রাজ বটেরা
রাজ বটেরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Coturnix chinensis) (ইংরেজি: King Quail), বা নীলাভ-বুক বটেরা Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Coturnix (কোটার্নিক্স) গণের এক প্রজাতির রঙচঙে কোয়েল। রাজ বটেরার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চিনা বটেরা । সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বান্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। রাজ বটেরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় পাখি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।নীল বটেরার (C. adansonii) সাথে প্রজাতিটি একটি মহাপ্রজাতি গঠন করেছে। পূর্বে এদের Exalfactoria (এক্সালোফ্যাক্টোরিয়া) গণের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করা হত, এখনও কেউ কেউ প্রজাতিটিকে এই গণের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন।
রাজ বটেরার মোট দশটি উপপ্রজাতি সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় C. c. chinensis । বাকি গুলো হলঃ C. c. trinkutensis , C. c. palmeri ,C. c. lineata, C. c. lineatula, C. c. novaeguineae, C. c. papuensis, C. c. lepida, C. c. colletti ও C. c. victoriae ।
রাজ বটেরা স্লেট নীল রঙের ছোট ভূচর পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ১৪ সেন্টিমিটার, ডানা ৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ২.৫ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ৫০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ বটেরার চেহারা ভিন্ন। স্ত্রী বটেরার আকার পুরুষের তুলনায় একটু বড়। পুরুষ বটেরার কপাল স্লেট-নীল। মাথায় সাদাকালো নক্সা থাকে। পিঠের বর্ণ পীত অথবা বাদামি ছিট ছিট দাগ থাকে। দেহে লালচে বাদামি ও কালো ডোরা দেখা যায়। ভ্রু-রেখা ও মাথার দু’পাশ স্লেট নীল। গলা ও গাল সাদা এবং কালো মোটা দাগযুক্ত। বুক ও বগল স্লেট নীল। পেট ও লেজতল ঢাকনি লালচে-তামাটে। স্ত্রী বটেরার কপাল লালচে। ঘাড়ের নিচের অংশ, কাঁধ ঢাকনি ও ডানা ঢাকনিতে ছিটা দাগ থাকে। বুক ও বগলে কালো ডোরা দেখা যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অনুজ্জ্বল রঙের। এদের মাথা ও ঘাড়ের পাশে কালো ডোরা থাকে। তলপেটে তামাটে রঙ নেই। এদের চোখ লালচে, ঠোঁট কালচে-বাদামি ও পা উজ্জ্বল কমলা রঙের। উপপ্রজাতিভেদে এদের চেহারায় ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
রাজ বটেরা ঘাসবনের স্থায়ী বাসিন্দা। এছাড়া আর্দ্র তৃণভূমি, শস্যক্ষেত, রাস্তার পাশে ও ঝোপ-ঝাড়ে এদের প্রায়শই দেখা যায়। এছাড়া আবাদি জমি, জলমগ্ন তৃণভূমি ও চা বাগানে ধীরে সুস্থে খাবার খুঁজে বেড়াতে দেখা যায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাসবীজ, শস্যদানা, বিভিন্ন ফল, পাতা, বাদাম, কেঁচো ও বিভিন্ন পোকামাকড় ও তাদের লার্ভা।
জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। এসময় ঘন লতাপাতা ঘেরা ঘাসঝোপে মাটির গর্তে ঘাস ও পাতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। এক এক বারে ৫-৭টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে-ধূসর বা ফিকে জলপাই-হলদে রঙের হয়। ডিমগুলোর ছোট প্রান্ত সুঁচালো। স্ত্রী বটেরা একাই ডিমে তা দেয়।