প্রাণী কুরবানির পাশাপাশি পরিস্কার রাখি পরিবেশ; এটাই তো আসল কুরবানি

ঈদুল আজহায় আমরা পশু কোরবানি দিই। কোরবানির মাধ্যমে মূলত আমরা আমাদের কু-প্রবৃত্তিকেই হত্যা করি। ছেড়ে আসি লোভ, নীচতা আর শঠতাকে। আসুন, কোরবানি দিই আমাদের পাপাত্মাকে। একমনে এক বিশ্বাসে কোরবানির মাহাত্ম্য উপলব্ধির মাধ্যমে উৎসব পালন করি চেতনার প্রকৃত বিশ্বাসে। কিন্তু সামান্য অসাবধানতায় ঘটে নানা বিপত্তি। যেমন,
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠে বুক ভরে শীতল বাতাস নেন শমসের আলী। এটা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। ঈদের পরদিন ঘুম থেকে উঠে অভ্যাসমতো জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। কিন্তু মুক্ত শীতল হাওয়ার সেই ঘ্রাণ আর পেলেন না। জানালা খুলতেই হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ল বিকট দুর্গন্ধ। সাত-সকালে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে নিশ্চয় আপনারও ভালো লাগবে না। মেজাজ খিঁচিয়ে উঠবে। কিন্তু তা কি আমাদের কাম্য? qurbani waste management
দুর্গন্ধময় এমন পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কিন্তু আমরাই দায়ী। কোরবানির দিন মহাউল্লাসে পশু জবাই করে আমরা ভূরিভোজন করি। কিন্তু একটুও খেয়ালও করি না কোরবানির রক্ত-বর্জ্য কোথায় পড়ে থাকল। এমনটি তো মোটেও হওয়ার কথা নয়। কারণ, ধর্মেই বলা আছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। কিন্তু কোরবানির দিন পশু কোরবানি দেওয়ার সঙ্গে আমরা মনে হয় আমাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেও কোরবানি দিয়ে দিই। তাই আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। শুধু আনন্দ-উল্লাস করে ঈদের উৎসব পালন করলেই চলবে না, তার সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে। নিজের পরিবেশ কোরবানির উচ্ছিষ্ট থেকে পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই। আর এ কাজটা খুব কঠিন কিছু নয়। কিন্তু আমরা কি তা করি? নিজেদের সৃষ্টি করা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব চাপিয়ে দিই সিটি কর্পরেশনের কাঁধে। কোরবানির উচ্ছিষ্ট আর গন্ধ থেকে বাঁচতে আর অন্যদের বাঁচাতে দরকার একটু সচেতনতা আর একটু সদিচ্ছা।
কয়েকটি টিপস_
১ কোরবানির দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, এমন একটি জায়গা বেছে নিন। সেখানেই পশুটি জবাই করুন।
২ পাশেই ছোটখাটো একটা গর্ত করে নিন, যাতে পশু জবাইয়ের পর রক্ত ওই গর্তে গিয়ে জমা হয় এবং পরে মাটিচাপা দেওয়া যায়।
৩ মাংস সংগ্রহ করার পর যে হাড়-হাড্ডি এবং নাড়িভুঁড়ি উচ্ছিষ্ট হিসেবে বের হবে, তা আরেকটি গর্ত করে পুঁতে ফেলুন।
৪ ইচ্ছা করলে পশুর হাড় সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কারণ, এসব আমাদের সার এবং কাগজ শিল্পের মস্ত বড় কাঁচামাল।
৫ কোরবানির পশুর সব উচ্ছিষ্ট যথাযথভাবে মাটিতে পুঁতে ফেলাই সর্বোত্তম।
ধরা যাক, সারাদেশে হাজার হাজার পশু জবাই হলো। কিন্তু কেউ রক্ত, হাড়-হাড্ডি পরিষ্কার করল না কিংবা উচ্ছিষ্ট পরিষ্কার করল না, তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে? আকাশ-বাতাস দুর্গন্ধে ভরে উঠবে, যা কল্পনা করাও মুশকিল। আসুন, নিজের পরিবেশ আমরা নিজেরাই সুন্দর রাখি। পরিবেশ দূষণ রোধে সবাই একসঙ্গে কাজ করি। এর ফলে নিজের জীবন যেমন ঝুঁকিমুক্ত থাকবে, তেমনি রক্ষা পাবে পরিবেশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics