মাটি শোধনে বায়োফিউমিগেশন

বিজ্ঞানীরা মাটিতে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত রোগজীবাণুকে ধ্বংস করতে মাটি শোধনের এমন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যা প্রয়োগ করে সবজি ফসলকে মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচানো যায়। কপিগোত্রীয় বিভিন্ন গাছ বিশেষ করে মুলা, সরিষা, কপি ইত্যাদি গাছ মাটিতে মিশিয়ে দিলে তা থেকে মাটিতে এক ধরনের গ্যাস নিঃসরিত হয়। আইসো থায়োসায়ানেট (আইটিসি) নামের সেই বিষাক্ত গ্যাসই মাটিতে লুকিয়ে থাকা জীবাণুদের ধ্বংস করে। যেহেতু গাছ মানে জীব (বায়ো), সজীব উপকরণ ব্যবহার করে তার গ্যাসকে (ফিউম) কাজে লাগিয়ে মাটি শোধন করা হচ্ছে তাই এ পদ্ধতির নাম দেয়া হয়েছে ‘বায়োফিউমিগেশন’ কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে এ পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে। মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন বালাই ও রোগজীবাণুকে এ ধরনের বায়োসাইড ব্যবহার করে দমিয়ে রাখার কৌশল একেবারেই নতুন, তবে ব্যয়সাশ্রয়ী। কিন্তু গাছ হিসেবে চওড়া পাতার যেকোনো জাতের সরিষাগাছ এ কাজের জন্য উত্তম। অগত্যা শিয়ালমূত্রা আগাছা দিয়েও এ কাজ চালানো যায়। এ আগাছা আমাদের দেশে রাস্তার ধারে ও ডোবানালার পাশে জন্মে। ব্যাপকভাবে বিশাল জমিখণ্ডে হয়ত এ পদ্ধতির ব্যবহার লাভজনক হবে না, তবে বীজতলার একখণ্ড জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে চারার মড়ক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ইন্ডিয়ান সরিষা ভাল ও বীজের দাম কম। তবে মুলা ও চীনা সরিষা শাকও এ কাজে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
biofum 2
বায়োফিউমিগেশন করতে হলে প্রথমে বীজতলার উপরের মাটি ৭.৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার গভীর করে তুলে ফেলতে হবে। মাটি তোলার পর জায়গাটা একটা অগভীর চৌবাচ্চার মতো মনে হবে। তারপর বাড়ন্ত বয়সের সরিষা বা কপি (চীনা বাঁধাকপি/বাটিশাক) সংগ্রহ করে কুচি কুচি করে কাটতে হবে। কুচি যত ছোট হবে তত বেশি আইটিসি গ্যাস বের হবে। তারপর প্রতি বর্গমিটার জায়গার জন্য ৫ কেজি হারে কাটা কুচিগুলো মাটি তুলে ফেলা জায়গায় পুরু করে বিছিয়ে দিতে হবে। এরপর তুলে রাখা মাটি এর ওপর দিয়ে মাটির সাথে গাছের কুচিগুলো মিশিয়ে দিতে হবে। মেশানোর পর সেখানে পানি দিয়ে ভাল করে ভেজাতে হবে। ভেজানোর পর সম্পূর্ণ বীজতলার মাটি কালো মোটা পলিথিন দিয়ে ঢেকে পলিথিনের চারপাশ মাটির মধ্যে পুঁতে দিতে হবে যাতে ভেতরের কোনো গ্যাস বাইরে না আসে। এভাবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ রেখে দিলে গাছের কুচিগুলো পচে গ্যাস ছাড়বে ও সেই গ্যাস মাটির ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও কৃমিকে মেরে ফেলবে। উপরন্তু গাছ পচে সবুজ সারের মতো মাটিতে জৈব পদার্থ যোগ করে উর্বরতা বাড়াবে। পরে পলিথিন উঠিয়ে ফেলে দু-একদিন রোদ খাওয়ানোর পর ফের চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করে সেখানে বীজ বপন করলে রোগ কম হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া কৃমিজনিত শিকড়ে গিঁট রোগও এ পদ্ধতিতে কমানো যায়। বেলে মাটিতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বেশি সুফল পাওয়া যায়।
মৃত্যুঞ্জয় রায়
লেখক: কৃষিবিদ ও কৃষি প্রাবন্ধিক

http://www.ittefaq.com.bd

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics