মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি চন্দনা

আলম শাইন
মুঠোফোনে একটা বার্তা পেয়েছি, ‘বাংলাদেশি আইডল দেখে নন্দিতাকে ভোট করুন’।পাঠিয়েছে আমার বন্ধু ডাক্তার মিজানুর রহমান। বন্ধুর কথা রাখতে হয়। না হলে ফ্রি চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যথাসময়ে টেলিভিশনের পর্দায় নজর রেখেছিও। এক সময় নন্দিতা গান ধরছে, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা …।’ ব্যস, সেরেছে। গানে মনোযোগী হতে পারিনি আর। পুরনো স্মৃতি এসে ধরা দিয়েছে আমার মস্তিষ্কে। মুহূর্তে মুড অফ। আরেক গায়িকার কথা মনে পড়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গে। বছর পঁচিশেক আগের কথা। মেয়েটি ছিল মানসিক রোগী। ওর বড় ভাই পাখি পুষতেন। খাঁচায় বন্দি পাখিটার সামনে গিয়ে ও সারাদিন চেঁচিয়ে এ গানটি গেয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করত। যেন পাখিটা মুক্তি পায় এ কামনা ছিল ওর। মানসিক রোগী হলেও যে ওর ভেতরে বন্দিত্বের যন্ত্রণা কাজ করছে তা তখন বুঝতে খানিকটা কষ্ট হয়েছে। সেই স্মৃতি মনে পড়তেই ওই প্রজাতির পাখির কথা মনে এসেছে। বন্দি পাখিটাকে সে সময় চিনতে পারিনি। সাধারণ ‘টিয়া পাখি’ বলেই ধরে নিয়েছি আমি। বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এদের পরিচিতি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত শতাধিক পাখি নিয়ে লিখলেও ‘চন্দনা টিয়া’ নিয়ে লেখা হয়নি কোথাও। এরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এদের সাক্ষাৎ পাওয়া যেত, বর্তমানে আমাদের দেশে মহাবিপন্ন প্রজাতির পাখি হিসেবে ধরা হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার পর্যন্ত সুলভ বিচরণ রয়েছে। দেখতে ভারি সুন্দর। ডাকে ‘ক্রি-অ্যার’ সুরে। বাস শুষ্ক ও আর্দ্র পাতাঝরা বনাঞ্চলে। দল বেঁধে বিচরণ করে। একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও বিচরণ করতে দেখা যায়।
Alexandrine-parakeet-on-branchপাখির বাংলা নাম : ‘চন্দনা টিয়া’, ইংরেজি নাম : ‘অ্যালেক্সএনড্রিন প্যারাকিট’ (Alexandrine parakeet)  বৈজ্ঞানিক নাম : Psittacula eupatria ।  অনেকে ভুল করে এদের ‘সবুজ টিয়া’ নামে ডাকে।
এ পাখি লম্বায় ৫৩ সেন্টিমিটার। তার মধ্যে লেজ ২৯ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। যেমন পুরুষ পাখি আকারে কিছুটা লম্বা। তাছাড়া পুরুষ পাখির গলার পেছনে এবং ঘাড়ের পাশে রয়েছে গোলাপি বলয়। থুতনির কালো রেখা গলাবন্ধের সঙ্গে মিশেছে। পুরো দেহ ঘাস-সবুজ। কেবল ডানার মধ্য পালকে রয়েছে লালপট্টি। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে গলার পেছনের গোলাপি বলয় নজরে পড়ে না। থুতনির কালো রেখার উপস্থিতি নেই। যুবক চন্দনার ক্ষেত্রেও এ রকমটি নজরে পড়ে। ঠোঁট গাঢ় লাল। ঠোঁটের ডগা কমলা-লাল। চোখের পাতা কমলা-হলুদ, বলয় নীল।
প্রধান খাবার ফল, ধান, গম, ভুট্টা, ফুলের রস, গাছের কচি পাতা ইত্যাদি।
প্রজনন সময় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। তবে নারিকেল গাছের প্রতি ওদের দুর্বলতা বেশি। এছাড়া কাঠঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৪টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৯-২০ দিন।

লেখক : আলম শাইন, কথাসাহিত্যিক, বন্যপ্রাণী গবেষক ও পরিবেশবাদী লেখক।

সূএঃ   দৈনিক মানবকন্ঠ

আরো দেখান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics