![](https://www.environmentmove.earth/wp-content/uploads/2014/01/mata-mata.jpg)
কচ্ছপ! না যেন রূপকথার ড্রাগন
মাহবুব রেজওয়ান
সচরাচর দেখা না মিললেও কচ্ছপ কিন্তু আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি প্রাণী। ছোটবেলাতেই কচ্ছপ আর খরগোশের গল্পটি আমাদের মুখস্ত ছিল। কিন্তু আজ আমরা যে কচ্ছপটি নিয়ে কথা বলবো, সেটিকে দেখলে গল্পের খরগোশটি যে একছুটে পালিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটিকে কচ্ছপ বলবো, নাকি রূপকথার ড্রাগনের ছোটভাই বলবো; খুবই চিন্তার বিষয়! তবে বিজ্ঞানিরা একে কচ্ছপ বলেই ডাকতে বলেছেন। তো, যাকে নিয়ে এতো কথা! তার নামটি আসলে কি? তার নামটা, তার চেহারার মতোই। খুবই উদ্ভট। ইংরেজি নামটি বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘মাটা মাটা কচ্ছপ’ (Mata Mata Turtle)। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে, মহাশয় আমাদের আশে-পাশের এলাকার নন। তার বাস সুদূর দক্ষিণ আমেরিকায়।
‘মাটা মাটা’ বা ‘মাতা মাতা’ (যে নামেই ডাকি তাকে) কচ্ছপের বাস মূলত দক্ষিণ আমেরিকায়। দক্ষিণ আমেরিকার জীব-বৈচিত্র্যের আধার আমাজন ও ওরিনোকো অঞ্চলেই এদের বসবাস। চেলাস (Chelus) গণের একমাত্র জীবিত প্রজাতি হচ্ছে এই Mata Mata Turtle। বদ্ধ ও স্বাদু পানির জলাশয়ে এদের দেখা মেলে। এই কচ্ছপের সাথে পরিচিত হতে হলে আপনাকে এদের বাসভূমি বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং ব্রাজিলের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে যেতে হবে। এরা জলে থাকতেই ভালবাসে। তবে অল্প পানিতেই এরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এই কচ্ছপ অল্প পানিতে নিজের শরীরটা ডুবিয়ে, নাকটা উঁচু করে বাতাসের অক্সিজেন নেয়।
এই কিম্ভূতকিমাকার কচ্ছপটি প্রথম শনাক্ত করেন ফরাসি প্রকৃতিবিদ পিয়েরে বেরিরি (১৭৪১ সালে)। আবিষ্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ বার কচ্ছপটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে এর বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয় Chelus fimbriata । বেচারা হয়তো একটু ভয়েই থাকে, কখন আবার তার নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়!
এরা স্বাদুপানির কচ্ছপ। এদের মুখটি ত্রিকোণাকৃতি এবং তুলনামূলকভাবে কিছুটা বড়। এদের গায়ের রঙ সাধারনত কালো বা বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। এদের মুখের নিচের দিকে কাঁটা বা শিং এর মতো দু’টি অংশ থাকে। যা তাদের অন্যান্য কচ্ছপ থেকে আলাদা করেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে এদের নাকের উপর বড় একটি শিং ও দেখা যায়। এদের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এদের ঘাড় খোলস থেকে অনেকটা বেরিয়ে থাকে। এদের খোলসটি পরিণত অবস্থায় প্রায় ৪৫ সে.মি লম্বা হয় এবং এদের ওজন হয় প্রায় ১৫ কেজি। সম্পূর্ণ দেহের তুলনায় এদের খোলসটি আকারে ছোট হয়। এই কচ্ছপ তার লম্বা ঘাড়, গায়ের রঙ, ত্রিকোণাকার মাথার কারণে খুব সুন্দর ছদ্মবেশ নিতে পারে। এদের দেহের শক্ত খোলস দেখে মনে হয় যেন একটি গাছের গুড়ি, আর মাথাটি দেখলে মনে হবে যেন মরা পাতা। এদের পায়ে কিন্তু কাঁটার মতো বড় বড় নখ থাকে।
শিকার ধরারও বেশ কায়দা জানে এই কচ্ছপ। পানির নিচে যখন শিকার কাছাকাছি আসে, তখন এরা মুখ হা করে বসে থাকে। তখন এরা এদের মুখের ভিতর একটি বায়ুশূন্য অবস্থার সৃষ্টি করে। এতে করে ঐখানের সব পানি এদের মুখে প্রবেশ করে। তখন এরা মুখটি বন্ধ করে দেয়। মুখের ফাঁকা অংশ দিয়ে সমস্ত পানি বেরিয়ে যায়। আর মাছটি মুখের ভেতর আটকা পড়ে। এদের খাদ্য তালিকায় জলজ ছোট ছোট পোকা-মাকড়, ছোট জলজ প্রাণী ও ছোট মাছ অন্তর্ভুক্ত। এই প্রজাতির কচ্ছপের প্রজননকাল সাধারনত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরা কিছুটা উঁচু জমিতে ডিম পাড়ে।
‘মাটা মাটা’ কচ্ছপ একুরিয়ামে অথবা ডিসপ্লের জন্য খুব মানানসই। এরা দেখতে যতই অদ্ভুত হোক, এরা স্বভাবে একেবারেই আক্রমণাত্মক নয়। আর খুব অল্প পানিতেই স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে। এসব কারণে একুরিয়াম সাজানোর জন্য পৃথিবীব্যাপী এদের বেশ চাহিদা। এই কচ্ছপকে আপনার একুরিয়ামে সাজাতে চাইলে আপনাকে কিন্তু অনেক অর্থ খরচ করতে হবে। তবে এদেরকে সুস্থ রাখতে হলে আপনাকে পানির গুনাগুনের দিকেও যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। কিছুটা উষ্ণ ও অম্লীয় পানি এদের বসবাসের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।