আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আরো ইতিবাচক সাড়া প্রদানের আহ্বান নাগরিক সমাজের

আজ ঢাকায় পাঁচটি অধিকারভিত্তিক ও জলবায়ু বিষয়ক নেটওয়ার্কের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানানো হয়, জাতিসংঘের জলবায়ু সামিটের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী যেন জলবায়ু তাড়িত উদ্বাস্তুদের অধিকার এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের আহ্বানে এ জলবায়ু সামিট অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিরবতার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, এ ধরনের আন্তর্জাতিক সামিটে প্রধানমন্ত্রীর তথা দেশের অবস্থান গ্রহণের ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের আরও ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাপা (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন), বিপনেটসিসিবিডি (বাংলাদেশ ইনডেজিনাস পিপলস নেটওয়ার্ক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড বায়োডাইভার্সিটি), সিসিডিএফ (ক্লাইমেট চেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম), ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড এন্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক), সিএসআরএল (ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুড) এবং ইক্যুইটিবিডি (ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশ)।

ইক্যুইটিবিডি’র প্রধান সঞ্চালক রেজাউল করিম চৌধুরী’র সঞ্চালনায় পরিচালিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন ইক্যুইটিবিডি’র সচিবালয় সমন্বয়ক সৈয়দ আমিনুল হক। একই সংগঠনের মোস্তফা কামাল আকন্দ সূচনা বক্তব্য রাখেন। আমন্ত্রিত বক্তারা হলেন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল এবং হিউম্যানিটি ওয়াচ/ ক্লিন-এর হাসান মেহেদী।

BAPA CSRL CLEAN EQUITYBD
আয়োজকদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত মূল বক্তব্যে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন সৈয়দ আমিনুল হক। সেগুলো হচ্ছে: (১) গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে ধনী দেশগুলোকে ঐতিহাসিক দায় স্বীকারের পাশাপাশি তা হ্রাসের বাস্তব প্রতিশ্রুতি দিতে হবে; (২) গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাস করার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোকে আইনী বাধ্যবাধকতার কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে; (৩) জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানান্তরিত জনগোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক প্রোটোকলের আওতায় আনতে হবে; (৪) সবুজ জলবায়ু তহবিলের ৫০% অভিযোজন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ এবং তাতে স্বল্পোন্নত দেশের সহজ প্রবশাধিকার; এবং (৫) প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পূরনের জন্য অভিযোজন কর্মসুচির বাইরেও অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বর্তমান নিস্পৃহ ভূমিকার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডা. আব্দুল মতিন তার বক্তব্যে বলেন, অতীতে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ যে বলিষ্ঠ ভূমিকা ও নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ অনেক অবদান রেখেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বিশেষ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আর সক্রিয় ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে যাতে বাংলাদেশের অবস্থান গ্রহণে সকলের অংশগ্রহণ থাকে।

উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের আমিনুর রসুল বাবুল বলেন, অতীতের জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর গণমুখী অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি এবারও প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি বাংলাদেশের মত জলবায়ু তাড়িত দেশের বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু মানুষের অধিকার ও দ্রুত অর্থছাড়ের ব্যাপারে কথা বলবেন।

ক্লিন-এর হাসান মেহেদী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯৫ লাখ মানুষ উদ্বাস্ত হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। ভারত তাদের আশ্রয় ও খাদ্য দেবার জন্য জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সাহায্য দাবি করেছিল। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ যে জলবায়ুর কারণে উদ্বাস্তু হবে, তাদের কিভাবে ভরণপোষণ করবে এই গরিব দেশ?

ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের উপকূল ও অন্যান্য এলাকা হতে প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে উদ্বাস্তু হয়ে পাড়ি জমাচ্ছে। ঢাকায় লোকসংখ্যার ঘনত্ব ইতিমধ্যে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই বাড়তি মানুষ কোথায় জায়গা পাবে? তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের একার পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব না। তাছাড়া এটা ন্যায্যও নয়, কারণ বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই সমস্যার জন্য দায়ী বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics