গোরিলা মা 'ডিয়ান ফসি'
আনিকা তাহসিন তূর্ণা
গতকাল যখন আপনি গুগলে নতুন কিছু খুঁজতে গিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই নতুন একটি গুগল-ডুডল আপনার চোখে পড়েছে। ডুডলটি ছিল অনেকটা এরকম- কয়েকটি গোরিলা এবং তাদের মাঝে একজন মহিলা। কিন্তু কেন এই মহিলাকে নিয়ে গুগল-ডুডল? মহিলাটি আর কেউ নন! সবসময়ের অবহেলিত আফ্রিকার প্রাণীদের নিয়ে যিনি সোচ্চার হয়েছিলেন, সেই ‘ ডিয়ান ফসি’।
এই মহীয়সী নারীকে নিয়েই আজকের সামান্য উপস্থাপনা। ‘এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম’ পরিবারের পক্ষ থেকে পরম শ্রদ্ধায় আমরা এই মহান প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীপ্রেমী নারীকে স্মরণ করছি।
ডিয়ান ফসি (জানুয়ারি ১৬, ১৯৩২ – আনুমানিক ডিসেম্বর ২৬, ১৯৮৫), ছিলেন একজন মার্কিন প্রাণীবিদ। তিনি ১৯৩২ সালে জন্মগ্রহন করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে গোরিলাদের উপর এক বিস্তর গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন।
‘গোরিলা ইন দ্য মিস্ট’ তার গোরিলা সংক্রান্ত গবেষণাগ্রন্থ। তিনি রুয়ান্ডায় (Rwanda) গোরিলাসহ প্রাণী বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করেন; যা ORTPN (রোয়ান্ডা ন্যাশনাল পার্ক সিস্টেম) এর বিভিন্ন নথিপত্রে পাওয়া গেছে। তিনি কুরিয়ার জার্নালসহ বিভিন্ন সায়েন্টিফিক জার্নালে তার ভ্রমণ ও গবেষণার বিষয় প্রকাশ করেন। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে জেন গুডউইল, লুইস লিকি ও জর্জ স্কেলার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।
শিক্ষাজীবনে সেন জোস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে কর্ম চিকিৎসার উপর বিএ এবং ১৯৭৪ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
আফ্রিকার প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণের কারণেই তিনি ছুটে যান আফ্রিকার কেনিয়ায় ১৯৬৩ সালে। জন আলেক্সাজানডার এর নির্দেশনায় তিনি কেনিয়া, তানজানিয়া, কঙ্গো, জিম্বাবুয়ে,আফ্রিকার বৃহত্তম ন্যাশনাল পার্ক, লেক মানইয়ারা-যা বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত; এই সকল অঞ্চলে সফল ভ্রমণ করতে সক্ষম হোন। তাঁর চূড়ান্ত ভ্রমণের মাঝে ছিল Olduvai Gorge (Tanzania) এবং Mt. Mikeno (Congo)। সেখান থেকেই তিনি তার গোরিলা সংক্রান্ত গবেষণাকর্মে মনোযোগ প্রদান করেন। তাঁর আফ্রিকা ভ্রমণের উপর তিনটি আর্টিকেল The Courier-Journal এ প্রকাশিত হয়।
ফসি ‘ইউরোপিয়ান কমিউনিটি প্রোজেক্ট’ এর অধীনে থাকা পার্কল্যান্ডকে পাইরেথ্রাম ফার্মস (pyrethrum farms) এ রুপান্তরে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ট্যুরিজ্ম এর বিপক্ষে তাঁর মত প্রকাশ করেন, কারণ গোরিলাদের ইমিউনো ক্ষমতা না থাকায় তারা ট্যুরিস্ট এর মাধ্যমে ছড়ানো ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ফসি ডিজিট ফান্ড (Digit Fund) (বর্তমানে Dian Fossey Gorilla Fund International-USA)এর সূচনা করেন যা ‘এন্টি পোচিং’ এর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
ড. ফসি অনেক পশুশিকারিকে ধরিয়ে দিতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন। তিনি ১৯৭৮ সালে দুটি অল্পবয়স্ক গরিলা Coco এবং Pucker কে রুয়ান্ডা থেকে জার্মানিতে রপ্তানির হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। রুয়ান্ডাতে অবস্থিত ন্যাশনাল পার্কে পার্ক সংরক্ষকদের দ্বারা পশু হত্যাকে আইনত নিষিদ্ধ করা হয়, কিন্তু তার কোন প্রসার দেখা যায় নি। ফসি এই ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করেন এবং এরই ধারায় ১৯৭৯ সালে চার আফ্রিকান সহ ফসি ৯৮৭ টি পশুহত্যাকারির ফাঁদ হস্তক্ষেপ করেছেন।
কিন্তু তাঁর এই পশুপ্রেম অনেক মানুষের স্বার্থে আঘাত হানে। যার প্রতিদান তাঁকে জীবন দিয়ে দিতে হয়েছিল। তিনি ১৯৮৫ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর রুয়ান্ডার ভিরুঙ্গা মাউন্টেইনে আততায়ীদের হাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তাঁর মৃত্যু যেন একটি রহস্যই হয়ে আছে।
তাঁর লেখা ডায়েরির শেষ লাইনটি এমন ছিল, “When you realize the value of all life, you dwell less on what is past and concentrate more on the preservation of the future.”
এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম ডেস্ক