চিতা কিভাবে তার শিকার ধরে এ নিয়ে নতুন গবেষণা!!

সিরাজাম মুনির শ্রাবণ

পৃথিবীর সবচে দ্রুত গতির স্থলচর প্রাণী চিতাবাঘ কি প্রক্রিয়ায় তার শিকার ধরে তা নিয়ে সম্প্রতি এক গবেষণা হয়েছে । এর আগেও যে শিকার করার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা হয় নি তা নয় । তবে এবারের গবেষণায় কিঞ্চিৎ নতুন কিছু ফলাফল পাওয়া গেছে । আগের ফলাফলের সাথে এবারের গবেষণার মিল আছে, আছে কিছু অমিলও । chita

এই গবেষণটি প্রকাশ হয়েছে একটি বড়সড় ম্যাগাজিনে । অভিজাত বিজ্ঞান সংস্থা লন্ডনের রয়াল সোসাইটির “বায়োলজি লেটারস”এ । গবেষণাটি পরিচালনা করেন বেলফাস্টের কুইন্স ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক । শুধু তারাই না, তাদেরকে সাহায্য করেছে আরও অন্যান্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা । তাদের মাঝে ছিল এবার্ডেন ইউনিভার্সিটি, সোয়ানসি ইউনিভার্সিটি , অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জুয়োলজিকাল সোসাইটি, সহ আরও কিছু নাম ।

আগের গবেষণার ফলাফল হিসেবে ধারণা করা হত, চিতাবাঘ শুধুমাত্র তার ক্ষিপ্রতা আর দ্রুত গতিশীলতার উপর নির্ভরশীল । তার উপর ভর-বিশ্বাস করেই শিকার ধরে । চিতা প্রথমে কোনো একটি প্রাণীকে প্রতিপক্ষ হিসেবে টার্গেট করে, তারপর সেটা প্রত্যাশার যোগ্য হলে তার পিছু ছুটে । ব্যাবহার করে কিছু কৌশল এবং ক্ষমতা ।

 গবেষক দল তাদের পরীক্ষার জন্য বাঘের গায়ে ব্যাবহার করেন জিপিএস বা ট্র্যাকিং ডট । আরও ব্যাবহার করেন এসিলারোমিটার ( accelerometer, কোনো কিছুর ত্বরণ মাপা হয় যে যন্ত্র দিয়ে।  ) ।  এর সাথে সাথে পুরনো পদ্ধতিও তো ছিলই ।

Accelerometer

চিত্রে চিতার গলায় বাধা যে বাড়তি জিনিসটা দেখা যাচ্ছে সেটাই এসিলারোমিটার। একটা এসিলারোমিটারের গঠন নিচের ছবিতে দেখা যেতে পারে।

রয়াল সোসাইটির অনুদান করা এই গবেষণাতে বলা হয় — যে বিষয়টা আমরা অনুধাবন করলাম, শরীরের প্রক্রিয়া, তার সঞ্চালন প্রক্রিয়া, এবং শিকার কৌশল । এমনটা করা গেল তার নিরবিচ্ছিন্ন অবস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে । আর যেটা সবচে বেশি দেখা গেল সেটা বাঘের সহজাত প্রক্রিয়াটা । এটা জন্ম থেকেই স্বাভাবিক ভাবে পেয়ে এসেছে তারা । যেমন একটি চিতা তার শিকার ধরার জন্য প্রথমেই ঝাঁপিয়ে পড়ে না । আগে এক জায়গায় চুপ মেরে লুকিয়ে থাকে, শিকার কাছাকাছি এলে বা সুবিধামত জায়গায় এলে করে আক্রমণ ।

আরও কিছু বিশেষ গুন তাদের দুর্দান্ত গতিতে ছোটা শিকারকে ধরতে সাহায্য করে । তাদের মাঝে যেমন ব্যাপক গতির দৌড়ে হুট করে  বাক নেয়া । একটা বাঘ যখন তার শিকারের পিছু নেয় তখন একসময় দৌড়াতে দৌড়াতে শিকারের একদম বরাবর চলে আসে এবং এক সময় শরীর বাকিয়ে কামড়ে ধরে । আপাত দৃষ্টিতে এটা দেখেত সহজ দেখালেও আসলে তা সহজ না । সহজ তখনই হবে যখন স্থির থাকবে বা কম গতিতে গতিশীল থাকবে । যখন সেটা বেশি গতির তখন হুট করে বাক নেয়াটা ভয়ের ব্যাপার । খুব সহজ উদাহরণই দেখি না, ট্রেন রাস্তায় যখন বাক নেয় তখন কি হুট করেই নেয়? অল্প অল্প করে বেকে বেকে তারপর আসে । যদি হুট করে বাক বা মোর করত তবে নির্ঘাত এক্সিডেন্ট!  acce

আরেকটা ব্যাপার, যেটা সবচে বেশি আলোচিত হয়েছে সেটা বাঘের গতির দ্রুত ত্বরণ লাভ । অতি অল্প সময়ের মাঝেই বাঘের গতিবেগ তরতর করে বেড়ে যায় । ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকাটাই ত্বরণ । এই গবেষণার একজন গবেষক ড. স্কেন্টেলবুরি বলেনও তাই- আমরা দেখেছি চিতা খুবই কম সময়ের মাঝে অল্প গতি থেকে অধিক পরিমাণ গতি প্রাপ্ত হয় ।

 সবশেষে যেটা বলার প্রাণীদের তথা জীবদের মনে হয় বেধে দেয়া কোনো নিয়মে ফেলা যায় না । প্রাণীদের সামগ্রিক কার্যকলাপ একেবারে ফিজিক্সের অপরিবর্তনীয় সূত্রের মত নয় । আবারো গবেষণা হবে চিন্তা হবে । হতে পারে তখন বেরিয়ে যাবে আরও কোনো নতুন তথ্য । বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল।

#রেফারেন্স

Biology Letters publishes short, highly-innovative, cutting-edge research articles and opinion pieces accessible to scientists from across the biological sciences. The Royal Society journal is characterised by stringent peer-review, rapid publication and broad dissemination of succinct high-quality research communications.

 

সূত্র: http://www.sciencedaily.com/releases/2013/09/130905085644.htm

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics