ভাসমান দ্বীপ শহর; দ্যা লিলিপ্যাড প্রজেক্ট !!
ফারজানা হালিম নির্জন
শহরেতো থাকছেন,কিন্তু সেটি যদি হয় ভাসমান শহর? অর্থাৎ দ্বীপ শহর! বিস্ময়কর মনে হচ্ছেতো? বিস্ময়করই বটে । পৃথিবীতে পরিবেশবান্ধব স্থাপনা গড়ার পরিকল্পনা পরিবেশবিজ্ঞানীদের ভাবনার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে। সে মোতাবেক অনেক অনেক স্থাপনাও কিন্তু ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে। তেমনি একটি অসাধারণ স্থাপনা হচ্ছে লিলিপ্যাড প্রজেক্ট। নির্মাণশৈলীতে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেনই না! এটি একটি অসম্ভব সুন্দর এবং সবুজ পরিবেশবান্ধব ভাসমান স্থাপনা, যা কিনা মূলত দ্বীপ শহর সৃষ্টির প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর হুমকিস্বরূপ প্রতিনিয়ত সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নিচু জমির এবং সমুদ্র তীরবর্তী মানুষদের আবাসস্থল বিলীন হতে যে খুব বেশি দেরী নেই,তা নিঃসন্দেহে বলে দেয়া যায়। আর তখনই উদ্ভাবিত হলো নতুন বিস্ময়কর দ্বীপ শহর প্রকল্প ! নীলের মাঝে ভাসমান সবুজ এই শহর ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য কতটা আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে,তা নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারছেন?
জলপদ্ম ফুলের পাতার আকৃতিতে লিলিপ্যাড প্রকল্পটি তৈরী করা হয়েছে। আপনি যদি আকাশপথে অনেক উপর থেকে এটিকে দেখেন,তখন একটি জলপদ্মের পাতার মত মনে হবে। দ্বিস্তর বিশিষ্ট এই ইকোপলিসটির কাঠামো তৈরী করা হয়েছে পলি-এস্টার তন্তু দিয়ে,যা কিনা আবার টাইটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইডের একটি স্তর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই টাইটেনিয়াম-ডাই-অক্সাইড সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির সাথে বিক্রিয়া করে এবং ফটোক্যাটালিক প্রভাবের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলীয় দূষন শোষন করে নেয়। এছাড়াও এটির কোনো কার্বন নিঃসরণের ক্ষমতা নেই এবং যতটুকু শক্তি খরচ করা হয় তার থেকেও অধিক পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন করার ক্ষমতা রাখে !
এই ভাসমান দ্বীপ শহরটি প্রায় ৫০,০০০ মানুষ ধারণ করতে পারবে। তিনটি ম্যারিনা,(অর্থাৎ ছোট জাহাজ,নৌকা মেরামত কিংবা যাওয়া-আসার দ্বারপ্রান্ত হিসেবে পরিচিত) এবং তিনটি পর্বতস্বরূপ আকৃতি এতে লক্ষ্য করা যায়। আর একদম মাঝখানে রয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদ,যা পানির নিচ পর্যন্ত এমনভাবে ডুবানো অবস্থায় থাকবে যাতে পুরো শহরটি একটি ভারসাম্য বজায় রেখে পানির উপর ভেসে থাকতে পারে! পানি সংগ্রহ করা এবং বিশুদ্ধ করাই হচ্ছে এই হ্রদটির প্রধান কাজ। আর পর্বত এবং ম্যারিনাগুলো শহরের বাসিন্দাদের কর্মক্ষেত্র,বিনোদন,কেনাকাটা ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে। জলজ উদ্ভিদের জন্য ফার্মের ব্যবস্থা থাকছে পানির নিচে। আর পুরো শহরটির উপরিভাগ জুড়েইতো থাকছে সবুজের সমারোহ।
এতো সুন্দর স্থাপনা প্রকল্পটি কার হাতের যাদুতে আকৃতি পেলো? কবেইবা এটি বাস্তবতার ছোঁয়া পাবে !নিশয়ই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে !
বেলজিয়ান আর্কিটেক্ট স্যার ভিনসেন্ট ক্যাল্লিবাট ২০০৮ সালে এই অসাধারণ স্থাপনাটির ডিজাইন করেছেন। এর জন্য তিনি অনেক পুরস্কারও অর্জন করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে পুরস্কারগুলো পেয়েছেন সেগুলো হলো-
- থার্মাল সুইমিং পুল এর জন্য তিনি ২০০৯ সালে ফ্রান্সের রয়্যাতে প্রথমস্থান অধিকার করেন এবং পুরস্কার গ্রহণ করেন।
- বিলাসবহুল আবাসিক টাওয়ার ডিজাইন করার জন্যে তিনি তাইওয়ানের রাজধানি তাইপেই থেকে ২০১০ সালে আবারো প্রথমস্থান দখল করে বিজয়ী হন !
এধরণের আরো অসংখ্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। তিনি আশা করেন,২১০০ সাল নাগাদ তাঁর এই ‘লিলিপ্যাড প্রজেক্ট’টি বাস্তবতার ছোঁয়া পাবে। তার সাথে তিনি দাবি করেন-জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মত যেসব ভয়ংকর পরিবর্তন হতে যাচ্ছে,তার সমাধান স্বরুপ এই ডিজাইনটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে খুবই কার্যকর হবে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে স্যার ভিনসেন্ট ক্যাল্লিবাটের এই লিলিপ্যাড প্রজেক্টের কোন বিকল্প থাকতে পারেনা !