বৃষ্টি নাকি মাটির ঘ্রাণ !!

সিফাত তাহজিবা 

শহর জীবনের অসহ্যকর গরমের পর একটু স্বস্তির পরশ নিয়ে আসে বৃষ্টি! বৃষ্টিতে ভিজতে কার না ভাল লাগে, অনেকেই আবার শৈশবকালের দুরন্তপনায় ফিরে যান!!

এই বৃষ্টির প্রেমে পরে কত কবি কত কবিতাই না লিখল!বাংলা মায়ের বৃষ্টিস্নাত রুপে আর মাটির তীব্র ঘ্রাণে কতো কবিতা, গান আর সাহিত্য রচিত হলো!! তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের রাজত্য যে সবখানে, এরকম সুন্দর একটি বিষয়ে থাবা দিতে ভুলে যায়নি !

এক পশলা বৃষ্টি বা ঝুম বৃষ্টির পর পিচ ঢালা পথ ধরে হেটে চলার সময় কিংবা বাড়ির উঠোনে কিংবা খেলার মাঠে এক ধরণের ঘ্রাণ পেয়ে থাকেন,খেয়াল করে দেখেছেন কি? ?

বেশিরভাগ মানুষই একে বৃষ্টির গন্ধ বা ‘ Scent of rain’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেই প্রাচীন গ্রীকদের আমলেই বৃষ্টির এ রকমের গন্ধের কারণ অনুসন্ধান করা শুরু হয়।

তবে এটির একটি নামও আছে ‘Petrichor’ অর্থ হলো বৃষ্টিস্নাত মাটির ঘ্রাণ !! শব্দটি ১৯৬৪ সালে দু’জন অস্ট্রেলীয়ান গবেষক বীয়ার এবং থমাস  ‘NATURE’ সাময়িক পত্রিকায় তাদের একটি প্রবন্ধে প্রবর্তন করেন।

মাটির এমন সোঁদা ঘ্রাণের কারণ হিসেবে বলা হয়, গন্ধের উৎস হলো গাছ বা বৃক্ষ শুষ্ক মাটিতে মূলের সাহায্যে এক ধরনের তেল নিঃসরণ করে, যা মৃত্তিকা মূলত কাদামাটি শোষন করে নেয়!Scent of rain

বৃষ্টির সময় এই তেল জিওসমিন(Geosmin) নামক যৌগর সাথে বাতাসে বের হয়,  Geosmin  হলো কিছুটা উষ্ণ স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বসবাসকারী এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার (Actinobacteria) বিপাকীয় উপজাত।

মাটিতে যখন বৃষ্টির ফোটা পরে এই জিওসমিন যৌগ ছোট ছোট কণা আকারে নির্গত হয়,বাতাসের সাহায্যে এই কণা আমাদের নাকের নাসারন্ধ্রে আসতেই আমরা ঘ্রাণ পাই!! যা আমাদের এই বুড়ো বয়সেও সেই ছেলে বেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় বা আমরা কবি হয়ে যাই।

গবেষণায় জানা গেছে, এই জিওসমিন আবার বীজের অংকুরোদগম এবং গাছের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। অন্যদিকে আরও একটি কারণ রয়েছে  বৃষ্টির পর মাটি থেকে গন্ধ পাওয়ার, তা হলো মাটির অম্লতা (Acidity Of soil)!

শহরে বা গ্রামে বাতাসে ভেসে বেড়াছে অসংখ্য রাসায়নিক পদার্থ, যা বিভিন্ন কল-কারখানা,যানবাহন থেকে নির্গত হয়, বৃষ্টির পানির সাথে এগুলো মাটিতে থাকা জৈব যৌগর সাথে বিক্রিয়া করে, একে সুগন্ধি বিক্রিয়া (Aromatic reaction) বলে, অনেক সময় মাটিতে থাকা খনিজের সাথেও বিক্রিয়া করে এবং খুবই অপ্রীতিকর গন্ধের উদ্ভব হয়।

বৃষ্টির পর মৃত্তিকার ঘ্রাণের এগুলো হলো প্রধান কয়েকটি কারণ। এছাড়া ,আরও একটি কারণ হলো, যখন বজ্রঝড় হয়, বজ্রপাত বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনকে আলাদা করে ফেলে যেগুলো আবার পুনর্মিলিত হয়ে নাইট্রিক এসিড তৈরি করে,যেটি বাতাসের অন্য রাসায়নিক যৌগগুলোর সাথে মিলে ওজোন গঠন করে যার ক্লোরিনের মতনই তীক্ষ্ণ গন্ধ রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics