পরিযায়ী পাখি : কূজনে মুখর বাইক্কা বিল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন
টাওয়ারের কাছে আসতেই কানে এলো পাখিদের কিচিরমিচির! তিনদিক থেকে ছুটে আসা শত শত পাখির একত্র সুমধুর কলরব। নৌকায় বসে পাখিদের হঠাৎ একসঙ্গে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার শব্দ শরীর-মননে শিহরণ তোলে। এমন দৃশ্য পাখিদের অভয়ারণ্য বলে ঘোষিত বাইক্কা বিলের। নানা রং আর আকৃতির পরিযায়ী পাখির কূজনে এখন মুখর দেশের সব হাওর, জলাশয়। জীবন বাঁচাতে তীব্র শীতের দেশের আবাস ছেড়ে ওরা বরাবরের মতোই কিছুদিনের জন্য এসেছে। ওদেরকে কেউ কেউ অতিথি পাখি বলে থাকে। ইংরেজিতে বলা হয় মাইগ্রেটরি বার্ড; সঠিক বাংলা অনুবাদে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘পরিযায়ী পাখি’ শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবছর ওরা ডানায় ভর করে সারা পৃথিবী ভ্রমণ করে। শীত শেষে আবার হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে যায় নিজ আবাসে।

 পাখি গবেষক ও আলোকচিত্রী মনির আহমেদ খান বলেন, ‘এবার বাইক্কা বিলে পাখি দেখতে এসে শুধু একটি বিরল নাকতা হাঁসের দেখা পেলাম। পাতি সরালি হাঁসের দলে একা রয়েছে সে। একসময় এরা আমাদের দেশের আবাসিক পাখি ছিল। অথচ এখন এরা বিরল পরিযায়ী পাখির তালিকায় চলে এসেছে। পাখিটি কিছুদিন অবস্থান করে ফিরে যাবে সাইবেরিয়ায়। হাঁসটি সর্বশেষ ২০১১ সালে বাইক্কা বিলে দেখা গিয়েছিল।’ মনির আহমেদ খান আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাইক্কা বিলের রাস্তার দুইধারে যেভাবে প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস করে মাটি খুঁড়ে কৃত্রিম মাছের খামার করা হচ্ছে তাতে এই বিলের জীববৈচিত্র্য অচিরেই মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।’Sreemangal Pic_Migratory bird 1

 বন্য প্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী তানিয়া খান বলেন, ‘বড় গুটিঈগল, পালাসের কুরাঈগল, ছোট সরালি, বড় সরালি (রাজ সরালি), উত্তুরে ল্যাঞ্জা হাঁস, উত্তুরে খুণ্ডেহাঁস, ছোট জলমুরগি, ছোট কুট, পাতারি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, কালো লেজ জৌরালি, কালো পাখ ঠেঙ্গি (লাল ঠেঙ্গা), ছোট জিরিয়া, লাল পা, মেটে রাজহাঁস, গয়ার (সাপ পাখি), ধুপনি বক (ধূসর বক), বেগুনি বক প্রভৃতি পরিযায়ী পাখি এবার বাইক্কা বিলে চোখে পড়ল। ওরা জলাশয়ে আপন মনে খাচ্ছে আর ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

 পাখি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আগত পর্যটকদের টেলিস্কোপ দিয়ে দূরের পাখি দেখানোর কাজটি করিয়ে থাকেন মিরাস মিয়া। অভিজ্ঞতায় ভর করে তিনি অনায়াসে বলে দিতে পারেন কোন পাখির কী নাম। পাখিপ্রেমী মিরাস মিয়া জানান, ‘অন্যবারের তুলনায় এবার প্রচুর পাখি এসেছে বাইক্কা বিলে। মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এই পাখিগুলো দেখা যাবে।’

 আশঙ্কার বিষয় হলো, বাইক্কা বিলের অতিথি পাখিগুলোর দিকে রয়েছে চোরা শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টি। শ্রীমঙ্গল শহরে পরিযায়ী পাখি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গলের একজন পাখিপ্রেমী বলেন, ‘ব্যাগের ভেতরে ভরে গোপনে শ্রীমঙ্গল শহরে বাইক্কা বিলের পাখি বিক্রি করতে আমি দেখেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা না করলে এমন দিন হয়তো দূরে নয় যেদিন বাইক্কা বিলে আর কোনো অতিথি পাখির আগমন ঘটবে না।’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক লেখক,

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি, দৈনিক কালের কণ্ঠ

এবং

স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর.কম

biswajit.bapan@gmail.com

সূত্র: ২২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠের শেষের পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics