ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক দলের চমৎকার আবিষ্কারঃ শৈবাল থেকে ন্যানো-ফিল্টার

লেনা আলফি

সম্প্রতি শৈবাল থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ন্যানো ফিল্টার তৈরি করে সারাবিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। প্রায় ছয় বছর ধরে চলা এই গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথে ছিলেন সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। গবেষণাটিতে বাংলাদেশ বিভাগের সমন্বয়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ফিজিক্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধাপক ড. ছিদ্দিকি রব্বানী।

শৈবাল গবেষণা এক্সপেরিমেন্ট-প্লটে ড. আলফাসানি। ছবিঃ প্রথম-আলো

মূলত শৈবাল থেকে প্রাপ্ত সেলুলোজ ফাইবার পরস্পর বিশেষ পদ্ধতিতে সুবিন্যস্তভাবে সাজিয়ে এই ন্যানোফিল্টারটি তৈরী করা হয়েছে। ন্যানোফিল্টারের ক্ষুদ্র পোরগুলোর ব্যসার্ধ রাখা হয়েছে প্রায় ১৭ ন্যানোমিটারের মতো যা ২০ থেকে ৩০০ ন্যনোমিটার আকৃতির ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া ছেঁকে ফেলতে পারে। দেখা গেছে এই ফিলটারটি দিয়ে পরিশোধিত পানি প্রায় শতভাগ জীবাণুমুক্ত ও নিরাপদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলমোজাদ্দেদী আলফেসানী ১৯ বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে গবেষণাটির কাজে শৈবাল হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন pithophora শৈবাল যা কিনা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এছাড়া এর বৃদ্ধিক্ষমতাও বেশ ভালো। ফসফেট এবং নাইট্রেট সার ব্যবহারের ফলে দেখা গেছে তিনদিনে এটির উৎপাদন বাড়ে প্রায় দ্বিগুণের মতো যা কিনা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের জন্য বেশ লাভজনক হতে পারে। তাছাড়া সাধারণ কৃষকরা খুব স্বল্প খরচে এটি মাঠ পর্যায়ে চাষ করতে পারবেন।

প্রাথমিক গবেষণা শেষে ফিলটারটির মাধ্যমে ধানমন্ডি লেক এবং তুরাগ নদীর পানি পরিশোধন করা হয় এবং পরিশোধিত পানিটি নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে। সেখানে প্রফেসর আনোয়ারা বেগম এবং সেন্টার অফ এডভান্সড রিসার্চ ইন সাইন্সের শারমীন জামানের তত্ত্বাবধায়নে একটি দল তা পরীক্ষা করেন এবং জানানো হয় যে তাতে ক্ষতিকর কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া নেই এবং পানিটি শতভাগ বিশুদ্ধ।

শৈবাল থেকে উৎপাদিত ন্যানো- ফিল্টার। ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ড. এলবার্ট মেহরানয়ান

এ প্রসঙ্গে ড। আলমোজাদ্দেদী আলফেসানী বলেন, “আমাদের ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এ ন্যনোফিল্টার দ্বারা গ্রামাঞ্চলে পুকুরের পানি থেকেও সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব। তাই শতভাগ প্রাকৃতিক শৈবাল থেকে প্রাপ্ত এই ন্যনোফিল্টারটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা অনেকাংশেই পূরণ করবে বলে মনে করি”

সম্পূর্ণ গবেষণাটি তত্ত্বাবধায়ন করা উপসালা বিশ্বনিদ্যালয়ের প্রফেসর ড, আলবার্ট মিহরানিয়ান বলেন, “বিগত সময়ে  পিথোফোরা শৈবালকে গুরুত্ব দেয়া হতো না, কিন্তু সমস্ত গবেষণা শেষে আমরা দেখতে পেয়েছি যে পানি পরিশোধনে এটি চমৎকার ভাবে কাজ করেছে যা শতকরা ৯৯.৯৯ শতাংশ কার্যকর”। দেখা গেছে প্রাপ্ত ন্যানোফিলটারটি প্রায় ৫ বায়ুচাপ পর্যন্ত ভার গ্রহণ করতে পারে এবং খুব কম খরচে এ্রর বাজারজাতকরণ এবং বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব। কিভাবে এই ধারণ ক্ষমতা এবং পরিশোধনের হার বাড়ানো যায় তা নিয়ে বর্তমানে কাজ করছেন গবেষক দল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading