পাখির নাম ঘাড়ব্যথা
বাড়ির আশেপাশে পাখি দেখার ব্যাপারে আমি বরাবরই খুব অলস। এর একটা কারণ হচ্ছে এই যে, কাছাকাছি এলাকায় নতুন কিছু পাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো উৎসাহী লোকের অভাব। আসলে একসাথে কয়েকজন না হলে বার্ডিংটা যেন ঠিক জমতে চায় না। কিন্তু ছোট ভাই Mosharof Hossen এর কাছ থেকে একটা দূরবীন ধার করেছি বলেই কিনা, আজ বিকেলে বের হলাম গোমতীর পাড়ে পাখি দেখতে। সঙ্গে এলাকার দুই ছোট ভাইকে নিয়ে নিলাম। নদীর পাড়েকিছুদিন আগেই একবার ঘুরে এসেছি, তেমন কিছু চোখে পড়েনি।
আজকেও খুব আশাবাদী ছিলাম না কেবল যেসব পাতি বাটান (Common Sandpiper) আর ছোট নথজিরিয়া (Little Ringed Plover) নদীর ধারে চড়ে বেড়ায় আর একটু কাছে গেলেই ফুরুৎ করে উড়ে বেড়ায় সেগুলোকে ভালো করে দেখবো এই ইচ্ছে নিয়েই গিয়েছিলাম। গোমতীর বাঁধ থেকে নেমে একটা গোরস্থান পেরিয়ে নদীর পাড়ে যেতে হয়। জায়গাটায় বেশ ভালোই ঝোপঝাড় আছে। আর সেখানেই পেয়ে গেলাম সেই ভদ্রলোককে (নাকি ভদ্রমহিলা) যার সন্ধানে আমি, Rejaul Hafiz Rahi আর Shabu Anower ভাই হন্যে হয়ে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে বেড়িয়েছিলাম পাখি মেলার দিনে জাবি’র বঙ্গভবন্ধু হলের পাশের খোলা জায়গাটায়। কিন্তু সেদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। আর আজকে যেন মেঘ না চাইতেই জল। গোরস্থানের ভেতরে একটা ভাদি গাছে উনি বসেছিলেন। প্রথমে অবশ্য ভালো করে দেখার আগেই উনি উধাও হলেন। তবে ছোট ভাই কামরুল বেশ তড়িৎকর্মা, দ্রুতই উনাকে আবার খুঁজে বের করল। এবার বেশ সময় নিয়েই উনাকে দেখলাম, তিনি ব্যস্ত ছিলেন তার পালকের সাজসজ্জা নিয়ে। যাক ভদ্রলোকের পরিচয়টা এবার দেওয়া যাক। ইনি হলেন ইউরেশিয় ঘাড়ব্যথা বা মেঠো কাঠঠোকরা (Eurasian Wryneck, Jynx torquilla)। এই বিচিত্র নামের মাজেজা বুঝতে হলে উইকিতে সার্চ দিয়ে দেখা যেতে পারে। পরিযায়ী এই পাখিকে আর যাই হোক নিজের বাড়ির কাছেই আশা করিনি। তাই প্রাণ ভরে দেখে নিলাম। আর বোনাস হিসেবে পেয়ে গেলাম একটা বাংলা নীলকান্ত বা নীলকণ্ঠ (Indian Roller) পাখিকে। আমাদের এলাকায় এর আগে একবারই নীলকণ্ঠ পাখির দেখা পেয়েছিলাম, সেটিও বছর কয়েক আগের কথা। মজার ব্যাপার হলো আগের পাখিটিকেই ঠিক একই জায়গায় পেয়েছিলাম, এই গোরস্থানেই। সেটি প্রায় সপ্তাহখানেক এখানেই ছিল। কে জানে এবারের পাখিটি সেই আগেরটিই কিনা। যাই হোক, আজকের পাখি দেখা তাই বেশ সার্থকই বলা যায়। একজোড়া পাকড়া মাছরাঙ্গা (Pied Kingfisher), একটা ধলাগলা মাছরাঙ্গা (White-throated Kingfisher) এবং বেশ কিছু পাতি বাটান (Common Sandpiper) আর ছোট নথজিরিয়া (Little Ringed Plover) দেখলাম। তবে দুঃখজনক যে ওখানকার এক সময়ের নিয়মিত বাসিন্দা ধানী তুলিকা (Paddyfield Pipit) আর বাংলা ঝাড়ভরত (Rufous-winged Bushlark) এর দেখা পেলাম না। ওদের আবাসস্থল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আর এর ফলে এই চমৎকার পাখিদুটি এই এলাকা থেকে একেবারেই হারিয়ে গেছে। আশা করি, দেশের অন্যত্র পরিস্থিতি এখানের চেয়ে ভালো।
আলী রেজা হায়দার
পেশায় সহকারী কমিশনার (শুল্ক, আবগারি ও ভ্যাট), পাখিপ্রেমী