ওয়াল্ট ডিজনির তথ্যচিত্র- শিম্পাঞ্জী !

সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

ডিজনি স্টুডিও প্রতি বছর একটি করে তথ্যচিত্র তৈরি করছে। কোনো কোনো বছর দু’টি করেও করছে। প্রতি বছর ধরিত্রী দিবসে  মুক্তি দেয়া হয় একটি করে তথ্যচিত্র। ডিজনির এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ডিজনির কাজ মানেই ক্লাসিক, হোক সেটা মুভি, এনিমেশন, ফেইরি বই, কিংবা তথ্যচিত্র!
Chimpanzee-1-252x375

এই তথ্যচিত্রের সবটুকু সময়ই আবর্তিত হয়েছে  নতুন জন্ম নেয়া একটি ছোট শিম্পাঞ্জিকে কেন্দ্র করে। সেখানে তাকে ডাকা হয় ‘অস্কার’ নামে। মোটা দাগে বলতে গেলে অস্কারের ছোট জীবনের কিছু ঘটনাবহুল চিত্র এতে স্থান পেয়েছে। এই হিসেবে একে নায়ক বলা যেতে পারে। তবে দেখতে এরকম মনে হলেও তথ্যচিত্রটি তার নামকরণের সার্থকতা বজায় রেখেছে। এই তথ্যচিত্রে ওঠে এসেছে শিম্পাঞ্জিদের জীবন, চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া, ভয়, আক্রমণ, সংগ্রাম করে টিকে থাকা, বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে নিজের শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই তথ্যচিত্রে শিম্পাঞ্জীদের জীবনের অনেকখানিই ওঠে এসেছে। স্থান পেয়েছে শিম্পাঞ্জীদের দুঃখ কষ্ট সহ অন্যান্য অনুভূতির দিকগুলো। ব্যাপারটা এরকম, অস্কার নামের শিশু শিম্পাঞ্জীর জীবনের চারিদিকে চোখ ফেলে ফেলেই যেন শিম্পাঞ্জী সমাজের পুরো ব্যাপারটা তুলে আনা হয়েছে।

সকল কাজেই অস্কার তার মায়ের উপর  পুরোপুরি নির্ভরশীল। প্রধান কাজ খাওয়া দাওয়া। স্বাভাবিক নিয়মে মা-ই করে দিতো সেই খাবারের ব্যবস্থা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বিপদে সতর্কতা, আত্মরক্ষা এইসব দায়িত্ব মা তার প্রশস্ত কাঁধে নিয়ে নিতো। শিম্পাঞ্জীদের এলাকা নির্ধারিত থাকে। এক এলাকার শিম্পাঞ্জী অন্য শিম্পাঞ্জীদের এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। করলে যদি দেখে তাহলে লেগে যায় তুমুল লড়াই। আইন যেমন আছে, আইনের বরখেলাপও আছে। নানা প্রয়োজনেই আইন ভঙ্গ করে শিম্পাঞ্জীরা। হতে পারে সেটা খাবার সন্ধানের জন্য, খাবার চুরি করার জন্য, খাবার ছিনিয়ে আনার জন্য। তেমনই একদিন আসলো বিপদ, পাশের অঞ্চল থেকে বিপক্ষ শিম্পাঞ্জীদল এসে আক্রমণ করলো অস্কারদের দলে। দৌড়াদৌড়ি হুড়োহুড়ি করে কেও পালাতে পারলো, কেও পারলো না। না পেরে ব্যর্থ হয়ে যাবার দলে আছে অস্কারের মা ‘ইশা’। বিপদ শেষে অস্কার বসে আছে অস্কারের মায়ের জন্য, অপেক্ষা করছে। সে অসহায় সবকিছুতেই তার মায়ের প্রয়োজন। কিন্তু একদম ছোট অস্কারের মা মারা গেছেন আর কখনোই ফিরে আসবেন না, এটা অস্কার জানে না।
compressed-1-500x281

অস্কারের জীবন হুমকিতে। অপেক্ষা করে করে একসময় সে তার মায়ের আশা ছেড়ে দিয়েছে। এবং চাইছে অন্য কাওকে মা হিসেবে পেতে। কিন্তু কেউই তাকে সন্তান হিসেবে নেয় না। প্রায় সবারই সন্তান আছে, কেও তাকে খাবার দেয় না। হাত বাড়িয়ে কিছু নিলে তাড়িয়ে দেয়। এই অবস্থায় অক্ষম অস্কারের জীবন আসলেই সঙ্কটে পড়ে যায়। এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে দেবতার মত অপ্রত্যাশিতভাবে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায় দলপতি ‘ফ্রেডি’। ফ্রেডি তাকে মায়ের আদরে লালন করতে থাকে।

যারা তথ্যচিত্রটির ভিডিও করছিলেন তাদের ভাষাতেই- এটি ছিল অসাধারণ একটি ঘটনা। এতে আমাদের মাঝে একধরণের আশার সৃষ্টি হয়। এমনটা না হলে আমরা পুরোপুরিই হতাশ হয়ে যেতাম। বিপদের মুহূর্তে অস্কারের বেঁচে থাকার যে অসাধারণ চেষ্টা তা দেখলে দারুণ লাগে।

এই ঘটনাটি তথ্যচিত্রের মূল কথা নয়। প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিকূলতা, এদের মাঝে নিজেদের খাপ খাইয়ে চলার যে চিত্র এখানে চিত্রায়িত হয়েছে তা এক কথায় অসাধারণ।

এই তথ্যচিত্রের আরেকটা ছোট দিক দেখা যাবে একদম শেষে। এই তথ্যচিত্র তৈরিতে কর্মীদের কী কী শ্রম দিতে হয়েছে, কেমন ধরণের অসুবিধার শিকার হতে হয়েছে, জীবন বিসর্জন দেবার মত কত কত বিপদ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সর্বোপরি বৈরি পরিবেশে শুটিং করা বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। এবং মানুষের ভাষা বুঝতে অক্ষম শিম্পাঞ্জীদের উপযুক্ত চিত্র ধারণ করা আরও চ্যালেঞ্জ, এরা তো এক জায়গায় স্থির থাকে না! এমন একটি উপভোগ্য তথ্যচিত্র দেখলে এই ক্যামেরার পেছনের মানুষদের প্রতিও শ্রদ্ধা জাগে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics