সুন্দরী সাত ডোরা
আ ন ম আমিনুর রহমান
চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ির সার্সন রোডে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোটি টিলার ওপর। সেখানে উঠেছিলাম বছর কয়েক আগে, সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে। চারদিক গাছপালায় ঘেরা। চমৎকার পরিবেশ। স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম। ওরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিল। ঢাকার দমবন্ধ পরিবেশ থেকে অন্তত কিছুটা মুক্তির স্বাদ। হাঁটতে হাঁটতে গেটের সামনে চলে এলাম। ওখানে বাগানবিলাসের দুটি গাছ। সেখানেই চোখে পড়ল অপূর্ব দৃশ্যটি। পটাপট দুবার ক্লিক করলাম। এরপর সে পালাল। এরপর ওকে বনবাদাড়, ঝোপঝাড়, শহর, গ্রাম— সবখানেই বহুবার দেখেছি। ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। যতবার দেখেছি, ততবারই ছবি তুলেছি। সে হলো এ দেশের অতি সুন্দর এক প্রজাপতি সাত ডোরা (Lime Swallowtail)। লেবু বা এজাতীয় গাছেই এদের বংশবৃদ্ধি হয় বলে ‘লেবুর প্রজাপতি’ (Lime Butterfly) নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Papilio demoleus।
বাংলাদেশের সুন্দর প্রজাপতিগুলোর মধ্যে সাত ডোরা একটি। এরা আকারে ৮০-১০০ মিলিমিটার। এই প্রজাপতিগুলো দেশের সবখানেই দেখা যায়। বাগান, খোলা মাঠ, কৃষিজমি, নদীনালার পাড়, চিরসবুজ ও আধা চিরসবুজ বন—কোথায় নেই সে? দিনভর লেবু ফুলে উড়ে উড়ে লম্বা শুঁড়টি দিয়ে রস পান করে বেড়ায়। রঙ্গন এবং অন্যান্য ফুলেও বসে। তবে সারা বছর দেখা গেলেও বর্ষা ও বর্ষার শেষেই আনাগোনা বেশি। পাহাড়ি এলাকায় দুই হাজার মিটার উঁচুতেও বাস করতে পারে।
এদের ডানার রং কালো বা কালচে-বাদামি; তার ওপর বিভিন্ন শেডের লেবু-হলুদ রঙের কারুকাজ। ডানার মতো দেহেও রয়েছে কালো ও লেবু-হলুদ ডোরা। সোয়ালো পাখির মতো বিভক্ত লেজওয়ালা পরিবারের সদস্য হলেও এদের কিন্তু লেজ নেই। পেছনের ডানার ওপর দিকের ভেতরের প্রান্তে লাল-নীল-কালো রঙা গোলাকার চোখের মতো কারুকাজ রয়েছে। সামনের ডানার নিচের দিকে কালো বা বাদামি-কালোর ওপর লেবু-হলুদ ও কমলা দাগ রয়েছে। অন্যদিকে পেছনের ডানার নিচের দিকে কালচে ভাব কম, তাতেও আছে লেবু-হলুদ ডোরা। আরও আছে সাতটি কমলা-নীল-কালো ডোরা, যার কয়েকটি দেখতে চোখের মতো। আর এ জন্যই এদের নাম সাত ডোরা। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একই রকম।
স্ত্রী সাত ডোরা লেবুর কচি পাতার ওপরে দিকে ডিম পাড়ে। পাতাপ্রতি একটি করে ডিম। গোলাকৃতির এই ডিমগুলো হালকা হলুদ। চার থেকে সাত দিনে শূককীট বের হয়। এক মাসের মধ্যেই এদের জীবনচক্র সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, এশিয়ার কয়েকটি দেশ, পাপুয়া নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ায় এদের পাওয়া যায়।
লেখাটি ৩/১২/২০১৩ তারিখে দৈনিক ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।