হিরোশিমা দিবস; আধুনিক সভ্যতাকে কলঙ্কিত করেছিলো 'লিটল বয়' !

সিফাত তাহজিবা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে সভ্যতা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সভ্যতার উন্নতির ভয়াবহ একটি দিক হলো সামরিক বাহিনীতে ব্যবহার করা উন্নত প্রযুক্তির মারণাস্ত্র। এর মধ্যে পারমানবিক বোমা হলো বিজ্ঞানের সবচেয়ে ভয়ংকর সৃষ্টি! এক নিমিষেই যেটি কিনা ধ্বংস করে দিতে পারে একটি সাজানো সুন্দর শহর কিংবা দেশ। জাপানের সবচেয়ে বৃহৎ দ্বীপ ‘হিরোশিমা’ পারমানবিক বোমার নিষ্ঠুরতার স্বাক্ষর ৭০ বছর ধরে বয়ে নিয়ে চলেছে!

সালটা ১৯৪৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষ দিকে, ৬ আগস্ট ; সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের নির্দেশে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ট্রিনিটি মার্কিন বিমান ঘাটি থেকে বি-২৯ বিমানটি ৯০০০ পাউন্ডের ২০,০০০ টন বিস্ফোরক টিএনটি’র সমান ধ্বংসাত্নক ক্ষমতা সম্পন্ন ‘ইউরেনিয়াম-২৩৫’ বোমা নিয়ে রওনা হয় এবং ঠিক সকাল ৮:১৫ এ ‘লিটল বয়’ নামক পারমানবিক বোমাটি আমেরিকান বিমান বাহিনীর ‘ইনোলা গে’ নামক এই ‘বি-২৯’ বোম্বার থেকে জাপানের ‘হিরোশিমা’ নগরীর উপর ফেলা হল।

Little_boy
ছবিঃ ‘লিটল বয়’

অপারেশনাল অফিসার ছিলেন মেজর জেমস হপকিন্স, বিমানটির ক্রু যারা ছিলেন তাঁরা দেখেছিলেন তীব্র দাবানলের ক্রমবর্ধমান ধোয়া কুন্ডলি পাকিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে সেই সাথে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে!
‘ট্রিনিটি টেস্ট’ নামে পরিচিত এই ঘটনাটিকে আমেরিকানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে পারমানবিক বোমা তৈরির ক্ষেত্রে বিজয় হিসেবে দেখেছিল!

Hiroshima-bombing-Enola-Gay
ছবিঃ হিরোশিমা নগরীর উপর বিস্ফোন

‘হিরোশিমা’ ছিল আমেরিকানদের জন্য গবেষনাগার আর হিরোশিমার নিরীহ মানুষজন ছিল গিনিপিগ। বোমাটির বিস্ফোরিত হবার পর ওয়াশিংটন থেকে আবার একটি দল জাপানে পাঠানো হয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাত্কার নেওয়ার জন্য! একটি মাত্র সাক্ষাত্কারই ইংরেজিতে ছিল যেটি দিয়েছিলেন একজন রাশিয়ান মহিলা, ৫ মিনিটের এ সাক্ষাত্কারটিতে বলা হয় তিনি হিরোশিমা শহরের কাছেই অবস্থান করছিলেন এবং দেখতে পান কিভাবে পারমানবিক বোমার ঝাঁঝ হিরোশিমার নগরবাসীকে পুড়িয়ে দিয়েছিল, মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল দালান-কোঠা।

hiro2
ছবিঃ হিরোশিমা ধ্বংসের স্তূপ

ইতিহাসের পাতা উল্টালে জানা যায়, ৮:১৬ মিনিটে জাপানের ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের টোকিও নিয়ন্ত্রণ অপারেটর লক্ষ্য করেন, হিরোশিমা স্টেশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং তিনি অন্য একটি টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে প্রোগ্রাম পুনরায় চালু করার চেষ্টা করেন কিন্তু সেটিও কাজ করল না! প্রায় বিশ মিনিট পরে টোকিও রেলপথ টেলিগ্রাফ কেন্দ্র বুঝতে পারল উত্তর হিরোশিমার টেলিগ্রাফের প্রধান লাইনটি কাজ করছে না। এরই মধ্যে শহরের দশ মাইলের ভিতরে বেশ কয়েকটি রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়, সাথে বিভ্রান্তকর ও ভয়ঙ্কর একটি বিস্ফোরনের খবর আসতে থাকে শহরের আশপাশ থেকে যেগুলো জাপান জেনারেল স্টাফের সদর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়।

2009-12-08-Hiroshimaaftermath
সামরিক সদর দপ্তর বারবার হিরোশিমার সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল স্টেশনে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু সবদিক থেকে হিরোশিমার সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ সদর দফতরের মানুষজন ধাঁধায় পরে যান। সদর দফতর থেকে তক্ষুনি বিমান বাহিনীর একজন তরূণ অফিসারকে হিরোশিমা গিয়ে সার্বিক অবস্থা দেখে নির্ভরযোগ্য তথ্য আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সদর দফতর তখন পর্যন্ত ভেবেছিল এগুলো সবই গুজব!

ছবিঃ বেচে যাওয়া একজন

এখানেই ভয়াবহতা শেষ হয়ে যায়নি!
বিস্ফোরনের বিকিরণে আহত হয়ে পরে আরও প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা যায়! বিস্ফোরনের ক্ষত নিয়ে সংখ্যায় খুব কমই বেঁচে ছিল কারো হাত নেই,পা নেই আবার কারও চোখ বের হয়ে এসেছে। বিকিরণ পরবর্তী যে কয়জন শিশু জন্মেছিল তারা সবাই ছিল বিকলাংগ নয়তো প্রতিবন্ধি নয়তো কিছুনা কিছু অসুখ নিয়ে!

জাপানে একটি জাদুঘর করা হয়েছে যেখানে রাখা আছে হিরোশিমার কিছু ধ্বংসাবশেষ।

2059306600_16ab4b3e82_b

hiroshima_artifacts

 

পুড়ে যাওয়া একটি ট্রাই সাইকেল থেকে শুরু করে বেসামরিক মানুষের ঘরবাড়ির অনেক জিনিসপত্র!

8370091030111224সবচেয়ে বিখ্যাত হল একটি হাত ঘড়ি যেটিতে সময় আটকে আছে সেই ভয়াল ৮:১৫ মিনিটেই…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics