বিস্ময়কর গাড়ি!

images (4)গাড়ি যদি হয় প্রকৃতির অংশ তাহলে কেমন হয়! এমন একটি গাড়ির কথা কল্পনা করুন যে গাড়ি থেকে বের হবে না প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত গ্যাস। কারণ গাড়ি যেমন আমাদের উপকারে আসে তেমনি গাড়ি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পরিবেশ দূষণ করে। এমন একটি গাড়ি তৈরি করেছেন মার্সিডিস বেঞ্জ। তাদের পরিকল্পনাধীন পরিবেশবান্ধব ন্যানো প্রযুক্তির গাড়িটির নাম মার্সিডিস বেঞ্জ বায়োমি। বিস্ময়কর এই গাড়ির কথা লিখেছেন মোস্তাক চৌধুরী
গবেষণাগারে তৈরি গাড়ি মার্সিডিস বেঞ্জ অ্যাডভান্সড ডিজাইন স্টুডিওর প্রধান হুবার্ট লি জানিয়েছেন, বায়োমি কেবল অদূর নয় বরং দূর ভবিষ্যতের গাড়ি। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়েই গাড়িটি তৈরি করা হবে। প্রাকৃতিক হাইব্রিড ও ন্যানো প্রযুক্তির সমন্বয়ে প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরির ফলে এটি আমাদের পরিবেশেরই একটা অংশ হবে। গাছের পাতা যেভাবে জন্মায়, ঠিক সেভাবেই গবেষণাগারে গাড়িটি তৈরি হবে। মার্সিডিজের বায়োমি প্রজেক্টের গবেষকদের একজন আলব্রেথ বিনকার। তিনি উল্লেখ করেছেন এই গাড়িটি তৈরিতে জৈব রসায়নের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয়েছে। এই গাড়ির ইনটেরিয়র তৈরি হবে গাড়ির সামনের মার্সিডিস স্টার ডিএনএ থেকে এবং এক্সটেরিয়র তৈরি হবে পেছনের স্টার থেকে আর গাড়ির চাকা চারটি জন্মাবে চারটি পৃথক পৃথক বীজ থেকে। এই স্টারগুলোকে ক্রেতাদের পছন্দানুযায়ী জেনেটিক্যালি তৈরি করে দেয়া হবে। মার্সিডিস বেঞ্জ সিমবায়োসিস প্রক্রিয়ায় সূর্য থেকে শক্তি সংগ্রহ করে এবং তা রাসায়নিক বন্ধন আকারে সঞ্চয় করে। পরবর্তীতে এটি জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। এই জ্বালানির নাম বায়োনেকটার ৪৫৩৪ বলে। অর্থাৎ বায়োফাইবারের মধ্যে জমে থাকা বায়োনেকটার ৪৫৩৪ ব্যবহার করে গাড়িটি চলবে। উল্লেখ্য, এই জ্বালানির বর্জ্য হিসেবে পরিবেশের কোনো ক্ষতির উপাদান নিঃসৃত হবে না। বরং এর বদলে পরিবেশবান্ধব অক্সিজেন নির্গত হবে, যা নগরী এলাকার বায়ুর গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
মার্সিডিস বেঞ্জ বায়োমি গাড়িটি তৈরির জন্য যে বায়োফাইবার ব্যবহার করা হবে, তা প্লাস্টিক কিংবা যে কোনো ধাতুর চেয়ে অনেক হালকা কিন্তু স্টিলের চেয়ে বেশি ঘাতসহ অর্থাৎ শক্তিশালী। এর ফলে গাড়িটির ওজন হবে প্রায় ৩৯৪ কেজি। আর সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে, এই গাড়ির প্রতিটি যন্ত্রাংশ হবে পচনশীল। একটি নির্দিষ্ট সময় পর এর যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা হলে এটি পচে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। গাড়িটির কাঠামোতে ব্যবহার করা হয়েছে সহজেই পচে যায় এমন তন্তু বা ত্বক। বায়োমির নকশাবিদ হিলফেনস কোবনপু জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে উভেন স্কিন বা জৈব তন্তু থেকে পরিবেশবান্ধব গাড়ি তৈরির জন্য সচেতনতা বাড়াতেই এ গাড়িটি তৈরি।
ভবিষ্যতে জৈব প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানিনির্ভর গাড়ি তৈরির পথ খুলে দেবে বায়োমি। এই গাড়িটিই হবে গাড়ির দূষণ সম্পর্কিত পরিবেশবিষয়ক সমস্যার সমাধান। গাড়িটির কোনো যন্ত্রাংশ পরিত্যক্ত হলে তা সহজেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাবে। শিল্পোন্নত দেশে একজন মানুষ গড়ে প্রায় পাঁচ বছর গাড়ি চালায়। এ কথা মাথায় রেখে গাড়িটির পচনশীল কাঠামো বা চামড়া তৈরি করা হয়েছে। আর এই চামড়া তৈরিতে গবেষকরা ব্যবহার করেছেন বাঁশ, র‌্যাটন, স্টিল এবং নাইলন।
গাড়িতে ব্যবহৃত চামড়া সহজে পরিবর্তনও করে নেয়া যায় এবং পছন্দানুযায়ী তাকে নির্দিষ্ট কাঠামো দেয়া যায়। মার্সিডিস বেঞ্চ আশা করছে চলতি বছরের শেষের দিকে মার্সিডিস বেঞ্জ বায়োমির প্রোটাইপ তৈরির কাজ শেষ করবে।
জার্নাল অব নেচারে প্রকাশিত ফেরিঙ্গার গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই গাড়িটি ফোর হুইল ড্রাইভের। এই বামন গাড়ির কার্যপদ্ধতি অন্যান্য সাধারণ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির থেকে আলাদা। এ প্রসঙ্গে আবিষ্কারক ফেরিঙ্গা বলেছেন, আবিষ্কৃত গাড়িটি সত্যিকার অর্থে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংক্রিয় গাড়ি।
গাড়িটিতে চারটি মলিকিউলার মোটরকে চাকা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে চারটি চাকাই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে এই মডেলে তৈরি করা হয়েছে তিন চাকার গাড়ি। ফেরিঙ্গা এটিকে বলেছেন ন্যানো মোটরের প্রোটাইপ। নির্দিষ্ট দিক ঠিক করা থাকলে নিজে থেকেই চলতে পারবে গাড়িটি।
ফেরিঙ্গা বলেছেন, তামার একটি পাতের ওপর নিখুঁত সরলরেখায় প্রায় ছয় ন্যানোমিটার দূরত্ব নিজে থেকেই পার হয়েছে এই বামন গাড়ী।

সূত্রঃদৈনিক মানব কণ্ঠ ২৬/০৫/২০১৩

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics