মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে মনপুরা
ভোলা জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলা রাক্ষুসী মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনে ক্রমেই ছোট হয়ে যাচ্ছে মনপুরা। ফলে প্রতিদিন ভিটে হারা হচ্ছে শত শত মানুষ। নদী ভাঙ্গনে সহায় সম্বল হারিয়ে ভিটে হারা এসব অসহায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নতুন জেগে উঠা চরসহ বেড়িবাঁধের ঢালে কিংবা রাস্তার পাশে।
গত চার বছরে মেঘনার ভাঙ্গনে ৪টি ইউনিয়নের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটে বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েকশ পরিবার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ১নং মনপুরা ইউনিয়নের মাঝ গ্রাম, কলাতলী, মনপুরা মৌজা ইতিমধ্যে নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আন্দিড় পাড়, সীতাকুন্ড ও ঈশ্বরগঞ্জ গ্রামের অর্ধেক নদীরগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
মনপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দিড় পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দির পাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান অনত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। মাছুয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যে কোন মুহূর্তে নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। ২নং হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনার চর, চরঞ্জান, দাসেরহাট গ্রামের প্রায় অধিকাংশ মেঘনার গর্ভে বিলীন। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হাজিরহাট বাজার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে কয়েকবার স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে বাজার থেকে নদীর দূরত্ব ২/৩শ মিটার। ইতিমধ্যে খাদ্যগুদাম, চরকৃঞ্চপ্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নদী থেকে কয়েকশ মিটার দূরে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বন বিভাগের কার্যালয়, হাজিরহাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনপুরা থানা এবং হাজিরহাট বাজার। এছাড়া মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে দ্রুত স্থানান্তর করা হয়েছে হাজিরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মনপুরা শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের ব্লকের কাজ প্রায় ১ বছর পূর্বে শুরু হলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ব্লক ফেলা কার্যক্রম শুরু হয়নি। অদৃশ্য কারণে ব্লক ফেলার কাজ বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া ৩নং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাস্টারহাট সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মেঘনা তীব্র ভাঙ্গনে ক্রমশই ছোট হয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উত্তর সাকুচিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, উত্তর সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। যে কোন মুহূর্তে নদীরগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রাম অধিকাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনে সাকুচিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ-পূর্ব পাশ থেকে ভেঙ্গে ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ০৮/০৮/২০১৩
http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDhfMDhfMTNfMV8xMl8xXzYyNjY3