শিশুদের জন্য বিষমুক্ত খাদ্য চাই- পবা'র আহবান

খাদ্যে বিষ আর ভেজালের ব্যাপকতায় বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও আশংকাজনকহারে বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। খাদ্যের মতো এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বিশেষ করে শিশু খাদ্যে অপ্রতিরোধ্য বিষ-ভেজালের মিশ্রণে মা-বাবা, অভিভাবকরা আতংকিত। এমতাবস্থায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর যৌথ উদ্যোগে আজ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, শুক্রবার, সকাল ১০ টায় শিশু একাডেমিতে খাদ্যে বিষ ও ভেজালের শিশু চিত্রাংকন এবং বিষমুক্ত শিশু খাদ্যের দাবীতে সকাল ১১টায় শিশু একাডেমি থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মা-বাবাদের পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।

অভিভাবকরা জানান- নানা ধরনের বিষাক্ত ও নিম্নমানের খাদ্যের কারণে আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর অসুখের ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। বিষাক্ত খাদ্যে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। কিছু খাবার এমনই বিষাক্ত যে তা ডিএনএকে পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। কলা, পেপেসহ বিভিন্ন ফল কৃত্তিম উপায়ে পাঁকাতে ব্যাপকভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশন, বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম ক্রমবৃদ্ধি নিয়ামকসহ (Artificial Hormone Growth) বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক এবং তাজা ও সতেজ রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে । মিষ্টিতে কৃত্রিম মিষ্টিদায়ক, আলকাতরা এবং কাপড়ের রং প্রয়োগ করা হয়। মাছে ফরমালিন, শাকসবজিতে কীটনাশক ও ফরমালিন, শুটকিতে ডিডিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যাকেটজাত খাদ্য যেমন ফলের রস, স্ন্যাকফুড, জ্যাম-জেলী, আচার-চাটনীতে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হয়। এমনকি মুড়ি ও চিড়াতেও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করা হয়।P1010893

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে এসবের প্রভাবে গলায় ক্যান্সার, রক্ত ক্যান্সার, বাল্য হাঁপানি এবং চর্ম রোগ হয়। ফরমালিনযুক্ত খাবার মানুষের শরীরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফরমালিন মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ কিডনি ও লিভার রোগের উৎপত্তির অন্যতম প্রধান কারণ। এতে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি, অস্থিমজ্জা জমে যায়। গর্ভবতী মহিলারা জন্ম দিতে পারে বিকলাঙ্গ শিশু। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। শিশুদের ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ফুসফুসের সংক্রমণ, কিডনি ও লিভার পচে যাওয়া, রক্ত সরবরাহ বিঘিœত হওয়া, অন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। দেশে বর্তমানে ২কোটি মানুষ কিডনী রোগের আক্রান্ত, ক্যান্সার প্রতিষেধক ব্যবহার বছরে বিশ শতাংশ হারে বাড়ছে, বাড়ছে মাতৃগর্ভে শিশু মৃত্যু, এবং জন্ম হচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু ।

রাসায়নিক রং ও বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ভোজ্য তেল তৈরী করা হয়। বিষাক্ত রং ব্যবহার করে সাদা ডিম লাল করা হয়। এছাড়াও লাল শাকের মধ্যে লাল রং গ্রহণে অল্প বয়সের শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে, মাথা ধরা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সেমাই ও নুডলসে ফরমালিন মেশানো হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, নাসফের সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলি, উইমেন্স ফেড়ারেশন কলেজের প্রফেসর সফিল্লাহ সরকার, বাংলাদেশ পীস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, শিশু একাডেমীর পরিচালক নুরুজ্জামান প্রমুখ।

সরকারের ভেজাল বিরোধী অভিযান সত্বেও বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য ব্যবসায়ীদের উপর কোন প্রভাব পড়ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পংঙ্গু জাতিতে পরিণত হব । বিষাক্ত খাদ্য নিরব ঘাতক হিসাবে কাজ করছে। বিদ্যমান আইন, ভ্রাম্যমান আদালত গণহত্যামূলক এ অপরাধে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করার ফলে অতি মুনাফ লোভী অসৎ খাদ্য ব্যবসায়ীদের তান্ডবতা বেড়েই চলছে।P1010840

বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহতা বিবেচনায় সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এবং ০১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মন্ত্রিসভা নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ (খসড়া) অনুমোদন করে। আইনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের শাস্তির জন্য বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও বিভিন্ন অংকের অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে এবং প্রথমবার একটি অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব সাত বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। পুনরায় একই অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক বিশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। ইহা ছাড়াও উক্ত দোকান, কারখানা ও উহার যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা যাইবে। ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে পুণরায় অনুমোদন করেছে। অনুমোদিত এই আইনের খসড়ায় অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। আমরা জানিনা কাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদিত আইনটি আবার নতুন করে মন্ত্রিসভায় রিভিউ করার জন্য উঠনো হয়েছে এবং শান্তির মেয়াদ কমানো হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সর্বশেষ খসড়ায় ক্ষতিপুরণের বিধানও রাখা হয়নি।

করণীয় ১, যারা খাদ্যদ্রব্যে বিষ মিশিয়ে নিরবে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, একটা জাতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে তাদেরকে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডের বিধান রেখে যে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ মন্ত্রিসভা আনুমোদন করেছে কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনে প্রথমবার একটি অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব সাত বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক দশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। পুনরায় একই অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তি অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বছরের কারাদন্ড, বা অনধিক বিশ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন বিধান রেখে জাতীয় সংসদের বর্তমান অধিবেশনে আইনটি পাশ করতে হবে।

২, নিজের ও সন্তানেরসহ সকল শিশু ও মা এবং জনগণের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদেরকে সকল খাদ্যে বিষ ও ভেজাল মিশানো থেকে বিরত থাকা।

৩, খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের বিদ্যমান আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।

৪, জনগণের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজাল রোধে কোন রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫, খাদ্যে বিষ মেশানোর সাথে জড়িত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

৬, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং পরিদর্শন ও এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের সাধন।

৭, পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর কর্তৃক ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা।

৮, গণমাধ্যমে প্রচার- প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিষয়ে সচেতন করা।

৯, ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তাদের পরিবার-পরিজন সর্বশান্ত হচ্ছে। তাছাড়া রাষ্ট্রকে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। রাসায়নিকের মিশ্রণে বিষাক্ত খাদ্যের কারণে সৃষ্ট এ বিপর্যয় রোধে সরকারীভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।

এনভাইরনমেন্টমুভ ডটকম

আরো দেখান

Related Articles

One Comment

  1. অসাধু ব্যবসায়ীক চক্রেই ভেজাল ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তা সাধারণ

    নজরুল ইসলাম তোফা:: ফল মানুষের অনেক প্রিয় খাবার। ফল জাতীয় এই খাদ্য মানুষের ১ম মৌলিক চাহিদা। এই খাদ্যের চাহিদা সকল মানুষের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আম, জাম, কলা, লিচু, পেয়ারা,
    পেঁপে, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, কাঁঠাল ও জামরুল থেকে শুরু করে আপেল, আঙ্গুর, বেদানা, নাশপাতি সহ দেশ বিদেশের বহু জানা অজানা ফল মানুষের প্রিয় খাদ্য। এক কথায় বলতে পারি যে, মানব জাতি প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া এমন এ ফল গুলোকে পছন্দ কিংবা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না এমনটাই বিরল। এই খাদ্য বিশেষত গ্রামাঞ্চলেই অনেক বেশি উৎপাদন হয় এবং তা শহরে পৌঁছে একেবারে নামি দামি খাবার হয়ে যায়। তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই সকল ফলের গুনাগুনের মাত্রা কেমন তা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পেরে অনেকটাই যেন বুঝতে শিখেছে। তাঁরাও পরিবার পরিজন নিয়ে খুব উৎসব মুখর ভাবেই খেয়ে থাকেন। গ্রামের মানুষ উৎপাদিত এমন এ ফলগুলো বাজার জাত করেই অনেক অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু বলতেই হচ্ছে যে, বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন ফলগুলো ক্রয় করে শহরে এনেই ভেজালে পরিনত করছে। এই দেশের জনগণ প্রতিদিন যেসব অন্যান্য খাবার খেয়ে থাকে তাতেও বলা যায় সম্পূর্ণরূপেই ভেজালযুক্ত কিংবা নিরাপদ
    খাবার নয়। তাই ফল সহ বহু খাদ্যেই এখন ভেজাল মেশানো প্রক্রিয়া অনেকটাই ব্যতিক্রম ধারায় বিভিন্ন তথ্য উঠে আসছে। বিশেষ করে গ্রামের উৎপাদিত হরেক রকমের ফল শহরে এনেই দোকানে দোকানে সেই ফল গুলোতে কার্বাইড, হাইড্রোজ, ইথোপেনসহ বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক বিষের সংমিশ্রণেই অসাধু ব্যবসায়িকরা ঘটায় ভেজাল। যা কিনা ক্ষতিকারক এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে জন্য হয়। তাই বলতেই হয় যে, এই সব ফল খেয়েই মানুষের কিডনি ফেইলর, হার্টঅ্যাটাক, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রকারের জটিল রোগ দেখা দেওয়াটাই যেন স্বাভাবিক।
    চিকিৎসক কিংবা কৃষিবিদ এর পরামর্শ অনুযায়ীই বলা যায় যে, ফল ব্যবসায়ীরা সাধারণত যে গুলো নিম্ন মানের কার্বাইড ব্যবহার করে তা থেকেই প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক তৈরি হয়। এমন আর্সেনিক বা সেঁকো বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং সেই বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এমন নানা রাসায়নিক পদার্থযুক্ত বিষময় ফল ধীরে ধীরেই মানুষের লিভার এবং কিডনি অকেজো করে। হার্টকেও অনেকাংশে দুর্বল করে দেয়, ব্রেনকে ন্যুব্জ এবং স্মৃতি শক্তিটাও কমে যায়। অস্বাভাবিক ভাবেই অ্যাসিডিটি বাড়ায়। ফরমালিন মিশ্রণের ফল দৈনন্দিন খাওয়ার ফলেই
    শ্বাসনালিতে ক্যান্সার, ফুসফুস, পাকস্থলীতে বিভিন্ন রোগ এমন কি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে। পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউট এর ফল পরীক্ষার তথ্যানুযায়ীই বলতে হয় যে, এ দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল এবং দেহের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই চিহ্নিত হয়েছে। সারা দেশ থেকেই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্য দ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তাছাড়াও ফল বা খাদ্য পরীক্ষায় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাঁর তথ্যের আলোকেই বলতে পারি, রাজধানী সিটি শহর গুলোতেই বাজার জাত খাদ্য পণ্যের অন্তত ৭৯ ভাগ ভেজাল। এমন সব ফলমূল কিংবা অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য মৌসুমের আগেই বিক্রি ও তাকে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানোটাই মৌলিক উদ্দেশ্য। না মিশ্রণ ঘটালে যেন তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়, এমন ভাবেই বুঝাতে চেষ্টা করলেন অসাধু ব্যবসায়িকরা।
    ভেজাল খাদ্য খেয়ে এদেশের মানুষ বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু অথবা গর্ভবতী মাদের ভেজাল ফল বা অন্য খাদ্যে তাদের বিষক্রিয়া হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা বিকলাঙ্গ হচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল জনিত বেশ কিছু রোগই হয়ে থাকে। যেমন: আমাশয়, রক্তচাপ,
    অ্যাপেনডিক্স, হূদরোগ এবং বিশেষ করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে উদ্বেগ জনক ভাবেই মৃত্যু হার
    যেন বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতে বলতেই হয়, খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেই উল্লেখ যোগ্য ভূমিকা বাজারের ভেজাল ফল। যা মানুষকে অকাল মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হচ্ছে। ভেজালের বেপরোয়া দাপটের মধ্যেই আসল পণ্য খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর। জীবন যাপনে এমন এ নোংরা পরিবেশে ভেজাল কিংবা নকলের সীমাহীন দৌরাত্ম্যকে কোনো ভাবেই রোধ করা সম্ভব হয় না। অপরিপক্ব গাছের ফল অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে তাকে কাঁচা থেকে পাকাতেই ক্যালসিয়াম কার্বাইড কিংবা তাকে উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তর করবার জন্যই তাতে অধিক পরিমাণ ক্ষার জাতীয় এক প্রকারের টেক্সটাইল রং সংমিশ্রণ করছে অবাধে। জানা যায়, ফল গাছে থাকার পর্যায় থেকেই বাজারে বিক্রয়ের মুহূর্ত পর্যন্তই এক একটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত এই গ্যাস জাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন জাতীয় ইথরিল অতি মাত্রায় স্প্রে করে। সুতরাং বলা যায় যে, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই গাছের ফল গুলো রীতি মতো বিষে পরিণত হয়। অসাধু এমন ব্যবসায়ীরাই বলে থাকে কিংবা দাবি করে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই ফলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়।
    কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই এ রোগ বাড়ছে।
    বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুযায়ী ডায়াবেটিস, আর্সেনিক, আলসার, অপুষ্টি, চর্ম ও কুষ্ঠরোগেও যেন মৃত্যু হার অনেকাংশে ঊর্ধ্বমুখী। শুধুমাত্র ভেজাল খাদ্যগ্রহণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যেই প্রতি বছর প্রায় ৫৭ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ভাবেই শারীরিকভাবে অযোগ্য বা কর্মহীনতায় জীবন যাপন করছে।
    সারা বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দিয়ে যদি কিছু আলোচনায় আসা যায় তা হলে বলতেই হয় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দেরই আগে আমেরিকাতেও ভেজাল পণ্য বিপণনেই ছিল সীমাহীন প্রতারণা, পণ্যে ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণ ভেজাল, পণ্য সম্পর্কে দেওয়া হতো না বিশদ তথ্য, গড়ে উঠে ছিল একচেটিয়া ভেজাল কারবারি পরিবেশ আবার ক্রেতারা ছিল ব্যবসায়ীদের হাতের পুতুল। এ সকল অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে ক্রেতা হয়ে উঠে ছিল সোচ্চার এবং গড়েও তোলেও ছিল চরম আন্দোলন। তাই তো প্রতারিত হওয়া ভোক্তা কিংবা ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণেই উদ্ভব হয়েছিল ভোক্তাবাদ বা কনজুমারিজম। সুতরাং ক্রেতা সাধারণের সুফল পেতে বা অধিকার সংরক্ষণে জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছিল খাদ্যেভেজাল বিরোধী ৭টি মুলনীতি। সেই গুলো এখানে উল্লেখ না করেই বলি, এমন সঠিক প্রস্তাবের জন্যই অনেক দেশ বিদেশের কর্মকর্তারা সমর্থন করেছিল। ভেজাল রোধের এমন কর্মসূচি আন্তর্জাতিক ভাবেই উঠে এসেছে । সুতরাং বিদেশীদের কাছ থেকে এই দেশের ব্যবসায়ীক চক্র ফলমূল বা খাদ্যদ্রব্যে মতো বিভিন্ন খাবারে ভেজাল দেয়ার কুশিক্ষা রপ্ত করেছে বৈকি। এ দেশের মানুষ আগে খারাপ কিছু করাটাই আগে শিখে, হয় তো বা তারই আলোকে এদেশে দিনে দিনে ভেজালের মাত্রা বাড়াতেই থাকছে। আর একটু বলতে হচ্ছে তাহলো, বিদেশিরা এদেশের মানুষকে পরিকল্পিতভাবেই যেন অসুস্থ রাখতে চায়। কারণ, তাদের উৎপাদিত ঔষধ বিক্রয়ের প্লাটফর্ম হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এ অসাধুু ব্যবসায়ীরা তাদের সে চতুর ষড় যন্ত্রের বেড়া জালে অসংখ্য মানুষকেই মরন পথের যাত্রী বানিয়ে ছাড়ছে। বর্তমানে ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে, কখনও সখনও দেখা যায় যে, কাউকে না কাউকেই হাতে নাতেই ধরছে। তারা মোটা অঙ্কের ঘুষ ও পেশী শক্তি সহ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় যেন পারও পেয়ে যাচ্ছে। আসলেই নিরাপদ খাদ্য আইন সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার পাশাপাশি বলতেই হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা এবং জনগণ সচেতন এবং সোচ্চার না হওয়ার জন্যেই যেন ফল বা খাদ্যের ভেজাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এই অবস্থার যদি ইতিবাচব ভাবে পরিবর্তন ঘটানো না যায়, তাহলে আগামীতেও এর অনেক কুফল খুব ভয়ানক এবং বিপজ্জনক হবে। সময় মতোই মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পাবে। সুতরাং খাদ্য-দ্রব্যাদিতে ভেজাল এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো রোধে বিভিন্ন গণমাধ্যম সহ সকলের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আশা প্রয়োজন বলে মনে করি। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজন এই ব্যাপারে জনসচেতনতা অনেক বৃদ্ধি করা। সর্বশেষে একটি কথা বলতে চাই যে, ফলমূল বা খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল রোধে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজ নৈতিকতাবোধকে অনেকাংশেই জাগ্রত করা। নিজ বিবেককে জাগ্রত করে এবং বিভিন্নভাবে পর্যবক্ষেণ করেই খাদ্য-দ্রব্যাদি ক্রয় করতে হবে।

    লেখক:
    নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics