মাছ যেভাবে আমাদের সভ্যতা গড়ে দিলো

এই গুরুত্বপূর্ণ চিত্তাকর্ষক বইটি পড়তে কে কে আগ্রহী?

তারেক অণু

আদিকালে মানুষ তিনভাবে খাদ্য সংগ্রহ করত – শিকার করে, গাছ থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে এবং মাছ ধরে। বর্তমান পৃথিবীতে সবার জন্য কেবলমাত্র মাছ ধরা টিকে আছে মানে সত্যি বলতে মাছ আমাদের শেষ খাদ্য যা আমরা প্রকৃতি থেকে বুনো অবস্থায় (Wild Food) পেয়ে থাকি। মানুষের পূর্বপুরুষেরা মাছ ধরছে অন্তত দুই লক্ষ বছর ধরে, প্রথম ধরা মাছ ছিল সম্ভবত আফ্রিকার জলা-ডোবাগুলোতে নিজের ছায়া না ফেলে কৌশলে অগভীর পানি থেকে ক্যাটফিস ( শিং-মাগুর জাতীয়) মাছ ধরা। একাধিক প্রজাতির মানুষ, অন্তত হোমো স্যাপিয়েন্স এবং নিযয়ান্ডারথালরা যে মাছ ধরত সেটা প্রমাণিত। সেই সাথে অবশ্যই তারা শামুক-ঝিনুক ইত্যাদি সংগ্রহ করত খাবার জন্য।

১৫ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সে এবং অন্যান্য জায়গায় মানুষ অপেক্ষা করে থাকতো শরৎ এবং বসন্তের স্যামন মাছদের আগমনের জন্য, ঠিক এখনকার মতই। সেই সময়কার গুহাচিত্রে মাছ শিকারের এই চিত্র পাওয়া যায়। শুনেছেন যে মিশরের পিরামিড তৈরির সময় শ্রমিকদেরকে বরাদ্দ হিসেবে শুটকি মাছ দেওয়া হতো? তাহলে সেই হাজার হাজার শ্রমিককে দেওয়া হাজার হাজার মাছের শুটকি বানাতে কী বিশাল কর্মযজ্ঞ হতো, কত জনবল নিয়োজিত ছিল!

চীনের মানুষেরা অন্তত ৫ হাজার বছর আগেই আমুর নদীর কার্প মাছ চাষ করা শুরু করেছিল। লেখক দেখিয়েছেন আমাদের নানা ধরনের নৌকার আবিষ্কার এবং উন্নতির অন্যতম কারণ ছিল মাছ ধরা, যা পরবর্তীতে অন্যান্য জায়গায় যাওয়া, ব্যবসা এবং আবিষ্কারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এবং নানা জনজাতির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাছের জায়গার দখল নিয়ে নানা জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায় যেমন উত্তর আমেরিকার আদিবাসী চুমাশ ইন্ডিয়ান এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে আগত ভাইকিংদের মধ্যে!

কিভাবে বিশাল আকারের ফিশিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলো? বিশেষ করে কড বা হেরিং মাছের জন্য? এবং বর্তমানে গোটা পৃথিবী এই সংঘর্ষের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছি। লেখক অসহায়ের মত বলেছেন আমরা যেভাবে সমুদ্র, জীবনচক্র ইত্যাদি ধ্বংস করে মহাসাগরকে মাছ শূন্য করার প্রতিযোগিতায় মেতেছি এটা থেকে উত্তরণের উপায় উনি বলতে পারছেন না কিন্তু গবেষকের দৃষ্টিতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন মানব জাতির ইতিহাসের সাথে মাছ ধরার সম্পর্কটা, এবং আশা করেছেন মানুষ এটা যত দ্রুত বুঝতে পারবে ততই হয়তো মাছ রক্ষার জন্য নানা পদক্ষেপ নেবে।

ব্রিটিশ লেখক ব্রায়ান ফ্যাগান মূলত প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে কাজ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ্যার এমিরেটাস প্রফেসর, ৮৭ বছর বয়সেও সমানে গবেষণা করছেন, লিখে যাচ্ছেন।

পশ্চিমা দেশে বসবাসকারী বন্ধুরা খুব সহজেই ১২ ডলারে বইটি অনলাইনে কিনতে পারবেন। কিন্তু আমাদের অঞ্চলে এটা সংগ্রহ করা এত সহজ হবে না। তাই আগ্রহীদের জন্য ৩৭৯ পাতার বইটির সফট কপি দিতে রাজি আছি। শর্ত সেই একটাই, পড়ে বা স্ক্রল করে অবশ্যই বইটি নিয়ে কয়েক লাইন লিখতে হবে।

লেখক, গবেষক ভূ-পর্যটক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics