সোনালি আঁশ আমাদেরই
দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেল। ২০১০ সালে তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, এবার বলা যায় তা পূর্ণতা পেল। সোনালি আঁশ এখন আমাদেরই। এই গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন। আর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই গবেষণাকাজকে সহায়তা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৃত্বিত সরকারের। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই সাফল্যের কথা দেশবাসীকে জানিয়েছেন। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
বাংলাদেশের গবেষকেরা এই যে সাফল্য পেয়েছেন, এর নানা দিক রয়েছে। প্রথমত, এই অর্জনের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে ‘পাট’ বিষয়টির ওপর বাংলাদেশের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেল। ভবিষ্যতের দুনিয়ায় যখন স্বত্ব বা পেটেন্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তখন এর ফল পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, গবেষণা বা এজাতীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রমাণ পাওয়া গেল এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে; যা ভবিষ্যতে অন্যান্য ক্ষেত্রের গবেষণায়ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ ধরনের জিনোম গবেষণার সাফল্য বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমাদের কৃষক, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা এ থেকে উপকৃত হবেন।
দুটি প্রধান জাতের পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন ও মাঝে পাটের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচনের ফলে বাংলাদেশ এখন উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবনের পথে অনেক এগিয়ে গেল। ছত্রাক ও পোকার আক্রমণ, পাট পচানোর জন্য পানির সমস্যা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লবণাক্ততা পাট চাষের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন একদিকে যেমন কৃষকের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন জাতের পাট উদ্ভাবন সহজ হবে, তেমনি বস্ত্র খাতে পাটের ব্যবহার বাড়ানো বা পাট থেকে উন্নত মানের সুতা উৎপাদন করার সম্ভাবনার বিষয়টিও বেড়ে গেছে। মাকসুদুল আলম প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাটের আঁশকে আরও সূক্ষ্ম ও শক্ত করা যায় কি না, সে ধরনের গবেষণা এখন সহজ হয়ে যাবে।
পাটসংক্রান্ত জিন-নকশা বা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের এই যে গবেষণা হয়েছে এবং সাফল্য পাওয়া গেল, তা হয়েছে একটি প্রকল্পের অধীনে। প্রথম আলো পত্রিকায় মাকসুদুল আলমের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তাঁকে দেশে ডেকে এনে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই সাফল্যের পেছনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এই বিশেষ উদ্যোগের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু এখন সময় এসেছে, এই গবেষণা কার্যক্রমকে প্রকল্পের গণ্ডিতে আটকে না রেখে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করার। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা গেলে বর্তমানে দেশের বাইরে কাজ করছেন এমন অনেক বিজ্ঞানী যেমন দেশে গবেষণার কাজে আগ্রহী হবেন, তেমনি আন্তর্জাতিক মানের বিদেশি গবেষকদেরও এখানে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো (২০/০৮/২০১৩)