আসছে রাসমেলা ; হরিণ হত্যা রোধে উদ্যোগ আছে কি ??

মাহবুব রেজওয়ান

প্রাচীনকালে শিকার করা ছিল রাজা-বাদশাহদের আভিজাত্যের প্রতীক। হাতি,ঘোড়া, লোক-লস্কর নিয়ে মহাসমারোহে শিকারে যেতেন রাজা-বাদশাহরা। তখন তাদের সাম্রাজ্য ছিল বনে-জঙ্গলে ভরপুর। বন্যপ্রাণীদেরও অভাব ছিল না। তবে শতাব্দী প্রাচীন এই ধারা এখন আর নেই। সেই রাজা-বাদশাহও নেই, সেই বন-জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীও আগের মতো নেই।

‘শতাব্দী প্রাচীন এই ধারা এখন আর নেই’ কথাটি হয়তো পুরোপুরি ঠিক হল না। মানুষ নিষ্ঠুর। নিজের প্রয়োজনে সে অনেক কিছুই করে। কিন্তু তার ফলাফল নিয়ে সে কখনোই চিন্তিত নয়। আমাদের অনিন্দ্য সুন্দর সুন্দরবনের এক আশ্চর্য সৌন্দর্য হচ্ছে চিত্রা হরিণ। মানুষের অবহেলায় এই চিত্রা হরিণ আজ এমনিতেই বিপন্ন। আসছে পূর্ণিমায় রাসমেলাকে ঘিরে হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর ও বিভিন্ন সাগর মোহনাসহ সুন্দরবনে হরিণ শিকারীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন কয়েকটি উপজেলার শিকারীরা রাস মেলার আড়ালে হরিণ শিকারের ফাঁদ, জাল, বরশিসহ বিভিন্ন উপকরণ প্রস্তুত করছে।Spotted Deer harem

আগামী ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর পযর্ন্ত ৩ দিন ধরে রাস মেলা চলবে। মেলা উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, রামপালসহ উপকূলীয় এলাকার শিকারীরা মেলা শুরু হওয়ার ১০-১৫ দিন আগে বনের মধ্যে প্রবেশ করে রেখে আসা শিকারী উপকরণ দিয়ে হরিণ শিকার করে।

প্রতিবছর রাস মেলার সময় কয়েক হাজার হরিণ নিধনের আশংকা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত হরিণ নিধন হচ্ছে। এভাবে হরিণ নিধন হলে হরিণের সংখ্যা আশংকাজনক হারে হ্রাস পাবে। এমনিতেই সুন্দরবনে চোরাশিকারিদের হাতে অনেক হরিণ নিধন যাচ্ছে। তার উপর এই রাসমেলাতে যে পরিমাণ হরিণ নিধন হবে, তা সারা বছর শিকারিদের হাতে নিধন হওয়া হরিণের চেয়েও বেশি বলে পরিবেশবাদীরা মনে করছেন। বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন ৮টি উপজেলায় প্রায় শতাধিক অবৈধ শিকারী চক্র সক্রিয়। এসব শিকারী চক্র হরিণ নিধনের পর মাংস, চামড়া, হাঁড়, শিং বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।horin 1

লন্ডনভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অফ বাংলাদেশ ও জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে, সুন্দরবনে বছরে প্রায় ১০ হাজারের বেশি হরিণ শিকারীদের হাতে মারা পড়ে। বন বিভাগের হিসেব মতে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চিত্রা হরিণ রয়েছে। বনের আয়তন খাদ্য ও পরিবেশের উপর এর সংখ্যা নির্ভর করে।

শিকারী সূত্রে জানা গেছে, লাইলনের তৈরি ফাঁদ, জাল পেতে, স্প্রিং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ তীর বা গুলি ছুঁড়ে, কলার মধ্যে বড়শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদ ও ঘাস পাতার উপর চেতনানাশক ঔষধ দিয়ে হরিণ নিধন করা হয়। ফাঁদ পেতে শিকারীরা লাঠি নিয়ে আশে পাশে লুকিয়ে থাকে। হরিণ ফাঁদে আটকা পড়লে তারা ছুটে গিয়ে হরিণকে বেধড়ক পেটায়। হরিণ দুর্বল হয়ে পড়লে নৌকায় করে সুবিধামত স্থানে মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখে। পরে সময় ও চাহিদামত জবাই করে হরিণের মাংস, চামড়া, শিং ও হাড় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়।horin3

বন বিভাগ কতৃপক্ষের জনবল সমস্যা রয়েছে অনেক। তবুও তাদের মতে, রাস মেলার সময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বনরক্ষীদের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সরকারি চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছে। অনেক বনরক্ষীও হয়তো এই চক্রের সাথে জড়িত। সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির বদল না হলে সুন্দরবনের চিত্রা হরিণের ভাগ্যেও কোন পরিবর্তন আসবে না। আমাদের নিজেদেরও ভাবতে হবে। কারণ, চিত্রা হরিণের সংখ্যা কমে গেলে সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

সুত্রঃ পরিবর্তন ডটকম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics