বাবুই পাখির বাসা: অপূর্ব এক শিল্পের নিদর্শন

সামসুজ্জামান

bfপ্রাণময় পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্যের কত না ধরন। নিজের বাসা না থাকলেও কোকিলের বাসায় বাচ্চা ফোটায় কাক, চড়–ই পাখি পাকা ইমারতে বাসা বেঁধে রাজকীয় জীবনযাপন করে। বাদুড়ের চরিত্র উঁচুগাছে ঝুলে জীবন অতিবাহিত করা। এমনি অসংখ্যপ্রাণী পরের বানানো কোনো কিছুকে নিজের বসতবাড়ির মতো ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু বাবুই পাখির কারুকার্যমণ্ডিত গাছের পাতায় ঝুলে থাকা অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন বাসা পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত এক সময়। বাবুই পাখি মূলত উঁচু তালগাছের পাতাতেই তাদের এই বাসা তৈরি করত। এক সময় গ্রামাঞ্চলে যাওয়ার সময় অসংখ্য বাবুইয়ের বাসা চোখে পড়ত। কিন্তু কালের আবর্তে তালগাছ শক্ত আঁশযুক্ত হওয়ায় মানুষ এ গাছ কেটে টালি, টিনের ঘর এমনকি পাকা দালানের আড়া, বর্গা তৈরির কাজে এর ব্যবহার শুরু করায় তালগাছ একেবারেই হাওয়া হয়ে গেছে। সে সঙ্গে বাবুইও হয়েছে নিরুদ্দেশ।
তাই দৃষ্টিনন্দন এই বাসাগুলো আর চোখে পড়ে না, যাও পড়ে তা বলা যায় কদাচিৎ। বাবুইয়ের শরীরের তুলনায় পাখা অনেক বড় এবং পা অনেক ছোট হওয়ায় মাটির সঙ্গে এর সংশ্রব নেই। খড়কুটোর সমন্বয়ে এত নিপুণভাবে এরা বাসা তৈরি করে যে, প্রবল ঝড়-ঝাপটা এবং বৃষ্টিতেও কিছুই হয় না। এদের যাতায়াতের রাস্তা থাকে নিচু ঝোলানো দিকে। তাই যেমন পানি প্রবেশ করতে পারে না তেমনি এরাও সহজেই উড়ে ঢুকতে পারে। ভেতরে এদের থাকার জন্য থাকে আরেকটি স্তর। সেখানেই ঘুম এবং বিশ্রাম। এরা খড়কুটোগুলো নিজেদের আঠালো লালা দিয়ে সুন্দরভাবে আটকিয়ে দেয় এবং পাতার সঙ্গেও দেয় এমন একটি বন্ধন যাতে ঝড়-ঝাপটায় উড়ে না যায়। দুলতে পারে। শিল্পীর তুলি এবং মৃৎশিল্পীর হাতও যেন হার মেনে যায় যায়। এদের কারুকার্য বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। এরা উড়ন্ত পোকামাকড় এবং বৃষ্টির পানি পান করেই বেঁচে থাকে ।

সূত্রঃ দৈনিক মানব কণ্ঠ ১৪/০৯/২০১৩

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics