বিস্ময়কর আমাজান
দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত আমাজান পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। আর চওড়ার দিক দিয়ে এটিই প্রথম। আমাজানের দৈর্ঘ্য প্রায় চার হাজার মাইল। আর গড়ে প্রায় সাড়ে সাত মাইল প্রশস্ত। আমাজান যেখানে সাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে সেখানে এর প্রশস্ততা প্রায় ২০২ মাইল। আন্দিজ পর্বতমালার যে অংশ ব্রাজিলে অবস্থিত, সেখান থেকেই এই নদীর উৎপত্তি। এরপর পেরু, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলার ভেতর দিয়ে এক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে আমাজান শেষমেশ গিয়ে মিশেছে আটলান্টিক মহাসাগরে। পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর নদী বলা হয় ‘আমাজান’কে। নদীটির নামকরণ করেছে স্প্যানিশরা। গ্রিক পুরাণে বর্ণিত সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী নারীরা হলেন ‘আমাজান’ আর তাদের নামেই নামকরণ করা হয়েছে প্রমত্তা এই নদীটির। প্রতি সেকেন্ডে আমাজান থেকে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন গ্যালন পানি সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে, যার তোড়ে মোহনা থেকে প্রায় ১০০ মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের পানিতে কোনো লবণাক্ততাই থাকে না। পৃথিবীর সব নদী একত্রে যে পরিমাণ পানি সমুদ্রে ফেলছে আমাজান একাই তার ২০ শতাংশ পানি বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রে। আর এ কারণেই আমাজানকে অনেক সময় ডাকা হয় ‘সাগরনদী’ নামে। স্থানবিশেষে আমাজানের গভীরতা প্রায় ৩০০ ফুট। বর্ষাকালে প্রশস্ততা আরও বেড়ে যায়। নদীর দুই পাড় আর মাঝখানের দ্বীপগুলোও ডুবে যায় পানির নিচে।
পৃথিবীর অন্যসব নদ-নদীর চেয়ে আমাজানের মোহনা চওড়া। আমাজানের প্রস্থ ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির দ্বীপ মারাকোর অবস্থান এ নদীর মোহনা। মারাকোর আয়তন প্রায় ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। আমাজান-আটলান্টিকের সঙ্গমস্থল থেকে ইকুইটাসের দূরত্ব প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার। সারা বছরই এ অংশে পানির পৃষ্ঠ থেকে নদের তলদেশ পর্যন্ত গভীরতা ৪০ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত বজায় থাকে। সুতরাং এ স্রোতে বা গভীরতায় কারও আমাজানের তলদেশ স্পর্শ করার সাধ জাগলেও সেটা স্রেফ মামা বাড়ির আবদার বৈ আর কিছু নয়। আমাজান নদের প্রধান দুই শাখা নদী কুরুয়া ও মাদিরা ৩৩০ কিলোমিটার লম্বা। প্রায় এক হাজার ১০০ শাখা নদী আমাজানের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বছরের কোনো কোনো সময় পানির স্তরের ব্যাপক ওঠানামার অর্থ হলো সমগ্র আমাজান অববাহিকা বছরের কোনো না কোনো সময়ে প্লাবিত হওয়া।