জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নাব্য সংকটে ব্রহ্মপুত্র

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদের বক্ষ এখন প্রায় পানিশূন্য। শুষ্ক মৌসুম শুরুর বেশ আগেই অস্বাভাবিক হারে পানি কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নদের বুক চিরে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর-ডুবোচর। পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ না থাকায় যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নৌকা চলাচল করতে গিয়ে নদের মাঝপথে আটকে যাচ্ছে। ফলে রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে চিলমারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা নৌরুট হুমকির মুখে পড়েছে। মাঝিরা যেকোনো সময় বিভিন্ন নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
bhrma
নৌকার মাঝি ও মালিকরা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানির প্রবাহ সচল রাখতে বেশকিছু স্থানে ড্রেজিং করা এখন অতীব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ড্রেজিং করা না হলে নৌপথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে চিলমারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মাঝে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হলে এলাকায় জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। যার কারণে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

দেখা গেছে, নদের চারপাশে অসংখ্য বালুচর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। যেদিকে চোখ যায়- খালি বালি আর বালি। পানি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার কারণে নদ হারিয়ে ফেলেছে তার স্বাভাবিক স্রোতধারা। স্রোতের প্রবাহ না থাকায় নৌকা চলাচল করতে গিয়ে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। তখন নৌকার মাঝি-মাল্লারা নদীতে নেমে ঠেলে নৌকা পার করছে। অনেক মানুষ নদী পাড় হচ্ছে পায়ে হেঁটে।

রাজীবপুর নৌঘাট থেকে চিলমারী ও গাইবান্ধা নৌরুটে যাত্রীবাহী নৌকা চালান সাইরুদ্দিন। তিনি জানান, ‘রাজীবপুর ঘাট থেকে চিলমারী যাইতে ২০ স্থানে নৌকা ঠেইকা ধরে। তহন ঠেলা দিয়া নৌকা পাড় করা নাগে।’ তিনি আরো জানান, ‘একই অবস্থা গাইবান্ধা যাইতেও।’
রৌমারী ঘাট থেকে কুড়িগ্রাম নৌকা পর্যন্ত যাত্রীবাহী নৌকা চালান আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘এবা কইরা নৌকা চালান যাবো না। মেলা জায়গায় নৌকা ঠেইকা ধরে। মনে হয় দু’একদিন গেলে যাওয়া যাবো না।’

নৌকা ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী জানান, এখন নিদিষ্ট কোনো নৌকা ঘাট নেই। নদীতে পানি না থাকায় চর পড়েছে। ফলে বালিচর পায়ে হেঁটে নৌকায় উঠতে হয়। চিলমারী ভাসমান তেলডিপোর ওপর নির্ভরশীল রৌমারী রাজীবপুর উপজেলা। নদীপথ বন্ধ হয়ে গেলে জ্বালানি সংকট দেখা দিবে। কারণ নদী পথেই জ্বালানি তেল আনা হয়।

নৌকা ব্যবসায়ী ও মাঝিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নদী ড্রেজিংয়ের দাবি জানান। এ রুটে নিয়মিত চলাচলকারী নৌযাত্রী আজিবর রহমান, নজরুল ইসলাম, শেফালী বেগম এবং গজেন্দ্রলাল জানান, বিগত দু’তিন দশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই ব্রহ্মপুত্র নদে পানি প্রবাহ কম থাকার কারণে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা যেতে আগের চেয়ে অনেক সময় বেশি লাগে। তারা এ নদী পথগুলোতে ড্রেজিং করে নাব্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

সূত্রঃ http://www.natunbarta.com/environment

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics