জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

রাফী শামস

সারা পৃথিবীর হাজারো পরিবেশবাদী একত্রিত হয়েছেন পেরুর লিমায়। উদ্দেশ্য? জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। ভাবছেন এ আর এমন কি? প্রতি বছরই তো এমন ঢের আলোচনা-সভা-সেমিনার হচ্ছে। শেষমেষ কিই বা লাভ হচ্ছে? জলবায়ু পরিবর্তনের পিছনে দায়ী উন্নত দেশগুলো তো কার্বন নিঃসরণ কমাচ্ছেনা! তবে পেরুর এই সমাবেশটি অনেকখানি গুরুত্ব বহন করে বৈকি।

দুই সপ্তাহব্যাপী এই কনফারেন্স কে বলা হচ্ছে Cop20। কারণ এটি হচ্ছে ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ প্রণীত জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কনভেনশনের ২০ তম অধিবেশন! অনেক গুলো কারণেই এই অধিবেশনটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সকলের মনোযোগের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ২০১৫ তে প্যারিসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া Cop-21 এই অধিবেশনের গুরুত্ব অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে কারণ ২০১৫ এর অধিবেশনটি হবে অনেক বড় আকারে, চলতি Cop20 কে তাই দেখা হচ্ছে তার প্রস্তুতি হিসেবে। এখন জেনে নেয়া যাক Cop-21 কেন গুরুত্বপূর্ণ?কারণ খুব সম্ভবত ওটাই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা এড়ানোর জন্য রাষ্ট্রগুলোর শেষ সুযোগ! ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস (৩.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেছেন তাতে সম্মত হয়ে সেই অনুযায়ি পরিকল্পনা গ্রহণ করার সুযোগ আমরা হয়তো একবারই পাব! একারণেই আগামি বছরের অধিবেশনটি এত গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই অধিবেশনেরই প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে Cop20 কে!cop20-lima-flickr-presidencia_peru-crop(1)

‘লিমা অধিবেশন’ থেকে ২০১৫ এর অধিবেশনে অংশ নেয়া দেশ গুলোর জন্য একটি খসড়া পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। প্রতিটি দেশ তাদের কার্বন নিঃসরণের হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপায় ও পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে যা রাষ্ট্রপ্রধানরা স্বাক্ষর করবেন অনুষ্ঠিতব্য প্যারিস সম্মেলনে। যদিও উন্নত দেশগুলো এই ধরণের পরিকল্পনার ব্যাপারে মুখে বললেও কাজে ততোটা আগ্রহি ছিলনা তবে এবার কিছুটা আশা আমরা করতেই পারি!

সম্প্রতি সর্বোচ্চ দূষণকারী দুটি রাষ্ট্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চিন যৌথ ভাবে কার্বন নিঃসরন কমানোর ঘোষনা দিয়েছে! এই ঘোষনা থেকে এটি স্পষ্ট যে এই দুই বৃহৎ উন্নত রাষ্ট্র বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। পৃথিবীর দুষেণর জন্য শুরু থেকে দায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্প্রতি শিল্পে উন্নত এবং দূষণকারী দেশ চিন-উভয়ই যখন জলবায়ু পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে হাজির, তখন অন্যান্য দুষণকারী দেশ গুলোর জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বটে! উপরন্তু, ইউরোপিয় ইউনিয়ন কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা পরিকল্পনা করেছে তা অন্যান্য উন্নত দেশ গুলোকেও (ভারত,ব্রাজিল,জাপান,অস্ট্রেলিয়া,কানাডা) তাদের স্ব-স্ব পরিকল্পনা তৈরি করতে চাপ সৃষ্টি করেছে। যদিও এই সকল দেশ গুলো এখন অবধি এই ব্যাপারে গড়িমসি করে যাচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে-

The problem is that climate experts say [emissions reduction] almost certainly will not happen fast enough. A November report by the United Nations Environment Program concluded that in order to avoid the 3.6 degree increase, global emissions must peak within the next 10 years, going down to half of current levels by mid-century.

But the deal being drafted in Lima will not even be enacted until 2020. And the structure of the emerging deal — allowing each country to commit to what it can realistically achieve, given each nation’s domestic politics — means that the initial cuts by countries will not be as stringent as what scientists say is required.

ইতিমধ্যে ঝুকির মধ্যে থাকা দেশ গুলো, নিম্ন ভূমি বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ গুলোর জন্য এটি খুব আশাব্যাঞ্জক কোন সংবাদ নয়। কিন্তু এখনও আশা শেষ হয়ে যায়নি!

বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে হলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পরিকল্পনা নেয়ার এখনই সময়। “সময়ের এক ফোড়,অসময়ের দশ ফোড়”- এই বাংলা প্রবাদটা উন্নত দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা জানেন কিনা জানিনা তবে আমরাই সম্ভবত সেই প্রজন্ম যারা ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারি, আমাদের আগামি প্রজন্মের জন্য। হয়তো আমরা এখনও সেই পথে নেই,তবে সেই পথ খুব বেশি দূরে নয়। সেই পথের খোজেই আমাদের চোখ থাকবে পেরুর লিমায়…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics