সবুজ অভিধানঃ কার্বন ক্রেডিট – Carbon Credit ( পর্ব- ১)

সিফাত তাহজিবা

ল্যাটিন শব্দ ‘Carbo’(অর্থ Coal,কয়লা) থেকে Carbon(কার্বন) নামটি দেওয়া হয়েছে, পর্যায় সারণীর ১৪তম গ্রুপের মৌলকে । পরিবেশ এমনকি মানবদেহের অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ উপাদান এই কার্বন। কিন্তু, কার্বনের কিছু বিষাক্ত গ্যাস এই ধরণীর জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর যা উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের শিল্প ও কলকারখানা হতে নির্গত হয়ে বায়ুমন্ডলে মিশে বৈশ্বিক উষ্ণতা সহ সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। পরিবেশের এমন বিরূপ পরিবর্তনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে সাগরে বিলীন হয়ে যেতে পারে উপকূলবর্তী দেশ,দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো!! বাংলাদেশ,ইন্ডিয়া,ভিয়েতনাম,চীন,জাপান,ইন্দোনেশিয়া,ইকুয়েডরের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে ! কার্বন ক্রেডিট  বা Carbon credit or offset – সহজভাবে বলা যায়,শিল্পন্নোত দেশগুলো তাদের গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা ঠিক রেখে অব্যাহতভাবে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করে যাবে এর বিনিময়ে উন্নয়নশীল দেশের কাছ থেকে কার্বন নিঃসরনের পরিমাণ শতকরা হারে কিনে নেবে ! অর্থাৎ, উন্নত দেশ কর্তৃক নির্গত গ্যাসের ভর কত হতে পারে তার উপর ভিত্তি করে, এবং এই পরিমাণ গ্যাস নির্গমনের ফলে উন্নয়নশীল দেশের কি পরিমাণ পরিবেশগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে কার্বনের একটি মূল্য নির্ধারণ করা, এবং সেই মূল্য উন্নত দেশ উন্নয়নশীল দেশ কে প্রদান করবে। Carbon credit or offset

এই কার্বন ক্রেডিটের উদ্ভব হয়েছে বিভন্ন সময়ে উন্নত দেশগুলোর বিতর্ক থেকে যা জানতে একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক-

United Nation Framework Convention On Climate Change বা UNFCCC ‘র অধীনে সর্বপ্রথম ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরতে ১৫৫টি দেশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়; এতে মত প্রকাশ করা হয় যে উন্নত দেশগুলোকে অন্যান্য দেশের সাথে যৌথভাবে (Joint Implementation) তাদের গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমণের পরিমাণ ২০০০ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে ! এই প্রকল্পে আর্থিক বিনিয়োগকারীদের কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য ক্রেডিট দাবি করতে অনুমতি দেওয়া হবে, কিন্তু, জি-৭৭ (G-77)ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে JI (Joint Implementation)নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয এবং বলা হয় এটি হলো শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রধান সমস্যা হিসেবে চিন্হিত গ্যাস নির্গমণ কমানো এড়ানোর একটি প্রক্রিয়া মাত্র।

১৯৯৪ সালে আনুষ্ঠিক ভাবে Joint Implementation এর বিরোধিতা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে কিয়োটো চুক্তি আবির্ভাব হলো যাতে এতে লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সুবিধা কল্পে তিন ধরণের ‘Flexible Mechanism’ বা “শিথিল ব্যবস্থাপনা”  অনুমোদন করা হয়-

১। QUELRO Trading বা বাণিজ্য

২। Joint Implementation(যুগ্ম বাস্তবায়ন)

৩। Clean Development Mechanism

সবচাইতে গুরূত্বপূর্ণ দিক হলো ৩৯টি উন্নত দেশকে ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে গ্রীন হাইস গ্যাস নির্গমণ মাত্রাকে ১৯৯২ সালের মাত্রার গড়ে ৫.২% এ কমিয়া আনার প্রতিশ্রতিবদ্ধ করা। তবে, এখন পর্যন্ত তা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। মোটের উপর ২০১৩ সালে কার্বন নির্গমনের বৈশ্বিক মাত্রা এযাবৎ কালের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে।

চলবে… 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics