১১টি ইটভাটাই অবৈধ!

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ১১টি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ভাটায় পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি এবং কয়লার পরিবর্তে চারাগাছ জ্বালিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্যমতে, বিভিন্ন পর্যায়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ভাটামালিকেরা অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরুর দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভাটাগুলোয় অভিযান চালান। তারপর বছরজুড়ে আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। এলাকাবাসীর এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে মাটিরাঙ্গার ইউএনও শহিদ মোহামঞ্চদ সাইদুল হক বলেন, বেআইনি কাজ থেকে বিরত রাখতে স্থানীয় প্রশাসন সব সময় তৎপর। bandarban-sm20130223020201
ইউএনও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন ভাটা নির্মাণের ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আমরা বিশেষ বিবেচনায় পুরোনো ভাটায় সীমিত পরিসরে ইট তৈরির অনুমতি দিই। কারণ, জেলায় অবকাঠামো নির্মাণে প্রচুর ইটের দরকার হয়।’ তিনি বলেন, এই সুযোগে কোনো কোনো অসাধু ভাটামালিক পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে মাটি সংগ্রহ এবং চারাগাছ পোড়ানোসহ নানা অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়েন। তাই মাঝে মাঝে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা যায়, নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা দিতে হয় ভাটামালিকদের। এ প্রসঙ্গে মাটিরাঙ্গার ভাটামালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসা করে যদি লাভ হয়, তাহলে পয়সা দিতে ক্ষতি কোথায়। আর অবৈধ লেনদেনের বিষয়টি এখন অনেকটাই খোলামেলা।’ তিনি জানান, মাটিরাঙ্গার ১১টি ইটভাটাই অবৈধ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সবগুলো ভাটাতেই গাছ জ্বালিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া মাটিরাঙ্গার ওয়াচু মৌজায় ‘সেলিম ব্রিকস’ ও হাফছড়ি ইউনিয়নের জালিয়াপাড়ায় ‘ফোর স্টার ব্রিকস’ পাহাড় কেটে বনের ভেতর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘ফোর স্টার ব্রিকস’ নামের ভাটাটি নতুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, ‘ফোর স্টার ব্রিকসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেলিম ব্রিকসের বিষয়েও খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি তারাও পাহাড় কেটেছে। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাসুদ করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘খাগড়াছড়ির সবগুলো ইটভাটাই অবৈধ। একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কোনো ছাড়পত্র নেই। তাই ভাটাগুলো বন্ধে ইউএনওদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মো. মনজুর মোরশেদ এবং হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উষাপ্রু মারমা বলেন, অবৈধ এসব ইটভাটায় চারাগাছ পুড়িয়ে বনভূমি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি ফসলি জমির মাটি ও পাহাড় কেটে ভাটায় ব্যবহার করায় এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন হুমকির মুখে।
খাগড়াছড়ি জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এটা ঠিক পার্বত্য চট্টগ্রামে ইটভাটা তৈরিতে সরকারি অনুমতি নেই। কিন্তু পাশাপাশি মনে রাখতে হবে আমরা প্রতিটি ইটভাটার জন্য ভ্যাট বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) বাবদ দুই লাখ ৪৮ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিই। এর বাইরে জমির উন্নয়ন ও পৌরকরসহ আরও কয়েকটি খাত মিলিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ব্যবসা করছি। আমরা সরকারকে আয়করও দিই।’

সূত্রঃ প্রথম আলো, ০৪,০৪,২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics