অদেখা প্রাণীঃ জারবোয়া!!

মাহবুব রেজওয়ান 

“ইঁদুর বলে, ও বেড়াল ভাই!

তুমি গান গাও, আমি যে পালাই………।”

ফেরদৌস ওয়াহিদের এই গানটি একসময়ের দারুণ জনপ্রিয় একটি গান। এই গান শুনেই বুঝা যায়, ইঁদুর ছানার কোন ভয়-ডর নেই। অন্তত তাকে তাড়া করে বিড়াল যে ধরতে পারবে না, এই ব্যাপারে কিন্তু ইঁদুর ছানা নিশ্চিত। এই ইঁদুরেরই আবার কতো রকমফের। নেংটি ইঁদুর, ধেড়ে ইঁদুর আরও কতো কি ! আকারে ছোট হওয়ায়, আর ক্ষিপ্র গতির কারণে এদের ধরতে পারা আসলেই শক্ত। তবে আকারে ছোট হলেও সেটা কতোই বা ছোট হবে? যদি বলি মাত্র গড়ে এক ইঞ্চি! বিজ্ঞানীরা মরু অঞ্চলে এমনই এক ইঁদুরের দেখা পেয়েছেন, যাদের গড় উচ্চতা মাত্র এক ইঞ্চি। এদের নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন জারবোয়া। jerboa

জারবোয়া ডাইপোডিডা (dipodidae) পরিবারভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। এদের দেখা যায় মূলত মরু অঞ্চলে। উত্তর আফ্রিকা ও এশিয়ার মরু অঞ্চলেই এদের দেখা যায়। এশিয়ার আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চীনের মরু অঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যায়। অন্যান্য অঞ্চলে এদেরকে চোখে পড়ে না। জারবোয়া সাধারণত দুই থেকে তিন বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। জারবোয়াকে আপনি যদি তাড়া করেন, তাহলে এরা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪ কিমি বেগে দৌড়াতে পারবে। আর ছোট হলেও, লাফালাফিতে কিন্তু দারুণ ওস্তাদ। এদের লেজ ব্যাবহার করে এরা ৯ ফুট পর্যন্ত লাফাতে সক্ষম!

long ear
লং ইয়ার জারবোয়া

জারবোয়া দেখতে অনেকটা ক্যাঙ্গারুর মতো। কেননা এদের দীর্ঘ পিছনের পা, খুবই ছোট সামনের পা এবং সেই সাথে এদের রয়েছে লম্বা লেজ। এরা ক্যাঙ্গারুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলাফেরা করে। অন্যান্য দ্বিপদী প্রাণীর মতো এদের ফোরামেন মাগনাম (মাথার পিছন দিকের গর্ত) সামনের দিকে কিছুটা এগোনো থাকে। যা এদের দুই পায়ের গতিকে ত্বরান্বিত করে। লেজটি এদের মাথা এবং দেহের চেয়ে বড়। লেজের শেষের দিকে একগুচ্ছ সাদা চুল দেখতে পাওয়া যায়। প্রাণীটির লেজ একে লাফাতে এবং বসতে সাহায্য করে। জারবোয়ার পশম অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং রঙচঙ্গা বালির মতো। এই রঙ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা যে পরিবেশে বাস করে তাতে মিশে যায়।

pigmi jerboa
পিগমি জারবোয়া

এদেরকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। জারবোয়ার কিছু প্রজাতির কান খরগোশের মতো বড় এবং কিছু প্রজাতির ইঁদুরের মতো ছোট। যাদের কান বড়, তাদের বলা হয় লং ইয়ার জারবোয়া। আর যাদের কান ছোট, তাদের বলা হয় পিগমি জারবোয়া। পিগমি জারবোয়াকে বলা হয় পৃথিবীর সবথেকে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী।

জারবোয়া নিশাচর প্রাণী। দিনের গরমে এরা গর্তে লুকিয়ে থাকে। রাতের  বেলা তাপমাত্রা ঠাণ্ডা হলে এরা গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। এই গর্তে একটি দ্রুত নির্গমনের পথ থাকে। এই পথ এদেরকে শিকারির হাত থেকে রক্ষা করে। তবে জারবোয়া কিন্তু খুব চালাক। নিজেদের জন্য এরা আরও চারটি গর্ত করে অস্থায়ী বাসা বানিয়ে রাখে। এরা সাধারণত একাকি বসবাস করে।

প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে গেলে এরা নিজেরা নিজেদের গর্ত তৈরি করতে পারে এবং খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। জারবোয়া মূলত তৃণভোজী প্রাণী। তবে গুবরেপোকা সহ আরও ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে থাকে। কিন্তু কোন শক্ত খাবার এরা খেতে পারে না।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক

 

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics