পাতাঠুঁটি ধনেশ

পাতাঠুঁটি ধনেশ বা মালাপরা ধনেশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Rhyticeros undulatus) (ইংরেজি: Wreathed Hornbill) বিউসেরোটিডি গোত্র বা পরিবারেরঅন্তর্গত রাইটিসেরোস গণের এক প্রজাতির বড় আকারের ধনেশ । এরা  বাংলাদেশের স্থানীয় পাখি । এদেরকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় । এককালে এদের সিলেট অঞ্চলেও দেখা যেত । আই. ইউ. সি. এন. ২০০৪ সালে এ প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এই প্রজাতির অবস্থা সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় তথ্য নেই ।বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এরা একপ্রজাতিক, অর্থাৎ কোন উপপ্রজাতি নেই।

পাতাঠুঁটি ধনেশ বিশাল ঠোঁটবিশিষ্ট বড় আকারের বৃক্ষচর পখি। এরা দৈর্ঘ্যে কমবেশি ৮০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে । ডানার দৈর্ঘ্য ৪৮ সেন্টিমিটার । এদের ঠোঁট ১৯.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ১৪ সেন্টিমিটার ও পা ৬.৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে । পুরুষজাতীয় পাতাঠুঁটি ধনেশের ওজন ১.৮ কেজি  থেকে ৩.৬৫ কেজি হয়ে থাকে । অন্যদিকে, স্ত্রীজাতীয় পাতাঠুঁটি ধনেশের ওজন ১.৩৬ কেজি  থেকে ২.৭ কেজি  হয়ে থাকে।

374px-Rhyticeros_undulatus_-_Jardin_d'oiseaux_tropicaux_-_DSC04925স্ত্রী ও পুরুষ ধনেশের চেহারায় কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় লালচে। মাথার পাশ সাদাটে। ঘাড়ের উপরিভাগ পীতাভ-সাদা । ঠোঁট উজ্জ্বল হলুদ রঙের। ঠোঁটের নিচে উজ্জ্বল হলুদ রঙের থলে থাকে এবং থলেতে আড়াআড়ি কালো ডোরা দেখা যায় । সাদা লেজ ছাড়া দেহের বাকি অংশ চকচকে কালো । চোখ রক্তলাল ও চোখের পাশের চামড়া ইটের মত লাল । ঠোঁটের গোড়া অনুজ্জ্বল গোলাপি ও কালচে-লাল ঢেউ খেলানো । স্ত্রী ধনেশের ঘাড় ও মাথা কালো । ঠোঁটের নিচের থলের রঙ নীল বা সবুজাভ । চোখ বাদামি বা ধূসর-বাদামি । ঠোঁট লালচে-হলুদ । স্ত্রী ও পুরুষ ধনেশ উভয়ের পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ বা কালচে-স্লেট রঙের । অপ্রাপ্তবয়স্ক ধনেশের চোখ ফিকে নীল ও ঠোঁট ঢেউহীন ।

পাতাঠুঁটি ধনেশ চিরসবুজ বনের কিনারায় বিচরণ করে। জোড়ায় বা ছোট দলে দেখা যায়। খাদ্যের জন্য এরা ফলদ গাছের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসালো ফল; কখনও কখনও ছোট সরীসৃপ ও ছোট প্রাণী খেয়ে থাকে।

এপ্রিল থেকে মে এদের প্রজনন ঋতু । পূর্বরাগে পুরুষ পাখি লেজ ওঠানামা করে, ঠোঁট নাড়িয়ে ও কর্কশ গলায় ডেকে স্ত্রী ধনেশের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে । বনের উঁচু গাছের কোটরে এরা বাসা করে । স্ত্রী ধনেশ ২টি সাদা ডিম পাড়ে । ডিমের মাপ ৬.৩ × ৪.২ সেমি । ডিম পাড়া শুরু হলে পুরুষ কাদার প্রবেশ পথ সরু করে ফেলে । অন্যসব ধনেশের মত স্ত্রী ধনেশ কোটরে বন্দী থেকে ডিমে তা দেয় ও পুরুষ ধনেশ বাইরে থেকে ঐ সরু পথে খাবারের জোগান দেয় । ছানা বড় না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী ধনেশ বাসার ভেতরে থাকে । ছানা বড় হলে সে ঠোঁট দিয়ে কাদার প্রলেপ ভেঙে বেরিয়ে আসে ।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics