“ঘন্টি কলমি” : নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ পেল বাংলাদেশ!

এনভায়রনমেন্টমুভ ডেস্ক

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষের (২০০৮) তথ্য মতে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কলমি পরিবারের মোট ৫৫ টি প্রজাতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ তালিকায় যোগ হল নতুন আরেকটি কলমি ফুলের প্রজাতি। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি  সৌরভ মাহমুদের এ সংক্রান্ত  একটি গবেষণা প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ট্রপিক্যাল প্লান্ট রির্সাস’ এর ২০১৬ সালের প্রথম সংখ্যায়।

সৌরভ মাহমুদ জানান; পৃথিবীতে কলমি পরিবারের (Convulvulaceae) প্রায় ১৫০০ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এ সকল লতা ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ ছড়িয়ে আছে আমাদের ছয় মহাদেশের নানান প্রান্তে। বাদ পড়েছে কেবল এন্টর্কটিকা!

79b6e203-b2cb-4313-8107-815a3cc00381

তিনি জানান ২০১৫ সালের নভেম্বর  মাসে বুনো কলমি লতা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ঢাকার হাতিরঝিল ও বনানী লেকের কাছে একটি প্রাকৃতিক পরিত্যাক্ত জায়গাতে এ লতাটি প্রথম দেখতে পান । তিন প্রজাতির লতার (হলুদ কলমি, তেলকুচা, টিনোসপোরা) সাথে এই লতাটি একই জায়গাতে ছিলো। হঠাৎ দেখা ঐ লতাটিতে ছোট্ট ও ঘন্টা আকৃতির গোলপী বর্ণের ফুল ধরেছিল। বেশ অনেকখানি জায়গা জুড়ে শাখা প্রশাখা সহ বিস্তার করেছিলো লতাটি।তিনি লতাটির বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে ফুলের গঠন গবেষণা করে ও মাপ-ঝোক নিয়ে ভারতীয় কয়েকজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীর  কাছে ছবিসহ পাঠান। তাঁরা এটি সনাক্ত করে দেন Ipomoea triloba  হিসেবে।

61047e79-c974-4106-9827-9101c07f8d80

লতাটি নিয়ে জার্নালে প্রকাশিত তথ্যমতে- এটি একটি বর্ষজীবী লতা। লতা ১-৩ মিটর লম্বা ও  ১.৫-৩ মিলিমিটার চওড়া। লতাটির পাতার আকৃতি দেখতে পান পাতার মতো, দৈর্ঘ্য প্রায় ৫.৬ সেন্টিমিটার। একটি মঞ্জুরীতে একাধিক ফুল থাকে।  ফুল ফোঁটে সকালে। দুপুরের আগে পাপড়ি বন্ধ হয়ে যায়। বৃতি পাঁচটি, অসমান, দৈর্ঘ্য ৮-১০ মিলিমিটার। দল ৫টি, যুক্ত ও ঘন্টা আকৃতির। দৈর্ঘ্য ২০-২২ মিলিমিটার। পুংকেশর ৫টি, দৈর্ঘ্য ৮ মিলিমিটার। ফল ৬-৮ মিলিমিটার চওড়া, ৪ বীজী।  বীজের দৈর্ঘ্য ৩ মিলিমিটার, মসৃন, রঙ চকলেট  বাদামী। ফুল ফোঁটা শুরু হয় সেপ্টেম্বর মাসে। ফল পরিপক্ক হলে বহিত্বক ফেঁটে বীজ; লতার ঝোপের চারদিকে ছড়িয়ে পরে। মাটিতে জলের ছোঁয়া পেলে চারা গজায়।

109d9cc3-b03a-4bce-b329-af19ab0ccda0

তিনি জানান  বীজ সংগ্রহ করে বাড়িতে টবে লাগিয়ে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চারা গজিয়েছে । কয়েকটি চারা ঢাকা’র রমনা পার্কে এবং কার্জন হলের বাগানে রোপণের ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। বিশ্বে এটি Little Bell, Little bell morning glory, Pink convolvulus হিসেবে পরিচিত। বাংলা নাম রাখা যেতে পারে ঘন্টি কলমি। বিশিষ্ট প্রকৃতিবীদ অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা ও আবিষ্কারক সৌরভ মাহমুদ যৌথভাবে এ নামটি রেখেছেন।

4f6979fd-50ed-4c54-af53-5c00fc0ff756

ফুল না আসলে এ লতাটি অন্য লতার প্রজাতি থেকে সহজে পৃথক করা যায় না। সাধারণত আদ্র ও আলো-ছায়াময় জায়গাতে এটি ভালো জন্মে। ভারতের কেরেলা, কর্নটাক, মুম্বাই, গুজরাট ও পশ্চিমবঙ্গে এটি প্রকৃতিক পরিবেশে জন্মে। তাছাড়া নেপাল, মায়ানমার, আফ্রিকা ও  চীনে এটি আছে। শোভা বর্ধনকারী ফুল হিসেবে এটি বাড়ির আঙ্গিনায় ও বাগানে লাগানো যেতে পারে। কিউবাতে এটির  মধু উৎপাদনকারী ফুল হিসেবে সুখ্যাতি ছড়িয়েছে।

সৌরভ মাহমুদ পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ে লেখালেখি করছেন একযুগেরও বেশি সময় ধরে। প্রকৃতি সংরক্ষণে বিশেষ করে পাখি, উদ্ভিদ সংরক্ষণে  গবেষণা ও কাজ করছেন গত ছয় বছর ধরে।  তিনি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও তরুপল্লবের  সদস্য। উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এম এস সি করার পর  পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে এম এস করছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যলয়ে। তাছাড়া পরিবেশ ও  জীববৈচিত্র্য বিষয়ে কাজ করছেন সিইজিআইএস’তে । পাখি নিয়ে তাঁর  গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে।

11037469_1079645068719463_3163165204528239171_n
সৌরভ মাহমুদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics