মাংসাশী ভেনাস ফ্লাইট্রেপ

গাছগাছালি মূলত মানুষের বন্ধু। মানুষ বিভিন্নভাবে নানা উপকার পায় এর দ্বারা।শ্বাস প্রশ্বাস থেকে শুরু করে খাবার দাবার, ঔষধ, বাসস্থান, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় অনেক কিছুই আমরা পাই গাছ থেকে। কিন্তু সবাই কি এই উপকার পেয়ে থাকে?হয়তো না। পৃথিবীতে এমন সব গাছ আছে যা কিছু কিছু পোকামাকড় ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।এক্ষেত্রে ক্ষতিকর কথাটি সম্পূর্ণভাবে প্রযোজ্য নয়। প্রকৃতির খেয়াল বলা যায় একে। নইলে এমন অদ্ভুত বাস্তুতন্ত্র দেখা পাওয়া ভার। “ভেনাস  ফ্লাইট্রেপ” বা ” Venus Flytrap” যার বৈজ্ঞানিক নাম Dionaea muscipula এটি যে পোকামাকড়ের জন্য প্রাণঘাতী, তা এই আলোচনার মাধ্যমেই জানতে পারবেন।bigmouth

ভেনাস ফ্লাইট্রেপ মূলত একধরনের মাংশাসী উদ্ভিদ। এরা মূলত ৩০ সেন্টিমিটার আকারের হয়ে থাকে। এরা গ্রীষ্মপ্রধান উদ্ভিদ নয়। কিন্তু শীতের পরে বসন্ত কালেই এদের ফুল ফোটে থাকে,এর পরপরেই পাতা গজায়। পাতাগুলো মূলত ভূমির সমান্তরালে কিংবা ৪০-৬০ ডিগ্রি কোণে থাকে। এদের পাতাগুলো তখন ঝিনুকের খোলসের মত ছড়ে যায়।

venas 1
উন্মুক্ত পাতা, যাতে মোট ৬ টা ট্রিগার হেয়ার ও চারদিকে কাঁটা যাকে সিলিয়া বলে

পত্রখন্ডের মাঝে মধ্যশিরা ও থাকে। পত্র খন্ড দুটির দৈর্ঘ্য  ৩-১০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এর ভেতরের তল সাধারণত লাল হয়। খন্ডগুলোর বাইরের চারপাশ অসংখ্য শক্ত, সূচালো শুযঙ্গ থাকে। যাদেরকে সিলিয়া বলে। প্রত্যেকটি খন্ডের ভিতর ৩ টি ট্রিগার হেয়ার থাকে। এগুলোই মূলত ফাঁদ যা পোকার জন্য জীবণঘাতী অস্ত্র।

একদিক থেকে ভাবলে গাছগুলো বেঁচে থাকার জন্য পোকা শিকার করে। কিন্তু এটা ভয়াবহ হয় মূলত পোকা মাকড়ের কাছে।

ভেনাস ফ্লাইট্রেপের পাতার লাল অংশে সামান্য পরিমান মধু থাকে। এগুলো আহরণের জন্য বেশির ভাগ সময়ই মৌমাছিরা আসে। এরা প্রথমে এর আশেপাশের মধু আহরণ করে। পরবর্তীতে এরা সিলিয়া বেয়ে ট্রিগার হেয়ারের কাছাকাছি যায় যেখানে  বেশির ভাগ মধু থাকে। এখানে যাওয়ার পর একটানা দুই বার ট্রিগার হেয়ারে আঘাত করলেই ফাঁদটি স্বয়ংক্রিয় হয় এবং পত্র খন্ড একসাথে মিলে যায়। এবং সিলিয়াগুলো পরস্পর মিলে বের হওয়ার জায়গা বন্ধ করে দেয়। এতে করে মৌমাছি বা পোকারা এতে আবদ্ধ হয়ে যায়।এর মাঝে কখনো ব্যাঙ পর্যন্ত আটকে যায়।

venas 2
চিত্রঃ ফ্লাইট্রেপের ফাঁদে একটি পোকা
venas 3
১০ দিন পর জীর্ণ অবস্থায় একটি পোকা

ফাঁদের দরজা বন্ধ হওয়ার পর এর মাঝে একধরণের তরল পোকাটিকে ডুবিয়ে দেয়। যা একপ্রকার পরিপাক সাহায্যকারী উৎসেচক পদার্থ। এতে করে পোকাটির নরম অংশ গলতে থাকে যা উদ্ভিদটি গ্রহন করে। ৮-১০ দিন পর এর শক্ত অংশ ব্যাতিত সব নাইট্রোজেন গঠিত তরল হয় যা উদ্ভিদটি শোষন করে ও পরবর্তিতে ফাঁদটি খোলে যায় ও পোকার শক্ত অংশ বের হয়ে যায়। এই ফাঁদ মূলত উদ্ভিদটি পুণরায় পেতে রাখে যা ৩-৬ বারের মত পোকা জীর্ণ করতে সক্ষম।

 চাষ পধ্যতিতে এসব গাছের মূলত প্রথমে বিজ বপন করার পাঁচ বছর পর পরিপূর্ণ হয়। এগুলো প্রায় ২০-৩০ বছর বাঁচে। ফাঁদগুলো জন্ম নেওয়ার পর ৪-৫ মাস সুপ্ত থাকে ও পরবর্তিতে বসন্ত কালে এরা উন্মক্ত হয়। তাছাড়া এরা ১৪ ঘন্টা সূর্যের আলো পছন্দ করে। কারণ এদের বাসস্থল এমনিতেই পুরাতন হালকা ভেজা নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস গঠিত ভূমিতে। এদেরকে উত্তর আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিন কারোলিন এলাকায় পাওয়া যায়।

লেখক : সাফায়াত উল্লাহ নিয়াম
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস স্কুল এন্ড কলেজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics