ফারমেন্টেড প্লান্ট জুস

দেবাশীষ মজুমদার

অধিক উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ষাটের দশক হতে এদেশের কৃষিতে রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহার শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে এসব রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের ফলে চমকপ্রদ হারে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু  ৩-৪ বছর পরেই,জমি ভেদে এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব খুব সহজেই কৃষক এবং কৃষিবিদদের কাছে ধরা পড়ে। প্রধান প্রধান ক্ষতিকারক প্রভাব গুলো হচ্ছে-

(ক) জমির মাটি শক্ত হওয়া (খ) মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়া (গ) মাটির উর্বরতা হ্রাস (ঘ) পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি (চ) ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়া ও (ছ) বায়ু ও পানির দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি । এদিকে,খাদ্যের গুণগতমান ও স্বাদ যাচ্ছে কমে। বৃদ্ধি পাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়রিয়া, আলসার ও ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের প্রকোপ। আমাদের দেশে শাকসবজিতে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি পরিমাণে বিষ ব্যবহার হচ্ছে। এতে উৎপাদনকারী ও ভোক্তা সবারই নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ রাসায়নিক কৃষির বিকল্প হিসেবে জৈব (অর্গানিক) উপায়ে শাকসবজি উৎপাদন করলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। মাটি, পানি ও বায়ু থাকে দূষণমুক্ত। বৃদ্ধি পায় কেঁচো ও অন্যান্য উপকারী প্রাণিসহ মাটিস্থ অনুজীবের সংখ্যা, বজায় থাকে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা। এমনকি ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং রোগও অনেকখানি কমে যায়। twin

আজ আমি এমন একটি বায়ো ফারটিলাইজার সম্পর্কে আলোচনা করব যা কৃষকের কাছে গাছের ভিটামিন বা গ্রোথ হরমোন হিসেবে পরিচিত । এই বায়ো ফারটিলাইজারটিতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা শস্য জাতীয় এবং যেকোনো ধরণের সবজি জাতীয় উদ্ভিদের বৃদ্ধিজনিত নানা ধরনের হরমোনসহ ফসলের জন্য প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই বায়োফারটিলাইজারটিতে থাকে। এই বায়ো ফারটিলাইজারটির নাম ‘ফারমেন্টেড প্লান্ট জুস’ ।

এটি আপনি নিজেই তৈরী করে নিতে পারেন যার উৎপাদন খরচ কম এবং প্রক্রিয়াটিও বেশ সহজ । একবার তৈরী করতে পারলে এটি ব্যাবহার করতে পারবেন অনেকদিন পর্যন্ত । টবে শাক সবজি এবং ফলমূল চাষের ক্ষেত্রেও এটি একটি অনন্য উপাদান ।

‘ফারমেন্টেড প্লান্ট জুস’ তৈরীর গোটা পদ্ধতিসহ ব্যাবহারবিধি  নিচে দেয়া হলোঃ

ফারমেন্টেডপ্লান্টজুস: বিভিন্ন সবুজ গাছ ও ফসলের নরম অংশ বা কচি ডগা হতে বিশেষভাবে সংগৃহীত নির্যাস বা রস হলো ফারমেন্টেড প্লান্ট জুস ।

তৈরিরউপকরণ: ১ ভাগ দানাযুক্ত আখের গুড়, ২ ভাগ সবুজ গাছ ও ফসলের নরম অংশ, ১টি প্লাস্টিকের বালতি, খবরের কাগজ ও সুতলি।

উপাদানসংগ্রহেরসময়: সূর্য উঠার পূর্বে ইপিল-ইপিল, ধৈঞ্চার ২-৩টি কচি পাতাসহ ডগার অগ্রভাগ অথবা মাসকলাই বা এই জাতীয় বিভিন্ন উদ্ভিদের কচি ডগা অথবা কলা গাছের তেউড় (সাকার) সংগ্রহ করতে হবে। এসব উপাদান ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। উল্লেখ্য যে, সূর্য উঠার পর এসব উপাদান সংগ্রহ করা যাবে না।

ফারমেন্টেডপ্লান্টজুসতৈরিরপদ্ধতি:  ১ কেজি দানা গুড়ের সাথে ২ কেজি পরিমাণ সংগৃহিত ডগা বা তেউড় একটি প্লাস্টিকের বালতিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। গুড় এবং গাছের কচি অংশের মিলিত ওজনের সমপরিমাণ কোনো ভারি বস্তু দিয়ে বালতির মধ্যে মিশ্রণকে চাপা দিতে হবে। এবার বালতির মুখ খবরের কাগজ দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে সুতলি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। এরপর বালতিটি ছায়াযুক্ত ঠাণ্ডা কোনো স্থানে,যেমন শোয়ার ঘরে চৌকির নিচে রেখে দিতে হবে। দ্বিতীয় দিনে একই সময়ে বালতি হতে ওজন সরিয়ে পূর্বের মতো রেখে দিতে হবে।  ৮-১০ দিন পর বালতি হতে গাছের কচি অংশ সরিয়ে নির্যাস বা রস কোনো খাবার পানির বোতলে ভরে ঠাণ্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। এ রস বা নির্যাসই ফারমেন্টেড প্লান্ট জুস নামে পরিচিত।

ব্যবহারের নিয়ম: ১ ভাগ নির্যাসের সাথে ১০০ (এক শত ) ভাগ পানি মিশিয়ে বিভিন্ন শাকসবজি বা ফসলের ক্ষেতে ফারমেন্টেড প্লান্ট জুস ব্যবহার করা যাবে। এ রস জমি চাষের সময় মাটিতে ব্যবহার করলে মাটির অনুজীবের সংখ্যা ও উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। শাকসবজি বা ফসল অতি দ্রুত মাটি হতে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারবে। যেসব শাকসবজির ফুল ও ফলধারণ দীর্ঘ দিন পর্যন্ত চলমান থাকে (যেমন- বেগুন, টমেটো, শসা ইত্যাদি) সেসব ফসলের বৃদ্ধি পর্যায়ে প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর একবার নির্যাস স্প্রে করলে ফলন বৃদ্ধি, সবজির আকার, আকৃতি এবং ফলের রঙের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে ।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics