হাউসে করি এবার আউশের আবাদ
হাউস (শখ) করি এবার আউশের আবাদ করি। ফলন কী হয় হউক, লস তো (লোকসান) হইবে। আবাদ না করি ভুঁই (জমি) ফ্যালে থুইয়া লাভ কী!’ এমন কথা বলেন রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের চাষি একরামুল হক। তাঁর মতো আরো অনেকেই আলু উত্তোলনের পর ফাঁকা জমিতে আউশের আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন।
সেচ সংকট, সার ও চারা বীজের অত্যধিক দামসহ নানা সমস্যায় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা এবার বোরো আবাদে লোকসানের শঙ্কায় আছেন। তাই বলে আবাদি জমি পতিত ফেলে রাখা তো আর যায় না। তাই মৌসুম এলেই তারা বোরো আবাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে সবজির আবাদ পুরোপুরি শেষ করে অনেক জমিতেই বোরো আবাদ শুরুর সুযোগ মেলে না। এ অবস্থায় ক্ষেতের সবজি-ফসল তুলেই তাঁরা হাত বাড়ান আউশ ধান আবাদের দিকে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বোরো ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। মাঠে রোপণকৃত বোরো ক্ষেতগুলো গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। ফাঁকে ফাঁকে দেরিতে লাগানো আলু ও তামাক উত্তোলনের পর চাষিরা আউশের চারা রোপণ করছেন। রংপুর নগরীর উত্তম এলাকার আবুল কাশেম ও আব্দুর রহমান বলেন, ‘হামরা বোরো-আউশ বুজি না। জমি ফাঁকা আছে তাই চারা নাগে থুই। ফলন যা হয় হইবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ মার্চের পর থেকে খরিপ-১ মৌসুমে রোপা আউশ লাগানো শুরু হয়েছে। এ বছর রংপুর অঞ্চলে ২৭ হাজার ১১১ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৭৭৯ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগ জানায়, বোরো রবি মৌসুমের ফসল। গত ১৫ মার্চ ছিল বোরো আবাদের শেষ সময়। এরপর যে চারা রোপণ হচ্ছে তা খরিপ-১ মৌসুমের রোপা আউশ হিসেবে গণ্য হবে। চলতি বছর এই অঞ্চলের আট জেলায় সাত লাখ ৬০ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ১৫ মার্চ পর্যন্ত বোরো চাষ হয়েছে সাত লাখ ৬০ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ছয় লাখ এক হাজার ২২৭ হেক্টর জমিতে উফশী ও দুই হাজার ৪৫৩ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
এদিকে অনেক কষ্টে চারা রোপণ করলেও বিদ্যুৎ সংকট ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে সেচ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন চাষিরা। বিদ্যুতের উন্নতি না হলে এ বছর উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের।
কাউনিয়া উপজেলার শহীদবাগ এলাকার বোরো চাষি সাজু মিয়া বলেন, ‘ফলন বেশি হলেও বোরো চাষে খরচ অনেক বেশি। অথচ ধানের তো দাম নেই!’ গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা ইউনিয়নের কিশামত হাবু গ্রামের বোরো চাষি ওসমান আলী বলেন, ‘ধানের দাম না থাকায় বোরো চাষিদের এমনিতে লোকসান গুনতে হবে। তার ওপর সেচ সংকটে উৎপাদন কম হলে চাষিদের না খেয়ে মরতে হবে।’ নবনী দাস গ্রামের চাষি শমসের আলী বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সেচ বাবদ গতবারের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ হচ্ছে। চারা রোপণ করে বেকায়দায় পড়েছি। এখন সেচ দিতেও পারছি না। শ্যালো মেশিনে প্রতি ঘণ্টা পানির দাম নেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা।
চাষিরা জানান, এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদে এ বছর খরচ হবে কমপক্ষে ১১ হাজার ৩৫০ টাকা। আর প্রতি বিঘা জমিতে গড় ফলন ১৮ মণ ধরা হলেও ৫০০ টাকা মণ দরে এর মূল্য দাঁড়াবে ৯ হাজার টাকা। এতে প্রতি বিঘায় লোকসান দাঁড়াবে দুই হাজার ৩৫০ টাকা।
সূত্রঃ দৈনিক কালেরকণ্ঠ ২৯,০৩,২০১৩