বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল অবিলম্বে পুণরুদ্ধারের দাবী

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর নদী মহানগরী ঢাকারর জনস্বাস্থ্য অর্থনীতি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জীববৈচিত্রের বিশাল আধার। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল বেপরোয়া ভরাট, দখল ও দূষণের ফলে ঢাকার মানচিত্র থেকে আজ হারিয়ে যেতে চলেছে। সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি নদী রক্ষায় মহামান্য হাইকোর্ট ২০০৯ সনের ২৫ জুন ঢাকার চারপাশের নদূর সীমানা সিএস রেকর্ড অনুযায়ী আগামি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নির্ধারণের আদেশ প্রদান করেন। মহামান্য হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়েছে মাত্র, কিন্তু ঢাকার প্রাণস্বরূপ বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুণরুদ্ধারে যা কোন কাজে আসেনি। জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষায় বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল অবিলম্বে পুণরুদ্ধার করা হোক।

আজ ৩০ মে ২০১৪, সকাল ১১টায় লালবাগ শহীদ নগর বেড়িবাঁধের উপর পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)’র নেতৃত্বে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।

মানববন্ধন থেকে জানানো হয়, বন্দর সংরক্ষক হিসেবে বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকে। পবার পর্যবেক্ষণ অনুসারে একই এলাকা বার বার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ উচ্ছেদকৃত স্থান আবার ভ’মিদস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে। ভ’মিদস্যুরা নদী দখলের প্রকৃতি বদলে ফেলছে। প্রথমে কাঁচা, পরে সেমি পাকা ও পাকা স্থাপনা দ্বারা নদীগর্ভ ও তীরভ’মি দখল করা হচ্ছে। বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল/খাড়িটি বন্দর সীমার অন্তর্ভূক্ত নয় বলে সেখানে অবৈধ স্থাপনাগুলো বিআইডব্লিউটিএ-র হিসাব নেই। বাস্তবে চ্যানেলটি প্রায় সম্পূর্ণ অবৈধ দখলে চলে গেছে। ১৯৬০ সাল হতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জলাশয় ও নিন্মাঞ্চল যথাক্রমে ৩২.৫০% ও ৫২.৫০% হ্রাস পেয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন হাউজিং কোম্পানিগগুলো নিন্মাঞ্চল ভরাট করছে। একইভাবে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও নিন্মাঞ্চল ভরাট করছে। জলাশয় ও নিন্মাঞ্চল ভরাট ও দখলের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং বর্ষামৌসুমে নগরবাসী প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।1

পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, আসলাম খান, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, কৃষ্টি পরিষদ এর সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিন, নবাবগঞ্জ সমাজ কল্যাণ সংগঠন এর সাধারণ সম্পাদক মো: আলমঙ্গীর, ইসলামবাগ অর্নিবান সমাজ কল্যাণ সংস্থার সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন মোরল, নগর বাসী সংগঠন এর চেয়ারম্যান হাজী শেখ আনসার আলী, ২২ নং ওয়ার্ড নাসফ এর সভাপতি রোস্তম খান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, ২৩ নং ওয়ার্ড নাসফ এর সাধারণ সম্পাদক সেলিম আজম, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মাহবুুল হক, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ এর সভাপতি মোঃ মুষা, পবার নির্বাহী সদস্য মো: সেলিম প্রমুখ।

মানব বন্ধন থেকে যে দাবী গুলো করা হয়ঃ
১. সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের সিমানা নির্ধারণ করে স্থায়ী পিলার স্থাপন করা
২. বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে প্রদত্ত ভ’মি বরাদ্দসমূহ সরকার কর্তৃক অনতিবিলম্বে বাতিল করা
৩. ব্যাক্তি ও সংস্থার নামে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের রেকর্ডসমূহ আইন বহির্ভূত ঘোষণা করে সেগুলো বাতিল করা
৪. সকল অবৈধ দখল ও স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনাসমূহ উচ্ছেদ করা
৫. খনন করে আদি চ্যানেলের গতি প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা
৬. নদী দূষণমুক্ত করার লক্ষে পয়:বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন, গৃহস্থালী বর্জ্য পানি প্রবাহে ফেলা থেকে বিরত থাকা, ট্যানারীগলো জরুরী ভিত্তিতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন ও বর্জ্য পরিশোধন করা, শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন এবং নিয়মিত তা পরিচালণা করা, নৌযানের বর্জ্য ও তেল নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকা।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics