সমুদ্র থেকেই খাবার পানি

2011-01-19-1295451433-d41d8cd98f00b204e9800998ecf8427e59.4পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি। এর মাত্র আড়াই শতাংশ হচ্ছে মিষ্টি। বাকিটা লবণাক্ত অর্থাৎ খাওয়ার অযোগ্য। আবার মিষ্টি পানির এক শতাংশেরও কম পরিমাণ রয়েছে আমাদের হাতের নাগালে। বাকিটা রয়েছে জমাট বরফ হয়ে। সম্প্রতি সমুদ্রের লবণাক্ত পানি খাবার পানিতে রূপান্তর করার এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে। বিস্তারিত লিখেছেন মোস্তাক চৌধুরী
খাবার পানির চাহিদা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। মাটির নিচের পানির স্তরও ক্রমে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চেষ্টা চলছে বিকল্প উৎসের, লবণাক্ত পানিকে খাওয়ার উপযোগী করতে। এটা যদি সম্ভব হয় তাহলে পানির সমস্যা অনেকখানি কমে যাবে বলে গবেষকরা মনে করেন। আগামীতে পানির সমস্যা আর থাকবে না। সম্প্র্রতি দুই মার্কিন বিজ্ঞানী সমুদ্রের লবণাক্ত পানি থেকে খাওয়ার উপযুক্ত মিষ্টি পানি তৈরির এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে পানযোগ্য করার উদ্যোগ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও স্পেনে সমুদ্রের পানি থেকে লবণ দূর করে তা বিভিন্ন কাজ ব্যবহৃত হচ্ছে। সিঙ্গাপুর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে এ কাজটি করছে।
ইসরাইল বছরে সমুদ্র থেকে প্রায় ৫০ কোটি বর্গমিটার লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। এতদিন তারা গেনেজারেথ হ্রদ থেকে পানি পাম্প করে ব্যবহার করেছে। তবে বিজ্ঞানীরা আশার বাণী শোনাচ্ছেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি বর্গমিটার লবণাক্ত পানি পরিশোধন করে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইডেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মেনাখেম এলিমেলেশ বলেন, নীতিগতভাবে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি শোধনের মাধ্যমে সহজেই উন্নতমানের মিষ্টি পানি সংগ্রহ করা সম্ভব। আর কোনো ক্ষতি ছাড়াই বিশাল মহাসাগর থেকে এ অফুরন্ত মিষ্টি পানি জোগাড় করা যেতে পারে। লবণাক্ত পানি শোধনের আধুনিক প্রক্রিয়াটির নাম দেয়া হয়েছে ‘রিভাস অসমোসিস’ লবণাক্ত পানি পলি-অ্যামিড মেমব্রেন নামে একটি পাতলা পদার্থের উপর প্রচণ্ড বেগে নিক্ষেপ করা হয়। পানির অণুগুলো তা ভেদ করে অন্য প্রান্তে বেরিয়ে আসে। কিন্তু লবণের বড় অণুগুলো পর্দার অপর প্রান্তে আটকে যায়। এভাবেই শোধন করা হয় পানি। বর্তমানে প্রতি বর্গমিটার মিষ্টি পানি পেতে তিন থেকে চার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এক বর্গমিটার পানি প্রায় এক হাজার লিটারের সমান। নদী বা অন্য কোনো উৎস থেকে পানি শোধন করতে বিদ্যুৎ লাগে এর এক-তৃতীয়াংশ অনেকে লবণাক্ত পানি শোধনের জন্য সৌর বা বায়ুশক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে কার্বন নির্গমন তো হবেই না, হলেও মাত্রা থাকবে খুব কম। সমুদ্রের পানিতে লবণ ছাড়াও সামুদ্রিক উদ্ভিদের ক্ষুদ্র অংশসহ অনেক পদার্থ থাকে। যে মেমব্রেন বা ছাঁকনির সাহায্যে লবণ আলাদা করা হয়, তার মধ্যে দিয়ে পানি সহজেই প্রবেশ করতে পারে। রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার এড়াতে প্রকৌশলীরা একটি নতুন ধরনের ছাঁকনি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। এ ছাঁকনির ওপর কোনো জৈব পদার্থের স্তর জমবে না। সমুদ্রের পানি থেকে যে ঘন লবণের স্তর আলাদা করা হয় তা আবার সমুদ্রেই ফেলে দেয়া হয়। এর ফলে সমুদ্রের উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের কোনো ক্ষতি হয় না।

সূত্রঃ দৈনিক মানবকণ্ঠ ০৬/০৬/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics