কৃষকের স্বস্তি ; দেশের সুনাম

কে এম ইসমাম

আশির দশক থেকে বাংলাদেশের কৃষকরা স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনের জন্য গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে আসছে, এতে করে উৎপাদনে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হলেও পরিনাম স্বরূপ কৃষকদের ভুগতে হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী পিঠ ব্যাথায়।জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের জন্য কৃষকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা নুয়ে থাকতে হয় যা তাঁদের পিঠ ব্যাথার মূল কারণ। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর একটি আবিস্কার কৃষকদের এ সমস্যা সমাধানে আশার বাণী শোনাচ্ছে। ইঞ্জেকটর ধরনের এই যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করা সম্ভব।

প্লাস্টিকের তৈরি ১.৫ কেজি ওজোনের যন্ত্রটির উদ্ভাবক বিজ্ঞানী আবদুল ওয়াহাব জানালেন এটির সাহায্যে ৬০ টির মতো গুটি ইউরিয়া ব্লক ১০ একক বিশিষ্ট ধানক্ষেতে এক ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োগ করা যায়। জনাব ওয়াহাব কৃষি প্রকৌশল কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে আইএফডিসি’র(IFDC) লিয়েন কার্যালয়ে কর্মরত। বারি( BARI) থেকে তাঁকে সেখানে পাঠানো হয়। গত বছর রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (RFL) কারখানায় তিনি এ যন্ত্রটি বানান।fr255

যন্ত্রটি হালকা এবং সহজেই ব্যবহার করা জায়,এতি অত্যন্ত সস্তা, ৪৫০ টাকা মাত্র।আগে ১০ একর জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগতো কিন্তু এখন তা এক ঘণ্টায় সম্পন্ন করা যায়। জুলফিকার আলী নামক একজন কৃষক যন্ত্রটি ব্যবহার করে এভাবেই তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইএফডিসি’র একজন কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন ” অন্যান্য সারের তুলনায় গুটি ইউরিয়াকে ৭-১০ ইঞ্চি মাটির গভীরে প্রবেশ করাতে হয় এবং এটি মাটিতে ৯০ শতাংশ নাইট্রোজেনের যোগান দিতে পারে যা সাধারণ প্রয়োগকৃত ইউরিয়ার দিগুণ। গুটি ইউরিয়া বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন, এটি ইউরিয়ার চাহিদা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করেছে এরই সাথে উৎপাদন বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আইএফডিসি এবং ইউএসএইড এর আগে যৌথ বিনিয়োগে বুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই ধরনের যন্ত্র আবিস্কারের চেষ্টা চালায় এবং ইঞ্জেকটর ধরনের যন্ত্র আবিস্কার করে এছাড়া বারি(BARI) এবং (BRRI) পুশ টাইপ একটি যন্ত্র আবিস্কার করে। তবে এগুলো কৃষক বান্ধব ছিলোনা। এরপরে আইএফডিসি জনাব ওয়াহাব কে যন্ত্রটি এই দায়িত্ব দেয়। তিনি আর এফ এল’এর (RFL) কিছু প্রকৌশলীদের সাথে নিয়ে মাত্র চার মাসের গবেষণায় যন্ত্রটি আবিস্কার করেন। fr355

এ বছরের শুরুতে আফ্রিকান একটি প্রতিনিধিদল যন্ত্রটি দেখে উৎসুক হোন এবং ১০ টি যন্ত্র সেনেগালে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে যান। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যন্ত্রটি দেখেন এবং এটির প্রশংসা করেন। আরএফএল প্লাস্টিকের অপারেশন ম্যানেজার লোকমান হাকিম বলেন, তাঁরা ইতোমধ্যে ২০০০ টি যন্ত্র বিক্রি করতে সমর্থ হয়েছেন এবং তাঁরা আশাবাদী আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁরা বিশ হাজার যন্ত্র বিক্রি করতে পারবেন। যন্ত্রটি বর্তমানে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কোন প্রকার লাভ না করেই। তাঁরা ইতোমধ্যে কেনিয়ায় ১০০ টি , দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০ টি এবং নাইজেরিয়ায় ১০ টি যন্ত্র রপ্তানি করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি আশাবাদী যন্ত্রটি স্থানীয় এবং বৈশ্বিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা পাবে।

সূত্রঃ ডেইলি স্টার,

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics