প্রজাপতি রক্ষায় বনায়নের বিকল্প নেই
পৃথিবীর সৌর্ন্দয বলতে প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযকে বুঝায়। প্রকৃতি বৈচিত্রময় বলে আজ পৃথিবী এত সুন্দর। আর এই প্রকৃতি গঠিত হয়েছে এর মাঝে বিচরণশীল ও অবিচরণশীল নানা রকম জীব নিয়ে।এসব জীবের মধ্যে প্রজাপতি প্রকৃতিকে অনেকাংশেই বৈচিত্রময় করেছে ।ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল শ্রেণীর মানুষ বিমোহিত হয় নানা রঙ বেরঙের প্রজাপতির সৌন্দর্যে । প্রজাপতি যখন ডানা মেলে এফুল থেকে ওফুলে উড়ে বেড়ায় তখন তার প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণ অন্য প্রাণীর চেয়ে একটু বেশী বলা চলে।অন্যান্য প্রাণীর দিকে মানুষ ঢিল ছুঁড়ে আনন্দ পায় কিন্তু প্রজাপতির ক্ষেত্রে তার স্বাধীন বিচরণেই মানুষ সব চেয়ে বেশী আনন্দ পায়।রাতের আঁধারে যেমন জোনাকীর রাজত্ব দিনের আলোতে তেমন প্রজাপতির রাজত্ব। প্রকৃতির মাঝে নানাবিধ ফুলে প্রজাপতিরা যখন মন মাতানো রঙের মেলা বসায় তখন সত্যিই প্রকৃতির মাঝে যেন এক নতুন গতির সঞ্চারণ ঘটে।কেননা তারা বিভিন্ন ফুলে বিচরণের মাধ্যমে পরাগায়ণে সাহায্য করে। ফলে বিশাল এক বৃক্ষ ছোট্ট এক প্রজাপতির মাধ্যমে তার বংশকে টিকিয়ি রাখে ফল ও বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে।প্রজাপতি এমনি এক প্রাণী যা মানুষের খাদ্যে ভাগ বসায় না বরং পরাগায়ণ ঘটিয়ে এই মানুষের খাদ্য উৎপাদনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে আর আকর্ষণীয় সব রঙের ডানা মেলে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয় ।
কিন্তু বাস্তবতা হল বর্তমানে মানুষ অল্প সময়ে অধিক মুনাফার জন্য গাছ-পালা, বন-জঙ্গল কেটে কিছু নির্দিষ্ট গাছ রোপন করছে এবং ফসলি জমি তৈরি করছে। আবার অনেকে বসত-বাড়ী কিংবা দোকান-পাট তৈরি করছে। ফলে পূর্বে যেখানে বিভিন্ন গাছের সমারোহ ছিল এবং সারা বছর কোন না কোন কোন ফুল ফুটত এখন সেখানে কিছু নির্বাচিত গাছ লাগানোর কারণে কেবল সুনির্দিষ্ট সময়ে ফুল ফোঁটে। ফলশ্রূতিতে একদিকে বনাঞ্চল ধংসের কারণে যেমন তাদের আবাস স্থল কমে যাচ্ছে অপর দিকে তাদের খাদ্যেরও সংকট দেখা দিচ্ছে । এর ফলে তাদের বংশবিস্তার হ্রাস পাচ্ছে আর প্রকৃতি হারাচ্ছে তার সৌর্ন্দয ও গতি।
তবে মানুষ হিসাবে শুধু কারণ খোঁজাই আমাদের একমাত্র কাজ হতে পারে না, তার সমাধানও খুঁজে বের করতে হবে আমাদেরকেই। এই বিজ্ঞানের যুগেই আমরা ২০ ভাগ ক্ষতিকর পোকামাকড় মারতে গিয়ে ৮০ ভাগ উপকারী পোকামাকড় ধংস করছি।তবে আশার কথা হল, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উপকারী পোকা তৈরি করেছে এমনকি অনেক জায়গাতে এর ব্যবহারও শুরু হয়েছে। কিন্তু এর ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে ক্রমে উপকারী পোকামাকড়ের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমে যাবে আর ক্ষতিকর পোকামাকড় বেড়ে যাবে। যার ফলে ক্ষতিকর পোকা দমনে বিভিন্ন কীটনাশকের ব্যাবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলস্বরূপ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এবং উপকারী পোকামাকড় ধ্বংসের ফলে প্রাণীকূলের ফুড চেইন হুমকির মুখে পড়বে।
এখন বর্ষাকাল চলছে আর এ সময়ই গাছ রোপনের জন্য উপযুক্ত। আমাদের উচিৎ এই সময়ে ব্যাপকহারে গাছ লাগানো। পৃথিবীর একটা সত্য নিয়ম হল প্রতিটা প্রজন্ম তার পূর্বেকার প্রজন্মের ভালো কাজগুলোকে অনুসরণ করে।আমরা কেউ চাইব না যে তারা অমাদের মত পরিবেশ বিরোধী কাজে লিপ্ত হবে।আর সেটা হলে পৃথিবী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।অতএব পৃথিবীর ভারসম্য রক্ষায় গাছ লাগানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে সময় ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে কারণ গাছ কাটার সাথে তাল রেখে বৃক্ষায়ন খুবই কম। এক্ষেত্রে সচেতন মানুষ হিসাবে আমাদেরকেই অগ্রণী ভূমিকায় এগোতে হবে সকলকে বৃক্ষ রোপনে উৎসাহী করতে এবং নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস রোধে।
অবশ্য এটাও সত্য যে, এ ধরণের কাজে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও সঠিক দিকনের্দশনারও প্রয়োজন আছে। এ জন্য আমরা মনোয়ার হোসেন তুহিন স্যার সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির্গের সাথে আলোচনা করতে পারি। কারণ স্যার যখন প্রজাপতি মেলার আয়োজন করেন তখন প্রথমেই তিনি ভেতরে নানা ধরণের গাছপালার সমাবেশ ঘটিয়ে প্রজাপতির উপযুক্ত বাসস্থান নিশ্চিত করেন।অতএব আমি মনে করি যে , স্যার এ বিষয়ে আন্তরিক হবেন এবং তার সঠিক দিকনির্দেশনার সাহায্যে প্রজাপতি মেলার মত অদূর ভবিষ্যতে প্রজাপতির বাসস্থানের মেলার আয়োজন করবেন আর এর মাধ্যমে সবুজায়নে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমাদের এই প্রকৃতিকে আরও বেশী সুন্দর ও নিরাপদ করতে যথাযথ ভূমিকা রাখবেন।
মেহেদী হাছান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ফার্মেসী বিভাগ