বিরল চিত্রা উড়ন্ত টিকটিকি

আ ন ম আমিনুর রহমান

chitra tiktiki
চিত্রা উড়ন্ত টিকটিকি। ছবিটি তুলেছেন সাতছড়ি ইকোপার্কের রেঞ্জার মুনির আহমেদ খান

কমলগঞ্জের স্বল্প পরিচিত আদমপুর বিট বন্য প্রাণী ও পাখির স্বর্গরাজ্য। তাই সম্প্রতি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) প্রাণী অধিকার সংগঠন ‘প্রাধিকার’ আয়োজিত কর্মশালায় ‘প্রাণী অধিকারসংক্রান্ত’ প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য সিকৃবি যাওয়ার পথে আদমপুর ঘুরে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। সাতছড়ি ইকোপার্কের রেঞ্জার মুনির আহমেদ ও তাঁর সহধর্মিণী বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ তানিয়া খানের সঙ্গে ক্ষীণধারার পাহাড়ি সর্পিল ছড়া ধরে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যাচ্ছি। বিরল পাকড়া ধনেশ, ধূসর বুলবুলসহ ছয়-সাত প্রজাতির পাখির দেখা পেলাম। আর পেলাম এক বিরল প্রাণীর দেখা।

এটি এ দেশের একমাত্র টিকটিকি, যারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক গাছ থেকে অন্য গাছে গ্লাইড করে বা উড়ে চলে যেতে পারে। এরা ‘উড়ন্ত টিকটিকি’ বা ‘উড়ুক্কু গিরগিটি’ (Spotted Flying Lizard)। অনেকে ‘চিত্রা উড়ন্ত টিকটিকি’ নামেও ডাকে। বৈজ্ঞানিক নাম Draco ma culat  us । এ দেশে প্রাপ্ত দুই প্রজাতির উড়ন্ত টিকটিকির মধ্যে এরাই সবচেয়ে ছোট। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া ও লাওসে পাওয়া যায়।

এই প্রাণী গড়ে মাত্র ২১ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর মধ্যে লেজ ১৩ সেন্টিমিটার এবং দেহ ৮ সেন্টিমিটার। দেহের দুপাশে ডানার মতো পর্দা বা পাতাজিয়া (Patagia) থাকে। এমনিতে পাতাজিয়া দেখা যায় না, কেবল ওড়ার সময়ই দৃষ্টিগোচর হয়। দেহের ওপরের অংশ ধূসর বা বাদামি এবং তাতে গাঢ় ফোঁটা থাকতে পারে। দেহের নিচের অংশের রং ফ্যাকাশে। পাতাজিয়ার ওপরটা লালচে, হলুদাভ বা সবুজাভ এবং নিচের অংশ হলুদাভ হয়ে থাকে। পাতাজিয়ার ওপর ও নিচের দিকে কালো ফোঁটা থাকে। এদের গলার নিচে একজোড়া চোখা থলে থাকে, যা এরা কোনো কারণে উত্তেজিত হলে ফুলিয়ে থাকে। থলের রং হলদে, তবে গোড়ার দিকে নীল ফোঁটা থাকে। পুরুষ টিকটিকির থলেটি স্ত্রীটির থেকে বড়।

বিরল এই উড়ন্ত টিকটিকিগুলো মূলত চট্টগ্রাম ও সিলেটের মিশ্র চিরসবুজ বনের গহিনে দেখা যায়। এরা বৃক্ষবাসী নীরব প্রাণী। বড় বড় গাছে জোড়ায় চলতে দেখা যায়। দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে। তবে গলার থলে না ফোলালে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কারণ, এরা দেহের রংকে পরিবেশের সঙ্গে মিলিয়ে-মিশিয়ে একাকার করে ফেলে বলে সহজে চোখে পড়ে না। ২০০৭ সালে এ দেশে এদের অস্তিত্ব প্রথম রেকর্ড করা হয়। এরা পিঁপড়াভূক প্রাণী। মার্চ থেকে জুন প্রজননকাল। এদের প্রজননসংক্রান্ত আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

সংবাদটি ০৯/১২/২০১৩ তারিখে ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকায় প্রকাশিত

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics