আন্তর্জাতিক মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবসঃ ভূমি ভবিষ্যতের খোরাক; আসুন জলবায়ু রক্ষা করি

 

New Picture (4)

লিসান আসিব খান

“প্রখর রৌদ্র চারিদিকে যখন খরা

এরি মাঝে আসে জ্বলন্ত কৃষ্ণচূড়া

আর টানে তার রাধাচূড়া বারবার
ভাবে আবার আসবে কি না আসবে এই ভবে
এলেই জানে সে বিমুগ্ধ হাসে বসুন্ধরা”

New Picture (5)

বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রকৃতিকে অস্বাভাবিক বদলে দিচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের অভাব খুব মারাত্বক ভাবে অনুভুত হচ্ছে।বিগত কয়েক বছরের বন্যা,খরা,দাবদাহ,ঝড় প্রভৃতি কারণে পৃথিবীর সামগ্রিক পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতিকে আরও করুণ করে তুলেছে। বিজ্ঞানীরাও চেষ্টা চালাচ্ছেন এই প্রতিকূলতাকে জয় করে পৃথিবীতে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে। বিশালাকারে প্রাকৃতিক অবক্ষয়কে জয় করা হয়ত সম্ভব না,তবে একে একটি সাম্যাবস্থায় রাখা সম্ভব।দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষ নির্ভর যেখানে জমির উপর  সেখানে ভূমি ক্ষয় ও মরুকরণ হচ্ছে তাদের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে।

New Picture (6)

১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বিশ্ব মরুকরণ সম্মেলন আয়োজন এবং বিশ্ব মরুকরণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত কর্মসূচী উত্থাপন করে। ১৯৯২ সালে রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনের পরপর-ই মরুকরণ সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক কনভেনশন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। রিও সম্মেলনের এজেন্ডা ২১ এর  প্রস্তাবটি ১৯৯২ সালে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের ৪৭ তম অধিবেশনে গৃহীত হয় এবং ইন্টারগর্ভমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি মরুকরণ সংক্রান্ত খসড়া কনভেনশন চুড়ান্ত করে। ১৯৯৪ সালের জুন মাসে কনভেনশনের দলিল চুড়ান্ত হয়। এই কনভেনশন ৫০টি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্যকর হয়। বলা আবশ্যক যে, বাংলাদেশও এই কনভেনশন অনুমোদন করে। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি উপসাহারীয় আফ্রিকায় খরার কারণে প্রায় ত্রিশ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে।

জাতিসংঘের এক গবেষণা বলছে, ২০ বছর পর মানবজাতির যাবতীয় চাহিদা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। সে সময়ে বর্তমানের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, তখনকার চাহিদামতো প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি দেখা দিয়ে সেটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে। সেই সংকট গতি নিয়ে চলে যেতে পারে সংঘর্ষের দিকে। আর আই সংকটের একমাত্র কারণ হবে মরুকরণ ও খরা ।

New Picture (7)

New Picture (8)

এই বছর এর WDCD থিম বাস্তুতন্ত্র ভিত্তিক অভিযোজন আর তা হল –

New Picture (9)

Land Belongs to the Future – Let’s Climate Proof It

২০১৪ WDCD এর উদ্দেশ্য হল: জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে জমি ও মাটির অভিযোজন সম্পর্কে দৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করা এবং টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য সমর্থন সহজলভ্য করা । জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নীতি মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জমি ও মাটিরঅবদান অন্তর্ভুক্ত করা ।

New Picture (10)

গত কয়েক বছরে আমাদের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। আইলা-সিডরের মতো দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। গত ৫ বছর আগে বয়ে যাওয়া সিডরের আঘাতে এখনওও সে এলাকার মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এ থেকেই বোঝা যায় জলবায়ু পরিবর্তনের কাছে আমরা কতটা অসহায়। দিন দিন আমাদের বিপন্নতা বাড়বে এতে আর সন্দেহ কী। এটাও কারও অজানা নয় যে, পরিবেশ বিপর্যয়ে দায়ী উন্নত বিশ্বই। অথচ এর পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের। অকাল খরা-মরুময়তায় ছিন্ন-ভিন্নআমাদের জনজীবন। সারা বছরই আমাদের প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। শুধু আর্থিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণে ৩৯টি দেশ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোর ওপর জলবায়ু সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে প্রাকৃতিক পরিবেশ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।

খরার কালপঞ্জি অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে বাংলাদেশ এর কয়েকটি মারাত্মক খরার কালানুক্রমিক তালিকা :

New Picture (11)

  • ১৭৯১ যশোর জেলায় খরা সংঘটিত হয় এবং বিভিন্ন জিনিষপত্রের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে দুই/তিনগুণ বৃদ্ধি পায়।
  • ১৮৬৫ ঢাকায় খরার কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
  • ১৯৫১ বাংলাদেশের উত্তরপশ্চিম অঞ্চলে তীব্র খরার জন্য চাল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যাহত হয়।
  • ১৯৭৩ বর্তমান শতাব্দীর অন্যতম ব্যাপক খরা সংঘটিত হয় যা উত্তরবঙ্গে ১৯৭৪ সালের স্থানীয় দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী।
  • ১৯৭৮-৭৯ মোট আবাদি জমির প্রায় ৪২% ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাপক শস্যহানি ঘটে, চালের উৎপাদন প্রায় ২০ লক্ষ টন হ্রাস পায় এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৪% ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়।
  • ১৯৮৯ এই খরায় উত্তরপশ্চিম বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী শুকিয়ে যায় এবংনবাবগঞ্জ, নীলফামারীসহ বেশ কয়েকটি জেলার পৃষ্ঠমৃত্তিকা শুকিয়ে যাওয়ায় দীর্ঘসময় ধরে ধূলিধূসর পরিবেশ বিরাজ করে।
  • ১৯৯৪-৯৫ বাংলাদেশে সমসাময়িক কালের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী খরা, ব্যাপক শস্যহানি ঘটে।

মরুকরণ রোধে ব্যাকটেরিয়ার ব্যাবহার :

Magnus Larsson ,তিনি লন্ডনের আর্কিটেকচার এসোসিয়েশনের ছাত্র। এর জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন Bacillus    pasteurii নামক ব্যাকটেরিয়াকে। কারন এই ব্যাক্টিরিয়াবালুকেবেলেপাথরে(sandstone) রুপান্তর করতে পারে। Magnus Larsson এর প্রোপোজাল হলো- সাহারা মরুর চারদিকে স্যান্ডস্টোনের বাধ দিয়ে এর বিস্তৃতিকে ঠেকানো। তারপর সেখানে মরুদ্যান করে নেয়া।

New Picture (12)
এরকমই স্যান্ডস্টোনের তৈরির মাধ্যমে একটা বাউন্ডারী তৈরি করা সম্ভব।

এই ব্যাক্টিরিয়া খুব দ্রুত কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বালুকে জমাট বদ্ধ করতে পারে।অনেকেই ধারনা পোষন করেন, এই ব্যাক্টেরিয়াকে পিরামিড তৈরিতে পাথরের সাথে পাথরের সিমেন্টিং এজেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে।

New Picture (13)

“নমো নমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি!

গঙ্গারতীর স্নিগ্ধ সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি।

অবারিত মাঠ, গগন ললাট চুমে তব পদধূলি

ছায়া সুনিবিড় শান্তিরনীড় ছোট ছোট গ্র্রামগুলো।”

কবিগুরুর দেখা এই বঙ্গভূমির মতোই আমরা সমগ্র পৃথিবীকে দেখতে চাই।বর্তমান ও ভবিষ্যতে এটাই এখন আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের পরিবেশ বাঁচলে আমরা বাঁচব। বাঁচবে আমাদের এই ভূখন্ড-টি। প্রিয় এই দেশ, এই ধরিত্রীকে যে করেই হোক বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আগামীর অনাগত উত্তরাধিকারীদের জন্য গড়ে দিয়ে যেতে হবে স্বপ্নের মতো সুন্দর এবং নিরাপদ একটি পৃথিবী।

লেখকঃ শিক্ষার্থী , পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics