হৃদয় ফোটে যেন ফুল হয়ে; অরুণ হৃৎ
তাওহীদ হোসাইন
হৃদয় বলে একটা কথা আছে না…সাহিত্য- গান- শিল্প- বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন সবখানেই হৃদয়। জগতের যাবতীয় ক্রিয়াশীলতার মূলে হৃদয়।ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় হৃদয়; বিলিয়েও যায় হৃদয়। আহা হৃদয়; হৃদয় না বলে হৃৎ ও বলা যায়। কথা হলো, আমাদের এই যাবতীয় কল্পনা অনুভূতি বা অনুভূতির প্রকাশে হৃদয় আবার একটা রঙ আর আকার ধারণ করে আছে। আমাদের হৃদয় লাল; এটি পান পাতার মতো, এটি কোমল, এটি প্রতিক্রিয়াশীল। এমন যখন অবস্থা, তখন হৃদয় নামের একটা ফুলের কাহন বর্ণনা অবতারণা করাই শ্রেয়। পার্পল হার্ট নাম যার; তাকে বাংলায় কি নামে ডাকা যায় এই ভাবনায় ডুবে থেকে থেকে মনের মধ্যে ভুস করে ভেসে এলো “অরুণ হৃৎ” এই নামখানা। যথাযথ, জুতসই হলো কি হলো না সে প্রসঙ্গে যাচ্ছিনা। প্রকৃতিবিদ কিংবা বৃক্ষবিশারদরা অন্য কোন নামে ডাকতে পারেন বটে; তবে, হৃৎ না হৃদয় সে তর্কে না গিয়ে বরং অরুণ রঙের হৃদয় কোঠরে একটুখানি উঁকি দিয়ে আসা গেলে মন্দ হয়না।
অরুণ হৃৎ বা পার্পল হার্ট এর উৎপত্তি মেক্সিকো বা উত্তর আমেরিকায়। এটি Commelinaceae গোত্রের অন্তর্গত এবং এর প্রজাতি Tradescantia pallida। একে আবার ইংলিশ ভাষাভাষীরা পার্পল কুইন বা অরুণ রাণী বলেও ডেকে থাকে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ার ফুল বলে এর বেশ পরিচিতি আছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ফুল বাগান বিলাস ফুল হিসেবে ফোটানো হয়ে থাকে। তুলনামূলক কম ঠাণ্ডা অর্থাৎ তুষারপাত নয় এমন ঠাণ্ডা আবহাওয়া কিংবা ২০-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এরা ভালো জন্মে।বছর জুড়েও এদের বাঁচিয়ে রাখা যায় পরিমিত পানি ও পরিচর্যার মাধ্যমে। আমাদের দেশের আবহাওয়া এ ফুলের জন্য দারুণ উপযোগী বিশেষ করে শরৎ থেকে বসন্ত এদের বেগুনি বা অরুণ বরণ সহজেই বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।আজকাল বিভিন্ন সরকারী বেসরকারি স্থাপনায় কিংবা বাগান চর্চায় এদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।আবার গ্রামের পথের ধারে কিংবা বনের ধারেও মেলে এদের হৃদ খোলা হাসি।
বাগানের বর্ডার, রাস্তার দুপাশে, কিংবা ঝুলন্ত টবে হরহামেশাই ফোটানো যাবে এদের। সরু গাছের প্রায় গোড়ার কাছাকাছি থেকে সরু মোড়ানো পাতা আর রসালো কাণ্ড এদেরকে টবে কিংবা কম আদ্র মাটিতে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে তবে, এদের আদর্শ আবাসস্থল হিসেবে কিছুটা আদ্র ও পানি জমে না এমন মাটিই প্রিয়। সূর্যালোক আবশ্যক তবে, দীর্ঘ ছায়ায় এরা মানিয়ে নিতে পারে সহজেই। সপ্তাহে একবার কিছুটা ছেঁটে দেয়া ভালো কেননা; উপযোগী তাপমাত্রা, আদ্রতা আর মাটি থেকে প্রচুর পুষ্টি পেলে দ্রুত বেড়ে ওঠে এর বেগুনী হাত-পা গুলো! কাণ্ড ছিঁড়ে কোথাও পুতে দিন কিংবা গোরা মাটিতে রেখেই কেটে ফেলুন গাছ, দিব্যি আবার বেড়ে উঠে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে। তবে, সুষ্ঠু পরিচর্যা না হলে সাপে বর হয়ে বরং আগাছা হয়ে অন্য গাছের পুষ্টির থালায় হাত বাড়াতে পারে!
ফুলে গন্ধ আছে। তিন পাপড়ির ফুল ফোটে; যেন হৃদয় খুলে দেখিয়ে দিচ্ছে ভালবাসা।পাতার রঙ বেগুনী তবে উজ্জল নয় যেমনটা ফুল হয়ে থাকে। পাপড়ির মাঝে আছে পুংদণ্ড আর হলুদ রঙা পুংকেশর।আকার বড়জোর ২-৩ সেন্টিমিটার। হাউসপ্ল্যান্ট বা বাসাবাড়ির ফুল হিসেবে সুনাম আছে অরুণ হৃৎ এর। ঘরের ভেতর এই গাছ লাগিয়ে ঘরের ভেতরকার উদ্বায়ী জৈব যৌগের দূষণ দূর করা সম্ভব তাতো গবেষণায় প্রমাণিত!এমন গুণের বলে রয়্যাল হার্টিকালচার সোসাইটি তরফে এ ফুলের কপালে জুটেছে এ্যাওয়ার্ড অব গার্ডেন মেরিট! আর ঘর জুড়ে বেগুনী আভা যদি দিয়েই ফেলে আপনাকে তো কি নামে ডাকবেন একে?