দেশের ইটভাটার ৫০ ভাগই অবৈধ!
সারাদেশে ভাটাগুলোতে চলছে ইট তৈরির কার্যক্রম। ইট তৈরির ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটারই সেগুলো নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য এবং পবার মাঠ পর্যায়ের তথ্য মতে ড্রাম চিমনির ভাটাসহ দেশে বর্তমানে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৯৭০০টি যার প্রায় ৫০ ভাগই অবৈধ। এসকল ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। বেশির ভাগ ইটাভাটাই নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হয়েছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, গ্রাম-গঞ্জ, শহর বন্দরের অতিসন্নিকটে, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে, পাহাড়ের পাদদেশে। ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি ধুলা-ময়লা উড়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। ইটভাটাসৃষ্ট দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফল-মূলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছে। আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, শনিবার, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত “ইটভাটার দূষণ: হুমকিতে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা”-শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত মন্তব্য করা হয়।
পবা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। উপস্থিত ছিলেন মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত, পবা’র সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুবুল আলম তাহিন, সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজীজ, সদস্য ইঞ্জি. তোফায়েল আহমদ, দিনা খাদিজা, ক্যামেলিয়া চৌধুরী, মো. মাসুম, মো. ইব্রাহিম হোসেন, কানিজ ফাতেমা, মোস্তারি বেগম, বিসিএইচআরডি-এর নির্বাহী পরিচালক মাহাবুব হক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জি এম রোস্তম খান, ডিডাব্লিউএস-এর সদস্য মারজানা আহমেদ প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, শিল্পকারখানা স্থাপন, আবাসিক ভবন নির্মাণ, নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রতি বছর গড়ে দেশের কৃষি জমির এক শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। তিন ফসলি জমির উপর গড়ে উঠছে অসংখ্য ইটভাটা। আবার তিন ফসলি জমির উর্বর ও সারযুক্ত টপসয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটেই তৈরী করা হচ্ছে ইট। এতে আশংকাজনকভাবে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। এর পাশাপাশি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। বিশেষ করে এবছরের এপ্রিলে হাওরে বন্যা, জুনে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ধস, আগষ্টে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা, সারাদেশে বজ্রপাত। আর্থিক দিক থেকে এবছর সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওরে বোরো ফসল নষ্ট হওয়া, উত্তরাঞ্চলে আমন ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সরকারি হিসাবে প্রায় ১৫ লাখ টন ধান নষ্ট হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অর্থনীতিতে বিশেষ করে কৃষিখাতে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যা ভবিষ্যতে আরো তীব্রতর হবে। যা কৃষি নির্ভর দেশের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এতে হুমকির মুখে পড়বে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ভাটায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্যান্য ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয় ও কমে যাচ্ছে বনাঞ্চল । ফলে, পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং অনেক মূল্যবান বিরল প্রজাতির উদ্ভিদও পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ইট ভাটা সৃষ্ট দূষণ এবং কৃষি উর্বর মাটির অবক্ষয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে এ সেক্টরে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনয়ন অত্যন্ত জরুরী।
বিগত বছরগুলোর মতো এবছরও পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতিরেকে দেশের বিভিন্ন ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। উপক’লীয়, পাহাড়ি, বরেন্দ্র এলাকা, চর এলাকার জেলাসমূহে ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা আধিক্য রয়েছে ও স্থাপনের মহোৎসব চলছে। সে বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরব এবং কার্যকর কোনো ভ’মিকা পালন করছে না। অথচ ২০০১ সাল থেকে ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত ইটভাটার সংখ্যা ৬৭৭০টি। এর মধ্যে ৪১০৮টি জিগজাগ বা উন্নত জিগজাগ, ২৫৪১টি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি ভাটা এবং ১২১টি এইচএইচকে ও টানেল ভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য এবং পবার মাঠ পর্যায়ের তথ্য মতে দেশে বর্তমানে ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৯৭০০টি। এর মধ্যে প্রায় ১৮০০টির অধিক ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা, ৪৭০০টি জিগজাগ বা উন্নত জিগজাগ, ৩০৭৫টি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনি ভাটা এবং ১২৫টি এইচএইচকে ও টানেল ভাটা। ৪৮২৫টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র বা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে, যা মোট ভাটার ৫০% বা ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা ছাড়া ভাটাসমূহের ৬১%। এসব ইটভাটায় ২৭ লাখ ৬৩ হাজার টন কাঠ এবং ৬৭,১৫,০০০ টন কয়লা পোড়ানো হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বাতাসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বস্তুকণা, ক্ষুদ্র বস্তুকণা ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা দিন দিন বাড়ছে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনটি উপাদানের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি থাকে। ঢাকায় পিএম ২.৫ এর মানমাত্রা হচ্ছে প্রতি কিউবিক মিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম, পিএম ১০ এর মানমাত্রা ৫০ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পিএম ২.৫ এর সারা বছরের গড় ছিল যথাক্রমে ৮১ ও ৭৬ মাইক্রোগ্রাম। যা মানমাত্রার চেয়ে ৫ গুণেরও বেশি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পিএম ১০ এর সারা বছরের গড় ছিল যথাক্রমে ১৪৮ ও ১৫৮ মাইক্রোগ্রাম। যা মানমাত্রার চেয়ে ৩ গুণের বেশি। ২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের আওতায় নরওয়ে ইনস্টিটিউট অব এয়ার রির্সাচের মাধ্যমে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার চারপাশে নভেম্বর থেকে চালু হওয়া ইটভাটাগুলো ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী।
গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জ এর বায়ুমান সূচক ছিল যথাক্রমে ৩২৩, ৩২৪ ও ৩৫৩। পরিবেশ অধিদপ্তরের মান অনুযায়ী ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জ এর বায়ুমান অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বায়ু দূষণের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরীসহ নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুরকে দিল্লীর মতো ধোঁয়াশাজনিত দূষণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে। গত নভেম্বরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে যাওয়ায় জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্কুল বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল, ট্রেনের যাত্রা বাতিল মানমাত্রার চেয়েল করতে হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী টানেল ও হফম্যান ভাটা পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি সাশ্রয়ী হিসাবে বিবেচিত এবং বিকশিত হচ্ছে। বিদ্যমান ইটের স্থলে সম্পদ সাশ্রয়ী ইট (আরইবি) যেমন ছিদ্রযুক্ত ইট, ফাঁপা ব্লক, অভ্যন্তরীণ জ্বালানীসহ ইট/উড়ো-ছাই ইট তৈরী করা। যান্ত্রিকিকরণের মাধ্যমে কাদামাটি প্রস্তুত ও ঢালাই করা। যার মাধ্যমে কমপক্ষে ২০-৩০ শতাংশ জ্বালানি ও মাটি সাশ্রয় হবে। চীনে ইট উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জা¡লানির ৮০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ জ্বালানী হিসাবে মিশানো এবং বাকি ২০ শতাংশ ফায়ারিং প্রক্রিয়ায় সময় ব্যবহৃত হয়। ফলে ভাটা থেকে বিপুল পরিমাণে নির্গমন হ্রাস পায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই তারিখের গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইনটি ২০১৪ সালের ০১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ অবৈধ ইটভাটা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারী করে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে অধিদপ্তরের একাধিকবার নোটিশ প্রদান ও অনুরোধ সত্ত্বেও ইটভাটার মালিকগণ প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে ইট উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন যা ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর ধারা ১৪ ও ১৫ অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক মাসের মধ্যে লাইসেন্স ও পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ করা না হলে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া, ক্ষতিপূরণ আদায়, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।
ইট তৈরির মৌসুম সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করতে হলে মৌসুম শুরুর আগেই বিজ্ঞপ্তি জারী করা প্রয়োজন ছিল। তাতে মৌসুম শুরু হওয়া মাত্রই লাইসেন্স ও পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ভাটাসমূহের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হতো। এ বিজ্ঞপ্তি থেকে এটা সুস্পষ্ট যে অবৈধ ভাটাসমূহ মৌসুমের অর্ধেক সময় নির্বিগ্নে ইট তৈরি করতে পারবে। তাই এ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ২০১৩ সনের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী ইটভাটার দূষণরোধের মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের উপর ন্যস্ত। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরকে আইন দুটি এনফোর্স করতে দেখা যাচ্ছে না। অধিদপ্তর শুধুমাত্র সচেতনতামূলক কার্যক্রম (মিটিং, সেমিনার, ওর্য়াকশপ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার) করে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসাবে আইন দুটি প্রয়োগ না করে শুধুমাত্র সচেতনামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ইটভাটার দূষণরোধে পরিবেশ অধিদপ্তর আইন দুটি যথাযথবাবে এনফোর্স করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
ইটভাটা সৃষ্ট দূষণ পরিশে বিপর্যয়, জনস্বাস্থ্য ও কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। দেশে গাছ লাগনো আজ একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমরা তার কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছি না। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটায় নির্বিচারে কাঠ পোড়ানো। আধুনিক, পরিবেশ বান্ধব ও জ্বালানী সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার, নির্ধারিত মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহার, জ্বালানী হিসাবে কাঠ ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং সংশ্লিষ্ট আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ-এর মাধ্যমে ইটভাটা সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
সুপারিশ সভাথেকে শুপারিশ করা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন কর্তৃক মাঠপর্যায়ে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ড্রাম চিমনীবিশিষ্ট ইটভাটাগুলো চিহিৃতকরণ ও সেগুলো অনতিবিলম্বে বন্ধ করা এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা। মাঠপর্যায়ে মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বন অধিদপ্তরের সহায়তা গ্রহণ করা। আইনটি ২০১৪ সালের ০১ জুলাই থেকে কার্যকর বিধায় আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা; সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভ’মি; কৃষি জমি; প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা; ডিগ্রেডেড এয়ার শেড (উবমৎধফবফ অরৎ ঝযবফ) এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কোন আইনের অধীন কোনরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স প্রদান না করা। নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে বা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে বা স্থানে ছাড়পত্র গ্রহণকারী ইটভাটাসমূহের ছাড়পত্র, লাইসেন্স বাতিল করা এবং সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া। ইটভাটায় জ্বালানী হিসাবে কাঠ ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা। ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ রোধে ঢাকার চারপাশের ভাটাসমূহ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা এখনই গ্রহণ করা। বিদ্যমান ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনিবিশিষ্ট যেসকল ইটভাটা এখনো উন্নত প্রযুক্তিতে রুপান্তর করা হয়নি সেগুলো বন্ধ করে দেয়া। নির্ধারিত মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা আমদানি করা। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যকর ভ’মিকা রাখা। ইটঁভাটর মালিকের সামাজিক অবস্থান ও রাজনৈতিক বিবেচনার উর্ধে উঠে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রয়োগ করা। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং পরিদর্শন ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, মেজিস্ট্রেসী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের সাধন করা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন,১৯৯৫ এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার আন্তরিকতা, সদিচ্ছা, দায়বদ্ধতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ভাটা নির্মাণে নিয়োজিত কারিগর এবং ফায়ারম্যানদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।