নিশীথ সূর্যের দেশ
বৈচিত্র্যময় এ মহাবিশ্বে কত অনিয়ম যে নিয়মে পরিণত হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যেমন সূর্য প্রতিদিন সকালে ওঠে আর সন্ধ্যায় অস্ত যায়, আমরা এমনটাই জানি। কিন্তু পৃথিবীতে এমনও একটি দেশ আছে, যেখানে মধ্যরাতেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। আবার অনেক সময় সেখানে দিনের পর দিন সূর্যের মুখই দেখা যায় না। আমাদের কাছে এটা অনিয়ম মনে হলেও সে দেশের মানুষের কাছে এটাই নিয়ম। দেশ-বিদেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকেরই জানা যে নিশীথ সূর্যের দেশ বলতে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়েকেই বোঝায়। এ অঞ্চলে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শেষদিন পর্যন্ত সূর্য কখনও সম্পূর্ণভাবে অস্তমিত হয় না। এর ফলে এ সময় রাতের অন্ধকারের পরিবর্তেন গোধূলির ম্লান আলো বজায় থাকে সারারাত। এ অঞ্চলের উত্তরাংশেও বছরে দু’মাস সূর্য কখনোই সম্পূর্ণ অস্ত যায় না। কিন্তু শীতের দু’মাস আবার সূর্যই ওঠে না। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে এই আশ্চর্য অলৌকিক মহাজাগতিক দৃশ্য দেখার জন্য আসেন। রাতেরবেলা সূর্যের আলো দেখা সত্যিই এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর অক্ষরেখা তার সমতলের ২৩.৫ ডিগ্রি ঝুঁকে যাওয়ার ফলে প্রতিটি গোলার্ধ গ্রীষ্মকালে সূর্যের দিকে হেলে থাকে, আবার শীতকালে সেখান থেকে সরে যায়। ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে বছরের একটি বিশেষ সময় মধ্যরাতেও সূর্য দেখা যায়। কিন্তু যখন কুমেরু অঞ্চলে শীতকাল, তখন দিন ও রাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যায় না। কারণ সূর্য সেখানে ওঠেই না। পুরো কুমেরু অঞ্চল অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। ঠিক সে সময় [এপ্রিল থেকে জুলাই] সুমেরু অঞ্চল পুরো ২৪ ঘণ্টাই সূর্যালোকিত দিন উপভোগ করে। যথানিয়মে সূর্য ওঠে এবং অত্যন্ত ধীরগতিতে পরিভ্রমণ শুরু হয়। সন্ধ্যাবেলায় সূর্য অস্ত যেতে যেতে দিগন্ত রেখা পর্যন্ত পৌঁছায়। কিন্তু তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সম্পূর্ণ অস্ত না গিয়ে পুনরায় উঠতে শুরু করে। সুমেরু অঞ্চলে প্রায় দু’মাস ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে। তবে প্রকৃত মধ্যরাতের সূর্য দেখা যায় ২১ জুনে। ছয় মাস পর সুমেরু অঞ্চল অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং কুমেরু অঞ্চল সূর্যালোকিত হয়। কুমেরু অঞ্চলে মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায় নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষদিন পর্যন্ত। উত্তর অক্ষাংশের প্রান্তিক অঞ্চলকেও কখনও কখনও মধ্যরাতের সূর্যোদয়ের দেশ বলে আখ্যায়িত করা হয়। উত্তর কানাডার বাইলট দ্বীপের কাছেও মধ্যরাতে সূর্য দেখা যায়।
তথ্যঃ ইন্টারনেট