পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিধি বাড়ছে না

মো. কাওছার আলী, পঞ্চগড়

দেশের অভ্যন্তরে প্রতিদিনই বাড়ছে চায়ের চাহিদা। পক্ষান্তরে কমে যাচ্ছে চা উত্পাদন। চা রফতানিও এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে খুব শিগগির বিদেশ থেকে চা আমদানি করতে হবে। এ অবস্থায় দেশে চা উত্পাদন বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক বেশি বয়সের বা পুরান চা গাছ সরিয়ে উন্নত জাতের চা চারা রোপণ এবং উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় নতুন জমিতে চা আবাদ করে উত্পাদন বৃদ্ধি করা। কিন্তু ইতিমধ্যে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া পঞ্চগড়ে নতুন করে চা আবাদ প্রায় থমকে গেছে। বিভিন্ন কারণে চা আবাদযোগ্য অনেক জমিতে এখনো চা লাগানো যাচ্ছে না। দেশের চা সেক্টরকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে না আনা, ভতুর্কি ও ঋণ বন্ধ এবং সঠিক উদ্ধুদ্ধকরণের অভাবে পঞ্চগড়ে আশানুরূপ চা আবাদের পরিধি বাড়ছে না বলে চা চাষের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। cha

বাংলাদেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পঞ্চগড় প্রতিষ্ঠা পায় ২০০০ সালে। এখানকার চা চাষ অন্য দু’টি অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন। সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারি খাস জমি লীজ নিয়ে চা আবাদ করা হলেও পঞ্চগড়ে সমপূর্ণ ব্যক্তি মালিকানার জমিতে চা চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পঞ্চগড় জেলার ৫ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ, রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় চা আবাদযোগ্য ১৬ হাজার হেক্টর বা ৪০ হাজার একর জমি রয়েছে। চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত জেলায় মাত্র ২ হাজার ৮শ’ ৫৬ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। ২০১১ সালে চা আবাদ করা হয়েছিল ২ হাজার ৫শ’ ১৪ একর জমিতে। ২০১২ সালে মাত্র ২শ’ ৮০ একর জমি বৃদ্ধি পেয়ে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৭শ’ ৯৪ একরে। চলতি বছর এ পর্যন্ত নতুন করে মাত্র ৬২ একর জমিতে চা লাগানো হয়েছে।

পঞ্চগড়ে চা চাষ হচ্ছে ৩ ক্যাটাগরিতে। ৫ একরের নিচে স্মল গ্রোয়ার্স, ৫ থেকে ২০ একরের মধ্যে স্মল হোল্ডার্স এবং এর চেয়ে বেশি জমিতে এস্টেট। এখন পর্যন্ত ৯টি নিবন্ধিত এস্টেট বা বড় বাগান, ১১টি স্মল হোল্ডার্স ও ৩শ’ ৮০টি স্মল গ্রোয়ার্সের চা বাগান রয়েছে। পঞ্চগড়ের বর্তমানে ৬টি চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা রয়েছে। এগুলো হলো—তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি লিঃ বা টিটিসিএল, কাজি এন্ড কাজি টি এস্টেট, করতোয়া টি ফ্যাক্টরি, গ্রীন কেয়ার টি ফ্যাক্টরি, গ্রীন এনার্জি চা ফ্যাক্টরি এবং নর্থ বেঙ্গল সেন্ট্রাল টি ফ্যাক্টরি। সরকারিভাবে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য পরিবহন খরচসহ সাড়ে ২৬ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও চা কারখানা বেশি হওয়ায় অনেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কাঁচা চা পাতা কিনছে। এই চা কারখানাগুলো গত বছর উত্পাদন করেছে ১১ লাখ ৪১ হাজার ৪শ’ ৭৫ কেজি চা। চলতি বছর প্রায় ১৪ লাখ কেজি চা উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চা বোর্ড। জুন মাস পর্যন্ত উত্পাদন করেছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯শ’ ৫০ কেজি চা।

চা চাষের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে চা চাষী মতিয়ার রহমান জানান, চা চাষে জমি প্রস্তুত, চারা ক্রয় ও শ্রমিক খরচসহ শুরুতেই অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে চা বোর্ডের সহায়তায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব ঋণ প্রদান করে আসছিল। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে তারা ঋণ প্রদান বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া চা বোর্ড রোপণ করা চা চারা প্রতি ভর্তুকি প্রদান করে আসলেও গত বছর থেকে তাও বন্ধ করে দেয়। এতে করে নতুন করে কেউ চা আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন না।

চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন জানান, যে হারে পঞ্চগড়ে চা আবাদ হওয়ার কথা সে হারে চা চাষ হচ্ছে না। ঋণ ও ভর্তুকি বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন চা চাষীদের এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। এ ছাড়া গত বছর পর্যন্ত ৯২ জন চাষীকে ভর্তুকি বাবদ ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, কাঁচা চা পাতার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় লাভজনক হিসেবে অনেকেই নতুন করে চা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু জনবল কম থাকার কারণে আমরা সঠিকভাবে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারছি না।

 সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক (১৬/০৮/২০১৩)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics