ধলাগাল বাতাই

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

উড়তে পারে। তবে খুব কমই ওড়ে। গাছেও উড়ে এসে বসে না তেমন একটা। থাকে বনতলের নির্জনে। ঝোপের আড়ালে। বাঁশবনের নিচে। ঘন জঙ্গলের গাছ-গাছালি আর লতাপাতা ঘেরা পাহাড়ি বনভূমিই এদের প্রিয় স্থান। সেখানেই নির্বিঘেœ চলাফেরা, খাদ্য সংগ্রহ আর আত্মগোপন। আলোচিত পাখিটির নাম ‘ধলাগাল বাতাই’ অনেকে এদের পাহাড়ি তিতির নামেও ডাকে। ইংরেজি নাম White-cheeked Partridge, বৈজ্ঞানিক নাম Arborophila Atrogularis।

ব্যাপকভাবে বনভূমি উজাড় এবং বন্য প্রাণীর আবাসস্থলগুলো ধ্বংসের ফলে জীববৈচিত্র্য আজ চরম হুমকির মুখে। ধলাগাল বাতাইও এর বাইরে নয়। এরা পাহাড়ি অঞ্চলের ভূচর পাখি। আবাস ও খাদ্য সংকট এদের টিকে থাকাকে কঠিন করে তুলেছে। বিশেষত মাংসলোভী চোরা শিকারির থাবা এদের আরো বেশি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) গবেষণা অনুসারে এটি এখন বিশ্বে Near Threatened বা প্রায় বিপদগ্রস্ত পাখি।Srimangal News Pic_Dholagal Batai Bird_1

পাখি ও পরিবেশবিষয়ক গবেষক সৌরভ মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধলাগাল বাতাই আমাদের দেশের বিরল আবাসিক পাখি। কেবল বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও মিয়ানমারে এদের বিচরণ রয়েছে। দেশে এরা মূলত সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। লাউয়াছড়া, রেমাকালেঙ্গা, সাতছড়ির মতো বনগুলোতে এদের বসবাস। চট্টগ্রাম বিভাগের বনগুলোতে এরা আগে ছিল। তবে এখন রয়েছে কি না সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমাদের হাতে নেই। বনতলের ঝোপ ও ঘন বাঁশঝাড়ে এরা এক বা একাধিক ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। এরা উচ্চ স্বরে শিস দিয়ে ডাকে। তবে তেমন একটা দেখা পাওয়া যায় না। ৮-১০ দিন বনে বনে ঘুরেও এদের দেখা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।’

সৌরভ মাহমুদ জানান, ধলাগাল বাতাই গড়ে দৈর্ঘ্যে ২৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২৫৫ গ্রাম হয়ে থাকে। কপাল ধূসর, জলপাই-বাদামি চাঁদি ও ঘাড়ের নিচের দিক কমলা-হলুদে মেশানো। পুরো পিঠ কালো দাগসহ হালকা বাদামি। চোখের কাছে কালো ডোরা। গাল সাদা। কাঁধে কালো ও লালচে ডোরা। বগল ও বুকে ধূসর রঙের ওপর সাদা-কালো দাগ এবং তলপেট কালো। এরা খুব সকালে এবং গোধূলিতে খাবার খেতে বের হয়। খোলা লতাপাতা ও তৃণভূমি থেকে প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করে থাকে। খাদ্য তালিকায় রয়েছে বীজ, রসাল ফল, পোকামাকড় ও ক্ষুদ্র শামুকজাতীয় প্রাণী। সামান্যতেই ভয় পেয়ে দৌড়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। তার পরও শিকারির ফাঁদ এদের ঠিকই খুঁজে বের করে নেয়। পাখিটির প্রজনন মৌসুম মার্চ-এপ্রিল। এরা বনের মধ্যে ঘাস এবং বাঁশবনের মাটিতে অল্প গর্ত করে পাতা দিয়ে বাসা বানায়। চার থেকে পাঁচটি ডিম দেয়। ডিমগুলোর রং সাদা। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয়।

পৃথিবীতে ২০ প্রজাতির বাতাই থাকলেও বাংলাদেশে দুই প্রজাতির বাতাই পাওয়া যায়। একটি ধলাগাল বাতাই, অন্যটি লালগলা বাতাই। পাখিটি নিয়ে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা হয়নি। স্বভাবতই এর খুব বেশি তথ্যও জানা যায়নি।

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন : প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক লেখক এবং
দৈনিক কালের কণ্ঠের শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
biswajit.bapan@gmail.com

সূত্র : ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখের দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics