সবচেয়ে উঁচু পরিবেশবান্ধব ভবন…
বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ জ্বালানিই খরচ হয় বাড়িঘর ও বিভিন্ন ভবনে। আর এই খরচ কমানোর লক্ষ্যে একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে তাইওয়ান। সঠিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের অনেকটাই বাঁচিয়েছে তাইওয়ানের একটি ভবন। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই পরিবেশবান্ধব ভবনটির নাম ‘তাইপে ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান’ বা ‘তাইপে ১০১’। ভবনটি তাইওয়ানের জিনই জেলার তাইপে শহরে অবস্থিত। ভবনটির আগের নাম ছিল ‘তাইপে ওয়ার্ল্ড ফিনান্সিয়াল সেন্টার’। ২০০৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন। ২০১০ সালে বুর্জ খলিফা উদ্বোধনের পর এটি উচ্চতার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে।
ভবনটির নকশা প্রণয়ন করেছে সি ওয়াই লি অ্যান্ড পার্টনার্স এবং নির্মাণ করেছে কেটিআরটি জয়েন্ট ভেঞ্চার। উদ্বোধনের পর থেকে ভবনটি আধুনিক তাইওয়ানের প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
ভবনটির ভূমির ওপর ১০১টি তলা রয়েছে এবং মাটির নিচে রয়েছে ৫টি তলা। এটি দেখতে অনেকটা বাঁশের মতো। উচ্চতা ৫০০ মিটারেরও বেশি। পর্যটকদের জন্য এই ভবনটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ভবন পরিচালনা সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি ইয়াং আগে থেকেই নতুন কিছু খুঁজছিলেন, যা ভবনটির প্রতীকী অবস্থানটাকে ধরে রাখতে পারবে। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাদের দেখে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে। তাই আমরা সবকিছু ভালো ও নিখুঁতভাবে করতে চাই। আমরা চাই, আমাদের কর্মীরা অন্য কোনো ভবনের জন্য কাজ না করে এটির জন্যই কঠোর পরিশ্রম করুক। কারণ এই ভবনটি তাইওয়ানেরই একটি প্রতীক।’
২০০৮ সালে নতুন এক পথে যাত্রার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যাথি ইয়াং। জ্বালানির দাম তখন হু হু করে বেড়েই চলেছে। তিনি জানতে পারলেন, জ্বালানি ও অন্যান্য সম্পদ সাশ্রয়ী ব্যবস্থার জন্য লিডস নামে একটা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে। মালিকরা তাদের ভবনে স্বেচ্ছায় এ ধরনের ব্যবস্থা বসাতে পারেন, নির্দিষ্ট পরিবেশবান্ধব মাত্রা মান্য করতে পারেন এবং এভাবে পরিবেশ সুরক্ষার সার্টিফিকেট পেতে পারেন। সার্টিফিকেটের মেয়াদ পাঁচ বছর। মেয়াদ ফুরোলে আবার নতুন করে পরীক্ষা করে দেখা হবে ভবনের সবকিছু পরিবেশ অনুকূল কি-না। ক্যাথি ইয়াং জানান, ‘এই ভবনটি পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। দুই বছর ধরে চেষ্টার পর এ রকম একটি উঁচু ভবন যে তৈরি করতে পেরেছি এর জন্য আমরা গর্বিত।’
মোট ১১ হাজার মানুষ কাজ করেন এই বিশাল ভবনে। এখানে পানি আর বিদ্যুতের ব্যবহার হ্রাস করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কমিয়ে ফেলা হয়েছে আবর্জনার পরিমাণও। রাখা হয়েছে ঘরে আলো বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা। আর এই কাজের সহায়ক হয়েছে জার্মান কোম্পানি সিমেন্সের প্রযুক্তি আর কারিগরি জ্ঞান। ভবনজুড়েই রয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার কাচ। এ ছাড়া সিমেন্স কোম্পানির ইঞ্জিনিয়াররা লাইটিংয়ের জন্য এখানে নতুন ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছেন। বসিয়ে দিয়েছেন সেন্সর। এতে জ্বালানির খরচ প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। বছরে এত বাঁচে ৭ লাখ ডলার। তবে জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা নিতে এই ভবনটিতে বিনিয়োগ করতে হয়েছে ২০ লাখ ডলার।
জুনায়েদ তানভীর ১৯/০৭/২০১৩