ঘোড়ানিম
স্নিগ্ধ ফুল, চমৎকার পাতা ও ডালপালার জন্য ঘোড়ানিম মোটামুটি সবার পরিচিত। এ গাছকে অনেকেই ভুল করে আসল নিমগাছ মনে করেন। কিন্তু নাম প্রায় একই হলেও দুই নিমের মধ্যে অনেক বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
প্রকৃত নিম ঘনবদ্ধ পাতা ও অজস্র ডালপালায় বেশ ঝোপালো থাকে। সে তুলনায় ঘোড়ানিম স্বল্প পাতা ও ডালপালায় কিছুটা বিক্ষিপ্ত। তবে ফুলের ক্ষেত্রে ঘোড়ানিমই (Melia azedarach) রাজসিক। এ গাছের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, গুচ্ছবদ্ধ হলদেটে ফলগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। তখন খুব সহজেই গাছটি আলাদা করে চেনা যায়। প্রচলিত ইংরেজি নাম পার্সিয়ান লাইলাক, হোয়াইট সেডার, চায়নাবেরি ইত্যাদি। আর স্থানীয় নামের মধ্যে গোরানিম, কাউয়ানিম, মহানিম, পুমা, পোয়া ইত্যাদি অন্যতম। বাংলাদেশের উত্তর জনপদে এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অন্যান্য পার্ক-উদ্যানেও সহজলভ্য। বনানী রেলক্রসিং লাগোয়া রেলপথের ধারে এক সারি গাছ আছে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আছে মিয়ানমার, চীন ও ইরানে; জন্মে ইউরোপ আমেরিকায়ও।
১৮৩০ সালের দিকে আলংকারিক বৃক্ষ হিসেবে এটি আমেরিকার ক্যারোলাইনা ও জর্জিয়ায় পৌঁছায়। মূলত নিমের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যে আত্মিক যোগ আছে, ঘোড়ানিমের সঙ্গে ঠিক সেভাবে নয়। কারণ, আমাদের দেশে নিমটাই সহজলভ্য, ঘোড়ানিম মাত্র দুই দশক আগে থেকে লোকালয়ে রোপণ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত সুদর্শন পুষ্পবৃক্ষ হিসেবেই চাষ। ফুলের সৌন্দর্য নজরকাড়া এবং অনেকটা উপেক্ষিতও বটে। ফুল ঝরে পড়ার পর ফলের নান্দনিকতাও আমাদের মোহিত করে।
৮ থেকে ১২ মিটার উঁচু পত্রমোচী গাছ, মাথা ছড়ানো। বাকল ধূসরাভ-বাদামি, কাণ্ডে লম্বা ফাটা ফাটা দাগ। বসন্তে নিষ্পত্র ডালে ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ডাঁটায় ছোট ছোট নীলচে বেগুনি বা বেগুনি রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে, পাপড়ি পাঁচ থেকে ছয়টি, মাঝখানে পুংকেশরের একটি গাঢ়-বেগুনি নল আছে। বসন্তের পুষ্পোদ্যানে এই ফুল অনেকটাই ব্যতিক্রম। পরিপক্ব ফল হলুদাভ-বাদামি, ডিম্বাকার, দেড় সেন্টিমিটার লম্বা। বীজ মসৃণ, চার থেকে পাঁচটি। বংশবৃদ্ধি বীজের মাধ্যমে। গাছ ঔষধিগুণসম্পন্ন। হূদেরাগ, মাথাব্যথা, কৃমি ও বাতরোগে এ গাছের পাতা, বাকল ও ফল অত্যন্ত কার্যকর। ভারতের পাঞ্জাবে বাত রোগে এবং ইন্দোনেশিয়ায় টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে ঘোড়ানিমের বীজ ব্যবহূত হয়। এ গাছ থেকে তৈরি নিমতেল ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে অত্যন্ত কার্যকর। ফল ইন্ডিয়ান গ্রে হর্নবিল পাখির প্রিয় খাবার। কাঠ ক্রীড়াসামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার্য।
সূত্রঃ প্রথম আলো (১৫/০৫/২০১৩)
মোকারম হোসেন