সিলেটে ব্যাঙ রক্ষায় প্রাধিকার'র দিনব্যাপী আয়োজন সম্পন্ন

সিলেট থেকে মঞ্জুর কাদেরঃ খাদ্যচক্রের অন্যতম ব্যাঙ পরিবেশের নির্দেশকও। যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিদ ড. রাসেল গ্রান্ট ইটালিতে একটি লেকের পাড়ে গবেষণার জন্য ঘাঁটি গাড়লেন। তাঁর দেখবার বিষয় ভূমিকম্পে কি ধরণের আচরণ করে প্রাণীকুল৷ বিশেষ করে ব্যাঙ৷ এই এলাকাতে মাঝে মাঝেই ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ গবেষক হয়তো বেশ সফল৷ কারণ তাঁর এই গবেষণার ২৯ দিনের মাথায় ইটালিতে হলো ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প৷ এর আগে গবেষক বেশ কিছু কুনো ব্যাঙের গায়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিশেষ সংকেতযুক্ত যন্ত্র৷ ভূমিকম্পটি হয় ৬ এপ্রিল৷ এর ছ সাতদিন আগে থেকে আজব আচরণ শুরু করে গবেষকের ব্যাঙগুলো৷ পাঁচ দিনের মাথায় নিজেদের আবাস ছাড়তে শুরু করলো তারা৷ এরপর তিনদিনের মাথায় গবেষণাস্থল সান রুফফিনো লেকের কুনো ব্যাঙ চলে গেলো অন্য কোন জায়গায়৷ কেবল যে সাধারণ কুনো ব্যাঙগুলোই ঘর ছাড়লো তাই নয়, পোয়াতি ব্যাঙগুলোও ছাড়লো ঘর৷ বিষয়টি ভাবিয়ে তুললো এই গবেষককে৷ এই ঘটনার তিন দিন পরেই হলো ভয়াবহ ভূমিকম্প৷ আবরুৎসো অঞ্চলে লাকিলা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের মারা যায় শতাধিক মানুষ৷
গবেষক গ্রান্ট জানালেন, ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে এ ধরণের আচরণ করে না কুনো ব্যাঙগুলো, যায় না ঘর ছেড়ে৷ কি এক বিশেষ সেন্সর রয়েছে কুনো ব্যাঙের৷ প্রকৃতি তাকে দিয়েছে আশ্চর্য এই ক্ষমতা৷ তিনি জানালেন, তার গবেষণাস্থলে চিহ্নিত ব্যাঙগুলো আবার ফিরে এসেছিল৷ সেটা ভূমিকম্পের আরও ছয় থেকে সাত দিন পর৷

এই যখন বাস্তবতা, তখন বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস পালনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী অধিকার ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্রাধিকার। সেভ দ্যা ফ্রগের সহযোগিতায় আজ সিলেট মডেল স্কুল এন্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।IMG_8585অনুষ্ঠানটি প্রধান তিনটি অংশে পরিচালিত হয়। প্রাধিকারের মানবসম্পদ সম্পাদক আব্দুল মজিদ উজ্জ্বলের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রাধিকারিয়ান ফারজানা ইয়াসমিন ও প্রাধিকারের পরিচিতিমূলক উপস্থাপনা করেন প্রাধিকারের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহরুল আলম ও যুগ্ম সম্পাদক চামেলি আক্তার। পপি।  ব্যাঙের প্রয়োজনীয়তা , ব্যাঙের হুমকি ও ব্যাঙ সংরক্ষনের উপায় নিয়ে মূল উপস্থাপনা করেন প্রাধিকারের পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি মনজুর কাদের চৌধুরী।  দ্বিতীয় অংশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে “ব্যাঙ এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণ” এর উপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রাধিকারের উপদেষ্ঠা মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডঃ মোঃ মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি এবং এনিম্যাল সায়েন্স অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ডঃ মাহবুবে ই এলাহী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইপিডিমোলজি এন্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক ড.সুমন পাল, ও সিলেট মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ আব্দুল মান্নান খান ও ডাঃ তরিকুল ইসলাম সুজা। IMG_8614বক্তারা সভায় ব্যাঙ সংরক্ষনের উপর জোর দিয়ে বলেন – “১৯৮০ সালের পরেই হারিয়ে গেছে ২০০ প্রজাতি। সাধারণত প্রতি ৫০০ বছরে হারায় একেকটি প্রজাতি কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত হারিয়ে যাওয়া প্রাণি হতে যাচ্ছে ব্যাঙ। আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ব্যাঙ। ডেঙ্গু ,গোদ রোগ,কলেরা, টাইফয়েড, এনত্রাক্স,ম্যালেরিয়ার মতো শত শত ভয়ংকর রোগকে নিয়ন্ত্রন করছে। আমরাই পরিবেশ দূষণ ,তাদের আবাস্থল ধ্বংস , রোড কিলিং , শিশুদের ইট-পাটকেল ছোড়া ,কীটনাশক ব্যবহার, খাবার হিসেবে ব্যাঙের পা রপ্তানি কিংবা পরীক্ষাগারে ব্যাঙ কেটে মেরে ফেলছি লাখ লাখ ব্যাঙ। বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে ১৯৮৮-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সোনাব্যাঙ (Hoplobatrachus tigerinus) রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ প্রায় ২.৬ কোটি মার্কিন ডলার অর্জন করেছে। কিন্তু এ সময়গুলোতে ফসলে বিভিন্ন পোকার আক্রমণে আমরা হারিয়েছি কোটি কোটি ডলার। শুধু প্রকৃতির নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্যাঙের উপকারিতা না বুঝে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

“আমরা যেভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক বা বিভিন্ন মশা-মাছি মারার কয়েল, কিংবা এরোসল স্প্রের প্রতি নির্ভর হয়ে পড়ছি এতে করে পরিবেশের পাশাপাশি আমাদের শরীরও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ব্যাঙ’র মত উভচর প্রাণিগুলোকে সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক উপায়ে এসব বিভিন্ন কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাখা।এ জন্যই ভিত্তি স্তর থেকে সচেতনতা গড়ার জন্য আমাদের এ প্রয়াস।”বলেন প্রাধিকারের সভাপতি আকাশ খাসনবিশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics