের কার্বাইড ব্যবহার করে তা থেকেই প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক তৈরি হয়। এমন আর্সেনিক বা সেঁকো বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং সেই বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এমন নানা রাসায়নিক পদার্থযুক্ত বিষময় ফল ধীরে ধীরেই মানুষের লিভার এবং কিডনি অকেজো করে। হার্টকেও অনেকাংশে দুর্বল করে দেয়, ব্রেনকে ন্যুব্জ এবং স্মৃতি শক্তিটাও কমে যায়। অস্বাভাবিক ভাবেই অ্যাসিডিটি বাড়ায়।  পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট এর ফল পরীক্ষার তথ্যানুযায়ীই বলতে হয় যে, এ দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল এবং দেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই চিহ্নিত হয়েছে। সারা দেশ থেকেই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্য দ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাছাড়াও ফল বা খাদ্য পরীক্ষায় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁর তথ্যের আলোকেই বলতে পারি, রাজধানী সিটি শহর গুলোতেই বাজার জাত খাদ্য পণ্যের অন্তত ৭৯ ভাগ ভেজাল।

এমন সব ফলমূল কিংবা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য মৌসুমের আগেই বিক্রি ও তাকে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানোটাই মৌলিক উদ্দেশ্য। না মিশ্রণ ঘটালে যেন তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়, এমন ভাবেই বুঝাতে চেষ্টা করলেন অসাধু ব্যবসায়িকরা।

ভেজাল খাদ্য খেয়ে এদেশের মানুষ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু অথবা গর্ভবতী মাদের ভেজাল ফল বা অন্য খাদ্যে তাদের বিষক্রিয়া হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা বিকলাঙ্গ হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল জনিত বেশ কিছু রোগই হয়ে থাকে। যেমন: আমাশয়, রক্তচাপ,অ্যাপেনডিক্স, হূদরোগ এবং বিশেষ করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে উদ্বেগ জনক ভাবেই মৃত্যু হার যেন বেড়েই চলছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামতে বলতেই হয়, খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেই উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা বাজারের ভেজাল ফল। যা মানুষকে অকাল মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হচ্ছে।ভেজালের বেপরোয়া দাপটের মধ্যেই আসল পণ্য খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর। জীবন যাপনে এমন এ নোংরা পরিবেশে ভেজাল কিংবা নকলের সীমাহীন দৌরাত্ম্যকে কোনো ভাবেই রোধ করা সম্ভব হয় না। অপরিপক্ব গাছের ফল অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে তাকে কাঁচা থেকে পাকাতেই ক্যালসিয়াম কার্বাইড কিংবা তাকে উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তর করবার জন্যই তাতে অধিক পরিমাণ ক্ষার জাতীয় এক প্রকারের টেক্সটাইল রং সংমিশ্রণ করছে অবাধে।

জানা যায়, ফল গাছে থাকার পর্যায় থেকেই বাজারে বিক্রয়ের মুহূর্ত পর্যন্তই এক একটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত এই গ্যাস জাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন জাতীয় ইথরিল অতি মাত্রায় স্প্রে করে। সুতরাং বলা যায় যে, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই গাছের ফল গুলো রীতি মতো বিষে পরিণত হয়। অসাধু এমন ব্যবসায়ীরাই বলে থাকে কিংবা দাবি করে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়।

কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই এ রোগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী ডায়াবেটিস, আর্সেনিক, আলসার, অপুষ্টি, চর্ম ও কুষ্ঠরোগেও যেন মৃত্যু হার অনেকাংশে ঊর্ধ্বমুখী। শুধুমাত্র ভেজাল খাদ্যগ্রহণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যেই প্রতি বছর প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ভাবেই শারীরিকভাবে অযোগ্য বা কর্মহীনতায় জীবন যাপন করছে।

সারা বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দিয়ে যদি কিছু আলোচনায় আসা যায় তা হলে বলতেই হয় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দেরই আগে আমেরিকাতেও ভেজাল পণ্য বিপণনেই ছিল সীমাহীন প্রতারণা, পণ্যে ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ ভেজাল, পণ্য সম্পর্কে দেওয়া হতো না বিশদ তথ্য, গড়ে উঠে ছিল একচেটিয়া ভেজাল কারবারি পরিবেশ আবার ক্রেতারা ছিল ব্যবসায়ীদের হাতের পুতুল। এ সকল অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে ক্রেতা হয়ে উঠে ছিল সোচ্চার এবং গড়েও তোলেও ছিল চরম আন্দোলন। তাই তো প্রতারিত হওয়া ভোক্তা কিংবা ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণেই উদ্ভব হয়েছিল ভোক্তাবাদ বা কনজুমারিজম।

সুতরাং ক্রেতা সাধারণের সুফল পেতে বা অধিকার সংরক্ষণে জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছিল খাদ্যেভেজাল বিরোধী ৭টি মুলনীতি। সেই গুলো এখানে উল্লেখ না করেই বলি, এমন সঠিক প্রস্তাবের জন্যই অনেক দেশ বিদেশের কর্মকর্তারা সমর্থন করেছিল। ভেজাল রোধের এমন কর্মসূচি আন্তর্জাতিক ভাবেই উঠে এসেছে । সুতরাং বিদেশীদের কাছ থেকে এই দেশের ব্যবসায়ীক চক্র ফলমূল বা খাদ্যদ্রব্যে মতো বিভিন্ন খাবারে ভেজাল দেয়ার কুশিক্ষা রপ্ত করেছে বৈকি। এ দেশের মানুষ আগে খারাপ কিছু করাটাই আগে শিখে, হয় তো বা তারই আলোকে এদেশে দিনে দিনে ভেজালের মাত্রা বাড়াতেই থাকছে। আর একটু বলতে হচ্ছে তাহলো, বিদেশিরা এদেশের মানুষকে পরিকল্পিতভাবেই যেন অসুস্থ রাখতে চায়। কারণ, তাদের উৎপাদিত ঔষধ বিক্রয়ের প্লাটফর্ম হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অসাধুু ব্যবসায়ীরা তাদের সে চতুর ষড় যন্ত্রের বেড়া জালে অসংখ্য মানুষকেই মরন পথের যাত্রী বানিয়ে ছাড়ছে।

বর্তমানে ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে, কখনও সখনও দেখা যায় যে, কাউকে না কাউকেই হাতে নাতেই ধরছে। তারা মোটা অঙ্কের ঘুষ ও পেশী শক্তি সহ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যেন পারও পেয়ে যাচ্ছে। আসলেই নিরাপদ খাদ্য আইন সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার পাশাপাশি বলতেই হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা এবং জনগণ সচেতন এবং সোচ্চার না হওয়ার জন্যেই যেন ফল বা খাদ্যের ভেজাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এই অবস্থার যদি ইতিবাচব ভাবে পরিবর্তন ঘটানো না যায়, তাহলে আগামীতেও এর অনেক কুফল খুব ভয়ানক এবং বিপজ্জনক হবে। সময় মতোই মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে।

সুতরাং খাদ্য-দ্রব্যাদিতে ভেজাল এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো রোধে বিভিন্ন গণমাধ্যম সহ সকলের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আশা প্রয়োজন বলে মনে করি। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজন এই ব্যাপারে জনসচেতনতা অনেক বৃদ্ধি করা। সর্বশেষে একটি কথা বলতে চাই যে, ফলমূল বা খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল রোধে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজ নৈতিকতাবোধকে অনেকাংশেই জাগ্রত করা। নিজ বিবেককে জাগ্রত করে এবং বিভিন্নভাবে পর্যবক্ষেণ করেই খাদ্য-দ্রব্যাদি ক্রয় করতে হবে।

লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

Related Articles

2 Comments

  1. সরকারের দীর্ঘ সময়েই শিক্ষা উন্নয়নের বাস্তবায়ন
    ও পরিকল্পনা

    নজরুল ইসলাম তোফা:: শিক্ষা বা জ্ঞানই মানুষের জীবন ধারণ ও উন্নতির জন্যে প্রধানতম সহায়ক বা নিয়ামক। একদা গুহা বাসী আদিম মানব আজ যে বিস্ময়কর সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে তার পেছনেই রয়েছে মানুষের যুগ যুগান্তরের অর্জিত জ্ঞান এবং অর্জনের প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ার নামই শিক্ষা। তাই শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বা শিক্ষা জাতির উন্নতির পূর্বশর্ত। মেরুদণ্ড ছাড়া মানুষ কখনোই চলতে পারে না, তেমনি সুশিক্ষিত লোক ছাড়া একটি দেশ চলতে পারে না। জানা দরকার যে, এই বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে ‍’শাস’ ধাতু থেকে। যার অর্থই শাসন করা বা উপদেশ দান করা। আর শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘এডুকেশন’, তা এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘এডুকেয়ার’ বা ‘এডুকাতুম’ থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকেই বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। সক্রেটিসের ভাষায়, এ শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ। এরিস্টটলের মতে, সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে গেলে, শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না, বিশ্ব সত্তার সাথেই সামঞ্জস্য রেখে আমাদের সুন্দর জীবনকে গড়ে তোলে। সুতরাং, শিক্ষা প্রক্রিয়ায় যে কোন মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্যেই উৎসাহ দেয়া এবং সমাজে তাকেই একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্যেই যে সব দক্ষতা প্রয়োজন সে গুলো অর্জনে অবশ্যই সহায়তা করা। সাধারণ অর্থে যদি বলি, জ্ঞান অথবা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে এমন শিক্ষাকে পদ্ধতিগত ভাবে জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াটিকেই শিক্ষা বলে। সুতরাং শিক্ষা হল, সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। একটু অন্য ভাবে বলা যায় যে, মস্তিষ্কবিহীন মানুষ এবং শিক্ষাবিহীন জাতি কখনোই উন্নতি করতে পারে না। তাই শিক্ষার দিকে যে দেশ যত বেশি অগ্রগামী, সে দেশটি যেন ততোই উন্নয়ন মাত্রায় বেশি সমৃদ্ধশালী। তাই তো মানুষকে শিক্ষিত রূপে গড়ে তোলার দ্বায়িত্বে যারা নিয়োজিত রয়েছে তারাই হচ্ছে সু-শিক্ষক। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যক্রমের মধ্যে শিক্ষাকে আর শিক্ষককে কতটুকু মূল্যবান করছে সরকার, সেটিই এ ভাবনার আবশ্যিক বিষয়। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞাতেই বলতে গেলে বলা যায় যে, একটি কল্যাণ মূলক আধুনিক রাষ্ট্রে যে সব উপাদান থাকা উচিত, তা যদি নিশ্চিত করার প্রয়োজন হয়, তবে শিক্ষাকে প্রথম কাতারেই রাখা কিংবা শিক্ষকদের মর্যাদা সহ আর্থিক উন্নয়ন কিংবা বেতন বৃদ্ধি প্রয়োজন।
    উন্নয়নশীল এমন বাংলাদেশের পক্ষে অবশ্যই চেষ্টা করলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকে উচ্চ আসনে বসানো সম্ভব, যদি থাকে সরকারের সদিচ্ছা। এ শিক্ষাকেই সারা বিশ্বের দেশগুলো কেমন ভাবে, কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে থাকে তারও পরিসংখ্যান জানা দরকার। যদি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করি, তা হলে দেখা যায় শিক্ষকগণদের ‘ভি,আই,পি’ মর্যাদা প্রদান করে তারা। ফ্রান্স সরকার তাদের আদালতে কেবল মাত্র শিক্ষকেই চেয়ারে বসতে দেন। আর জাপানেও এই শিক্ষকদের তাদের সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কখনো গ্রেফতার করেনা। আবার চীন দেশের শিক্ষা উন্নয়নে সবচেয়ে মর্যাদা পূর্ণ পদই শিক্ষকতা। তাছাড়াও কোরিয়ার দিকে যদি একটি বার দৃষ্টিপাত করি, তাহলে এমন শিক্ষকদের মন্ত্রীদের মতো সমান সুযোগ দেন। সুতরাং বাংলাদেশের শিক্ষকের কেমন অবস্থান কিংবা তাদের শ্রমের মূল্য কেমন প্রদান হয় সেটিই বিশ্লেষণের প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর থেকে, এমন রাষ্ট্রে কতটুকুই উন্নত হয়েছে বা তার ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোচ্ছে, তাকে অবশ্যই বোঝা যাবে এ দেশের শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে। এই দেশে, এই সরকার এর আমলে আসলেই সু-শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়েছে তাকে কোনো ভাবেই যেন অশিকার করবার উপায় দেখছিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন বর্তমানে উন্নয়নশীল এইদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে গভীর মনোযোগী। তাই, বাংলাদেশের শিক্ষা কিংবা শিক্ষকদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেছে কিন্তু তা এখনও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কমই বলা চলে। তবুও এমন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ক্ষমতা হাতে নিয়েই যেন শিক্ষা সহ শিক্ষকদের মানমর্যাদার কথা ভাবছে। আগামীতেও এখাতে অনেক স্বয়ং সম্পূর্ণ ভাবে কাজ করবে বলে জানা যায়। শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের ইচ্ছা ও উন্নয়নের অবস্থান অনেকাংশেই অগ্রসর। উপলব্ধি ও পরিমাপের বিবেচনায় এখন যদি এ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করি, তা হলেও এখনও বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে রয়েছে। জানা যায় যে ১৯৭১সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান যে লক্ষ্য ছিল-জাতিকে মেধাশূণ্য করে দেয়া, তা অনেকাংশেই যেন সফল হয়েছে। ঐ সকল বুদ্ধিজীবীদের অবর্তমানেই জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা গুলো চলে গিয়েছিল এক অযোগ্য মহলের ব্যক্তির নিকট। তাই বাংলাদেশ যে সূচনালগ্নে একেবারেই বুদ্ধিজীবীশূণ্য অবস্থায় ছিল, তা তো নয়। জাতির জনক ‘বঙ্গবন্ধুর’ আদর্শেই তারা অনুপ্রাণিত হয়ে সু-শিক্ষার আলোকে সে সময়েই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ছিল। তাদের আজ অনেককেই হারাতে হয়েছে। তবুও এ বাংলাদেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকটা এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। প্রকৃত পক্ষে এ দেশের সরকার নানা ভাবেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সে বিবেচনায় প্রতিটি নাগরিকদের শিক্ষা নিশ্চিত সহ শিক্ষকদের কর্মমুখী কর্মে গড়ে তোলার ব্যাপক প্রয়াস চালাচ্ছে।
    টেকসই শান্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে শিক্ষাকেই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে উপজীব্য করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেই নিরাপদ শান্তির জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে এবং তা আওয়ামীলীগ সরকার করছে। শিক্ষা উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়ায়, নিজের অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে কিংবা জীবনকেই সমৃদ্ধ করে। আরও বলা যায় যে, সামাজিক ব্যাধির বেশিরভাগই দূর করে ”সু-শিক্ষা”। এটি কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করে, আয় ও দারিদ্র্য নিরসনে ভূমিকা রাখে।
    জ্ঞান বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতির এইযুগে জাতীয় জীবনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত নয়, তারা পদে পদে অন্ধকারই দেখে। জননেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, একটি পূর্ণাঙ্গ কিংবা দীর্ঘ মেয়াদি শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে, দেশের সকল জনগোষ্ঠীকেই অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এই নিরক্ষর জাতিকে আলোকিত করতে হবে। এমন এই শিক্ষা নীতির যথাযথ প্রয়োগ কিংবা বাস্তবায়নের অবকাঠামোগত কাজগুলোকে সম্পন্ন করে আরও খুব স্বযত্নেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলতে হবে। শিক্ষকতা পেশাকে সারা বিশ্বের দেশ গুলোর মতো শিক্ষকদের অবশ্যই পারিশ্রমিক দিয়ে মর্যাদা পূূর্ণ আসনে বসিয়ে এমন শিক্ষকতা পেশাকে গুরুত্ব পূর্ণ করে তুলতে হবে। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্যে শিক্ষা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচির পাশা পাশি বহু ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। নতুন প্রজন্মের শিশুরাই পাবে উন্নত কিংবা সমৃদ্ধির বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা বলেন, শিশু-কিশোরদেরই উৎসাহিত করা প্রয়োজন চিত্রাঙ্কন ও বিষয় ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা এবং খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা সহ অনেক সু-পরিকল্পিত ভাবেই বক্তব্য বা বক্তৃতার অনুশীলন। এই গুলোই ছেলে মেয়েদের “খুব সুন্দর” জীবন গড়ার সুযোগ সৃৃষ্টি করে। তাই শিক্ষার সঙ্গেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে সরকার সুপরিকল্পিত ভাবেই দেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে। আজকের শিশুরা বড় হয়েই এদেশের জন্যে গর্ববোধ করবে।
    ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, অতীতে পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাপক হারে নকল, দুর্নীতি, প্রশ্ন ফাঁস কিংবা পরীক্ষা কেন্দ্রে উত্তর বলে দেওয়ার মত কাজ গুলো শক্ত হাতেই এ সরকার বন্ধ করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছু কুচক্রী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রেই যেন এ সরকার বিব্রত হচ্ছে। আসলে বলতেই হয়, সরকার কারিগরি দিক থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি, অবশ্যই সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যেন সক্ষম হয়েছে। তাছাড়াও দেশের ‘মাদ্রাসা’ শিক্ষাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাবেই মূল্যায়ন করেছে। আল্লামা শাহ আহমদ শফি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়ে “মাদ্রাসা” শিক্ষা ব্যবস্থা সহ আলেমদেরকে খুবই সম্মানিত করেছে। সরকার বই-পুস্তক থেকে শুরু করেই যেন- অনেক ল্যাপটপ, তথ্য-প্রযুুক্তির ব্যবহার, বৃত্তি প্রদান ও বিনা বেতনেই লেখা পড়ার সুুুযোগ কিংবা যাতায়াতের মাধ্যম সহ ইত্যাদির বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তাই আধুনিক শিক্ষাকে কার্যকরী সম্পর্কে প্রয়োজন হবে মানবিক গুণাবলী সমৃদ্ধ শিক্ষা পদ্ধতি কিংবা ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থায় প্রয়োজন শিক্ষক মহলদের যুুুুগোপযোগী চিন্তাচেতনা এবং তার যথাযথ ব্যবহার সহ একটি আধুনিক সিলেবাস দাঁড় করানো। এতেই শিক্ষার ক্ষেত্রে ন্যায়, সত্য কিংবা অনেক সুন্দর এক উপযোগী শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা সহ নৈতিক শিক্ষা বা মূল্যবোধের চর্চাকে প্রাধান্য দিয়েই অনেক আধুনিক সুশিক্ষিত, সচেতন মানুষের দায়িত্বে থাকা উচিত। এমন রাষ্ট্র কিংবা সমাজের প্রতি সেই দায়িত্ব গুলোকেই চিহ্নিত করে তার যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এই শিক্ষাকে নিয়েই দেখা যায় বহু দুর্নীতি হয়। তাকে প্রশ্রয় না দিয়েই, সেখানে মানুষ গড়ার একটি প্লাটফর্ম সৃষ্টি করতে হবে। পরীক্ষা গ্রহণ করে, যারা যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী তাদের মূল্যায়নে এনে অযোগ্যকে মূল্যায়নের নাটক বন্ধ প্রয়োজন। বিশেষত আজকে দেখাই যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যেই সব পরীক্ষা বাস্তবিক অর্থে তা সামাজিক কাজে ব্যবহার হয় না বললেই চলে। তাই সেখানে কারিগরি কিংবা ব্যবহারিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রসার ঘটাতে হবে।
    শিক্ষার্থী যাতে ফেল না করে তাকেও শিক্ষকদেরকে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে এই আওয়ামীলীগ সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রসার এবং জনসাধারণকেও শতভাগ সু-শিক্ষার আওতাতেই নিয়ে আসার জন্যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গবেষণা, বিজ্ঞানের মতো শিক্ষাতেই গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী জানান, উচ্চশিক্ষা প্রসারে বিশেষ ফান্ডও গঠন করা হয়েছে। কারিগরি ও বিজ্ঞানসহ সব ধরনের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে কারিকুলাম পরিবর্তনও করেছে।
    প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের ১৫১টা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ৪৮টা পাবলিক এবং ১০৩টা প্রাইভেট। তার একটাই লক্ষ্য হচ্ছে, যত বড় বড় এলাকা রয়েছে, যেই সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সে সব জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবে এবং যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নাই, সেখানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় করেও দিচ্ছে। এই সরকারের উদ্দেশ্য একটাই যাতে ছেলেমেয়েরা ঘরে বসে যাতে শিক্ষাটা পায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এলেই বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করেই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করবে বলে ঘোষণা দেন। তিনি আরও বলেন, এমন বাংলাদেশে কোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ছিলনা। তাঁর লক্ষ্য এইদেশের মানুষ সুলভে সুচিকিৎসা পাবে ও তাদের সন্তান সেখানেই পড়াশোনা করে খুব ভালো ডাক্তার হবে। জাতির পিতা প্রতিটি উপজেলায় ”দশ” বেডের হাসপাতাল করেছিল, সেখানেই জনগণ স্বাস্থ্য সেবা যুগোপযোগী মানের পাশাপাশি ডাক্তার তৈরি কিংবা মেডিকেল ছাত্র/ছাত্রীরা চিকিৎসা পদ্ধতিতে নিজস্ব মননশীলতা বৃদ্ধি করতে পারবে বলেই তাকে নির্মাণ করেছিল। কিন্তু জাতির পিতা আজ নেই, তার স্বপ্ন তো জননেত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা চেতনায় রয়েছে।
    জাতির পিতার স্বপ্ন পুরনে ইতিমধ্যে রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছে। আর একটি সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রস্তুাবও পার্লামেন্টে পাশও হয়েছে। তাছাড়াও বাঁকি “পাঁচটি” বিভাগেরও ‘মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ হাতে নিয়েছে।আওয়ামী লীগ সরকার আবারও ক্ষমতায় এলে সে গুলোর কাজ শুরু করবে। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশিও ছাত্র ছাত্রীদের সুশিক্ষার প্লাটফর্ম সৃষ্টি হবে। নওগা, নীলফামারি, মাগুরায় “মেডিকেল কলেজ” করাও হচ্ছে। চাঁদপুরেও একটি “মেডিকেল কলেজ” করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে অনেক আধুনিক এক সেবা ও শিক্ষা উন্নয়নের সেন্টার অব এক্সসিলেন্স। চিকিৎসার সহিত শিক্ষা, মেধা বৃত্তি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ সহ শিক্ষকদের গবেষণাতেও সমগ্র বিশ্ব থেকেই সহায়তা পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী “শেখ হাসিনা” বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে উন্নয়ন এবং গবেষণায় কোনো ধরনের বরাদ্দ ছিল না। ৯৬ সালে প্রথম থেকে বরাদ্দ দেয়ার প্ররক্রিয়া চালু হয়। সুতরাং উল্লেখ করার মতো এক উদহারণ তা হলো, এ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নেও লক্ষণীয় মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নেই ‘একান্ন কোটি ডলার’ ঋণ সহায়তা পাচ্ছে, একটি সহযোগী বিশ্ব ব্যাংক থেকে। তাছাড়াও একই প্রকল্পে আরও ”এক কোটি ডলার”, গ্লোবাল ফিনান্সিং ফেসিলিটির আওতায় অনুদান সহায়তা দিচ্ছে এমন এ সংস্থাটি।সরকারের ট্রান্সফরমিং সেকেন্ডারি এডুকেশন ফর রেজাল্ট অপারেশন এর শীর্ষক একটি কর্মসূচিতেও মোট বাহান্ন কোটি মার্কিন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এই দেশের স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ হবে প্রায়- ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন এই প্রকল্পটি জানুয়ারির- ২০১৮ থেকে আরম্ভ করে ডিসেম্বরের- ২০২২ সালেই বাস্তবায়ন করবে। এমন ধরণের শিক্ষা উন্নয়নে বাংলাদেশ একসময় পরিচয় দিতে গর্ববোধ করবে। আজকের তরুণ প্রজন্মকেই সামনে রেখেই যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “ডেল্টা প্ল্যান ২১০০” গ্রহণ করেছে।শিক্ষা ক্ষেত্রকে সু-বিস্তৃত করতেই সমগ্র বাংলাদেশের যেখানে স্কুল নাই এমন পরিবেশে ‘স্কুল প্রতিষ্ঠা’ ও যেখানে সরকারি কলেজ এবং স্কুল নাই, সেখানেই ‘সরকারি কলেজ’ কিংবা ‘স্কুল’ করেও দিচ্ছে। তিনশ’র কাছা কাছিই কলেজ এবং ‘ছাব্বিশ হাজার’ প্রাইমারি স্কুল সরকারি করণ করেছে। সুতরাং নতুন প্রজন্মকেই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের মূললক্ষ্য। শিশুরা আগামী প্রজন্মে নান্দনিক সুশিক্ষা নিয়ে বড় হয়েই এমন এ প্রতিষ্ঠানসহ সমগ্র দেশের গুরুত্ব পূর্ণ দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবে।
    শুধু এমন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে এই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার সে সব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করেই চলছে। আবার এদেশে তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের মেধাবী ছেলে/মেয়েদের পড়া লেখাতেও সহযোগিতা করেছে সরকার এবং শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছে তারা। কারণ সব শ্রেণীর মানুষের সহায়তায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি করে সমাজ ও জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যেই দাঁড় হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বা ডিজিটাল বাংলাদেশ। তাই এই সামষ্টিক উন্নয়নেরই বর্তমানে এ সরকার এমন বিষয়টিকে উপলব্ধি করে উন্নয়নের সিঁড়ি হিসেবে শিক্ষাকেই বেছে নিয়েছে ও তদানুযায়ী পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। শিক্ষার নানান স্তর, পাবলিক পরীক্ষা সমূহ, পাঠ্যবই এবং পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে আরও যাবতীয় বিষয়াদিকে ব্যাপক পরিবর্তনের আওতায় নিয়ে আসছে। তাছাড়াও এনসিটিবি বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের “এটুআই” প্রোগ্রামের দ্বারাই যৌথ উদ্যোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১০৯ টি পাঠ্য পুস্তকের ই-বুক ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। যার ফলেই আজ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ, যে কোনো সময় জাতীয় শিক্ষাক্রম কিংবা পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের সকল পাঠ্য পুস্তক ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। এই ই-বুক কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন সেটের মাধ্যমেই তা সহজে পড়া যাচ্ছে।
    শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে সরকারের নির্দেশে আলাদা আদেশ জারি হয়। আর সেই আদেশ জারিতে ৮ টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি, দাখিল, আলিম পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মেধাবৃত্তি ও সাধারণ বৃত্তি দিয়ে এ সরকার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশের “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়” গুলোতেও শিক্ষার্থীর জন্য নানা রকম বৃত্তি চালু আছে। বিভিন্ন “কোটা” ছাড়াও মেধার ভিত্তিতে ভর্তি এবং টিউশন ফির ক্ষেত্রেও ছাড় পায়। আবারও অনেক হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে এমন এই সরকারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দেশের বহু ধরনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পর্যায়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এ সরকারের আমলে অনেকেই বৃত্তি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো পরিবারের শিশুরা যেন ঠিকমতো লেখা পড়া করতে পারে সেই জন্যেই সরকার সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। দিচ্ছে বিনামূল্যে বই। গরিব এবং মেধাবীদের জন্যে একেবারে প্রাথমিক স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত তাদের “মেধা বৃত্তি” ব্যবস্থাও করেছে। তাদের মায়ের নামের অ্যাকাউন্ট করেই তাদের বৃত্তির টাকা প্রেরণ করে সরকার । শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়াকেই ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে— উল্লেখ করে শেখ হাসিন বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে ‘১ কোটি ৪০ লাখ’ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থায় তারা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারেরও সুযোগ পাচ্ছে। তা ছাড়াও দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো সহিত ‘মেধা বৃত্তি’ প্রদান করে শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশি বেশি বরাদ্দ রাখার সঙ্গেই সকল কাজ করছে এই সরকার। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল তৈরি ও সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির প্রত্যয় নিয়েই এমন সরকারের অগ্রযাত্রা।
    লেখক,
    নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

  2. অশিক্ষিত মানুষের চেয়ে অল্প শিক্ষিত মানুষই বেশি ক্ষতিকর

    নজরুল ইসলাম তোফা :: সব জিনিস এবং বিষয়ের মর্যাদা সব মানুষের বোঝার ক্ষমতা বা দক্ষতা থাকে না। যথাযথ স্থানে যথাযোগ্য ব্যক্তি অধিষ্ঠিত না হলে সত্য, সুন্দর, মঙ্গল একেবারে ধুলিষ্মাৎ হয়। সেখানে স্হান করে নেয় যেন অত্যাচার, জুলুম আর দুর্নীতি।সুুতরাং জীবনকে সুুুন্দর ও শোভন রূপে গড়ে তোলা না হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায় না। এজন্য মানব জীবনে যেন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞানের। জ্ঞানই শক্তি আর জ্ঞানেই মুক্তি। কারণ, জীবন যাপনে সকল মানুষকে হাজারো সমস্যা মোকাবিলা করেই ‘সম্মুখে অগ্রসর’ হতে হয়। আপন জন্মের ব্যাপারেই মানুষের নিজের কোনো ভূমিকা থাকে না। উঁচু বা নিচু, ধনী বা দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হওয়াই যেন তার ইচ্ছা ও কর্মের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু কর্ম জীবনে তার ভূমিকা এবং অবদানের দায় তার নিজের উপর বর্তায়। এই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে তার জন্ম-পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না বলেই মনে করি।

    বরং মানুষ কর্ম-অবদানের মাধ্যমেই পেয়ে থাকে বহু মর্যাদার স্হান বা আসন এবং হয়ে যান একে বারেই বরণীয়-স্মরণীয়। পক্ষান্তরে আবার বলা যায়, এমন সমাজে এক দল লোক রয়েছে, যারা কি না তাদেরই বংশ আভিজাত্যে নিজেদের জ্ঞানী এবং সম্ভ্রান্ত মনে করে। তারা বংশ মর্যাদার অজু হাতে সমাজে বিশেষ মর্যাদা দাবিও করে। সুতরাং- এমন আলোচনার মুল উদ্দেশ্যটা হলো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর বা ভয়ঙ্করী। অতি জ্ঞানী ভাবধরা গোবরে পোকার পাণ্ডিত্যেরই কিঞ্চিৎ বিশ্লেষণ মাত্র। অল্পবিদ্যা অর্থ সামান্য লেখা পড়া বা জ্ঞান। আর “অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী” হচ্ছে সামান্য বিদ্যা ক্ষতিকর, কারণ এতে অহঙ্কার জন্মে, কিন্তু জ্ঞান হয় না। ছোট বেলায় সবাই পড়াশোনায় ব্যবহার করতো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী (অল্প বিদ্যার গর্ব)। আবার তাকে বাক্য তৈরিতেও নিয়ে যেতো। -“অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বলেই অর্বাচীন- জব্বার মিয়া এ বাংলাদেশের সেরা বৈজ্ঞানিক “ড. কুদরাত-এ-খুদা’র” বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সমালোচনায় অগ্রসর হয়েছিল।

    সুতরাং সে সব মানুষের প্রয়াস বাস্তবতা বিবর্জিত ও হাস্যকর। আসলে এখনো সমাজের নিচুতলায় জন্ম নিয়েও তারা কর্ম বা অবদানে বড় কিংবা জ্ঞানী হতে পারছে। মানব সমাজের ইতিহাসে এ রকম উদাহরণ অজস্র। কিন্তু “অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী” এই প্রবাদটা কম বেশি সকলের জানা থাকলেও প্রয়োগটা কম। ”অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর বা ভয়ঙ্করী” কথাটি অতি মাত্রায় সত্য।বলতে চাই যে অশিক্ষিত মানুষের চেয়ে অল্পশিক্ষিত মানুষরা সমাজের জন্যে বেশি ক্ষতি কর। অশিক্ষিত মানুষরা কেউ কোন বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করে না বা তর্ক করে না। নিজেকে নিয়েও তারা জাহির করে না। পক্ষান্তরেই অল্প অশিক্ষিত মানুষরা যা জানে না তা নিয়ে তর্ক করতে দ্বিধা করেনা। তারা তাদের স্বল্প বিদ্যাকে পুঁজি করে পৃথিবীর সব কিছুকেই পরিমাপ করতে চায় আবার যেন ঠকবাজী করে তা পরিমাপ করেও ফেলে।

    সকল অল্প শিক্ষিত মানুষকে কটাক্ষ করে এমন এই আলোচনার মুল বিষয় নয়। ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ এই প্রবাদ বাক্যটিকে এতদিন কথার কথাতেই যেন দাঁড় করানো হতো৷ কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর উক্তি দ্বারা বুঝা যায় যে, তাঁরও ইতিহাস ও ভিক্তি রয়েছে।তিনি বলেন, আমরা সবাই কম বেশি জানি তা হলো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী। কিন্তু কেন ভয়ঙ্করী তা জানি না। মানুষদের জ্ঞান-বিজ্ঞানকেই বাড়িয়ে চলার সাধনার ক্ষেত্রে যেন চির দিনই আমিত্বের অহংকার বড় বাধা হয়ে থেকেছে। মানুষ যেটুকু জানেন, তারচেয়ে সেটা বলা এবং জানানোর জন্য ‘চেষ্টা কিংবা গর্ব’ করেন।মনে করে থাকেন যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন হয়েছে,- এটাই মানুষের অহংকার কিংবা তার- “নিজস্ব অল্প বিদ্যার অহংকার”।

    লেখক:
    নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics